যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বছরে ১ লাখের বেশি শিশু মৃত্যু এবং ৬৩ হাজার মৃত শিশুর জন্ম নিয়ে মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবায় গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

03 এপ্রিল 2025
A mother and child, Bangladesh
UNICEF/UNI664962/Himu

ঢাকা, ৩ এপ্রিল ২০২৫- মা ও নবজাতকের যত্নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, ইউনাইটেড নেশনস ইন্টার-এজেন্সি গ্রুপ ফর চাইল্ড মরটালিটি এস্টিমেশনের (ইউএন আইজিএমই) প্রকাশ করা নতুন দুটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ১৯৯০ সাল থেকে অগ্রগতি অর্জিত হলেও, দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে মৃত সন্তান প্রসবের সর্বোচ্চ হার রেকর্ড করে চলেছে, যা অবিলম্বে ও বর্ধিত হস্তক্ষেপের দাবি করছে।

ইউএন আইজিএমই চাইল্ড মরটালিটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ১ লাখের বেশি শিশু তাদের পঞ্চম জন্মদিনের আগেই মারা গেছে। এসব মৃত্যুর প্রায় দুই তৃতীয়াংশই হয়েছে শিশুর বয়স ২৮ দিন হওয়ার মধ্যেই। মৃত শিশু প্রসবের ওপর তৈরি করা দ্বিতীয় প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে বছরে ৬৩০০০ বেশি মৃত শিশু প্রসবের ঘটনা ঘটে, অর্থাৎ প্রতি ৪১টি শিশু জন্মের ক্ষেত্রে একটি মৃত সন্তান প্রসবের ঘটনা ঘটছে। 

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) সম্পর্কিত লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশকে অবশ্যই প্রতি বছর অতিরিক্ত ২৮০০০ নবজাতককে বাঁচাতে হবে, যা মাতৃ ও নবজাতকের উন্নত যত্নের জরুরি প্রয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করে।

“প্রতিরোধযোগ্য জটিলতা যেমন অপরিণত জন্ম, সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা— সেপসিস ও নিউমোনিয়ার মতো সংক্রমণের মতো জটিলতায় বাংলাদেশে প্রতিবছর এক লাখেরও বেশি নবজাতক মারা যায়, যা তাদের বেঁচে থাকা ও বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন,” বাংলাদেশে ইউনিসেফের ওআইসি রিপ্রেজেন্টেটিভ ফারুক আদ্রিয়ান দুমুন বলেছেন। “আমরা লাখ লাখ শিশু ও মাকে বাঁচাতে পারি যদি আমরা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার দিতে আরও বিনিয়োগ করি এবং সকল পর্যায়ে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের, বিশেষ করে ধাত্রী মায়েদের সংখ্যা বাড়াতে পারি, তাদের সঠিক সরঞ্জাম সরবরাহ করতে পারি যাতে প্রতিটি নবজাতক যেন একটি নিরাপদ হাতে জন্মগ্রহন করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে যৌথভাবে ইউনিসেফ মাতৃ ও শিশুর মৃত্যু রোধে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বাংলাদেশে নবজাতকের মৃত্যু ও মৃত সন্তান প্রসবের উচ্চ হারের পেছনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে যেমন ঘরে শিশুর জন্ম (৩০%), আকারে ছোট ও অসুস্থ নবজাতকের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবার পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকা এবং  দক্ষ সেবাদাতা/ধাত্রীর ঘাটতি। এছাড়া মা ও নবজাতকের অন্যান্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে উপজেলা পর্যায়ে ২৪/৭ মানসম্পন্ন সেবার অভাব, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পর্যায়ে প্রসবের পর অপর্যাপ্ত সেবা এবং অনিয়ন্ত্রিত বেসরকারি খাত, যার ফলে এসফেকশিয়া (জন্মকালীন শ্বাসরুদ্ধতা), অপরিণত বয়স এবং সংক্রমণজনিত প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু ঘটে। এসব কারণে বার্থ অপরিণত শিশুর জন্ম ও সংক্রমণের মতো প্রতিরোধযোগ্য জটিলতাতেও শিশুমৃত্যু ঘটছে।

একই সাথে, মানসম্মত গর্ভকালীন ও সন্তান প্রসবকালীন সেবার ঘাটতি এবং গর্ভধারণকালে অন্যান্য অসুস্থতাজনিত পরিস্থিতিতে যথাযথভাবে প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা করতে না পারার কারণে বাংলাদেশে উচ্চ হারে মৃত শিশুর জন্ম হচ্ছে, যা এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অন্তরায়। তহবিল ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য সম্পদের ঘাটতি এসব সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে এবং তা শিশু মৃত্যু কমিয়ে আনার অগ্রগতিকে ম্লান করে দিচ্ছে।

“মৃত শিশুর জন্ম ও প্রতিরোধযোগ্য শিশু মৃত্যু বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের জন্য একটি হৃদয়বিদারক বাস্তবতা হয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ বিগত দশকগুলোতে মাতৃ স্বাস্থ্য ও শিশু স্বাস্থ্য সেবায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, তারপরেও মানসম্মত ও সময়োচিত সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়ে গেছে। এই প্রবণতা বদলে দেওয়া এবং মর্মান্তিক ক্ষতি বন্ধে আমাদের অবশ্যই এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। গর্ভকালীন ও সন্তান প্রসবকালীন সেবা বিষয়ে ডব্লিউএইচও’র পরামর্শসমূহ, ডব্লিউএইচও’র লেবার কেয়ার গাইড এবং গ্লোবাল স্ট্রাটেজি ফর উইমেন’স, চিলড্রেন’স অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট’স হেলথ-এ সরকার ও অংশীদারদের জন্য এ বিষয়ে স্পষ্ট এবং তথ্য-প্রমাণভিত্তিক করণীয় সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ অর্জনের জন্য আর মাত্র পাঁচ বছর বাকি আছে। তাই মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা উন্নততর করতে আমাদের কার্যক্রম ত্বরাণ্বিত করা প্রয়োজন। ইউনিসেফের সঙ্গে সমন্বিতভাবে ডব্লিউএইচও প্রতিরোধযোগ্য শিশু মৃত্যু ও মৃত শিশুর জন্মের অবসানের লক্ষ্যে অবিলম্বে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে। সরকারের জোরালো অঙ্গীকার, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় টেকসই বিনিয়োগ এবং বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা ও সর্বোত্তম চর্চা অনুসরণের মাধ্যমে আমরা এই বেদনাদায়ক ক্ষতি প্রতিরোধ এবং প্রতিটি শিশুর জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারি,” বলেন বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিনিধি ডা. আহমেদ জামশিদ মোহামেদ।

মা ও শিশু স্বাস্থ্যে বাংলাদেশের অর্জন প্রশংসনীয়; কিন্তু তবুও, দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রায়শই অপর্যাপ্ত যত্নের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মা ও শিশুর প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু কমাতে একটি সমন্বিত ও সমন্বিত ব্যবস্থা প্রয়োজন।

ইউনিসেফ ও ডব্লিউএইচও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে দক্ষ সেবাদাতার উপস্থিতিতে সন্তান প্রসবের ঘটনা বৃদ্ধি, নবজাতকের সেবা ইউনিটগুলোর সম্প্রসারণ, প্রশিক্ষিত নার্সের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং গর্ভকালীন, সন্তান প্রসবকালীন ও প্রসবোত্তর সেবা মান উন্নত করার আহ্বান জানাচ্ছে। একইসঙ্গে মাতৃ স্বাস্থ্য ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা জোরদারে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা কর্মী বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহের আহ্বান জানাচ্ছে।

সম্পাদকদের জন্য নোট

মাল্টিমিডিয়া রিসোর্স ডাউনলোড করুন এখানে

ইউনাইটেড নেশনস ইন্টার-এজেন্সি গ্রুপ ফর চাইল্ড মরটালিটি এস্টিমেশনের (ইউএন আইজিএমই) প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে এবং ইউএন আইজিএমই স্টিলবার্থ রিপোর্ট টি পড়ুন এখানে


তথ্যসূত্র:

ইউএনআইজিএমই চাইল্ড মরটালিটি প্রতিবেদন এখানে

সূত্র: আইজিএমই ২০২০ 

গণমাধ্যম বিষয়ক যোগাযোগ

মিগেল মাতেওস মুনোজ
ইউনিসেফ বাংলাদেশ
টেলিফোন: +8801713043478
ই-মেইল: mmateosmunoz@unicef.org
ফারিয়া সেলিম
ইউনিসেফ বাংলাদেশ
টেলিফোন: +8801817586096
ই-মেইল: fselim@unicef.org

ইউনিসেফ সম্পর্কে

বিশ্বের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাছে পৌঁছাতে বিশ্বের কঠিনতম কিছু স্থানে কাজ করে ইউনিসেফ। ১৯০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে সর্বত্র সব শিশুর জন্য আরও ভালো একটি পৃথিবী গড়ে তুলতে আমরা কাজ করি।

ইউনিসেফ এবং শিশুদের জন্য এর কাজ সম্পর্কিত আরও তথ্যের জন্য ভিজিট করুন: www.unicef.org/bangladesh/

ইউনিসেফকে অনুসরণ করুন Twitter, Facebook, Instagram এবং YouTube-এ।

ডব্লিউএইচও সম্পর্কে

সব মানুষের কল্যাণের জন্য নিবেদিত থেকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কাজের মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বের প্রতিটি জায়গার প্রত্যেক মানুষের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর জীবন লাভে সমান সুযোগ তৈরি করতে বৈশ্বিক প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেয়। আমরা জাতিসংঘের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, যারা স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে। এই সংস্থা বিশ্বের ১৫০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে সরকার, অংশীদার ও জনগণকে সম্পৃক্ত করে কার্যক্রম পরিচালনা করে- জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতিতে সাড়া প্রদান, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার মূল কারণগুলো মোকাবিলা এবং মানুষের স্বাস্থ্য সেবা ও ওষুধ লাভের সুযোগ সম্প্রসারণে বৈশ্বিক কার্যক্রমে নেতৃত্ব প্রদান করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আমাদের লক্ষ্য হল, স্বাস্থ্য সেবাকে এগিয়ে নেওয়া, বিশ্বকে নিরাপদ রাখা এবং অসহায় মানুষের সেবা করা।

ডব্লিউএইচও ও এর কাজ সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য এই ওয়েবসাইট দেখুন: www.who.int