সামাজিক কেন্দ্র ইয়াসিনকে নতুন জীবনের সন্ধান দিয়েছে
কক্সবাজারের ইইউ সোস্যাল হাব একজন রোহিঙ্গা কিশোরের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে

- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
ধূলিকণা বেষ্টিত কক্সবাজারের একটি শরণার্থী ক্যাম্প-এর দিকে যাওয়ার রাস্তার সাথে সামাজিক কেন্দ্রের দৃশ্য অত্যন্ত মনোরম। শীতের একবারে শেষের দিকে অর্থাৎ বাংলাদেশে বছরের শুষ্কতম সময়ে পথের আশেপাশের সব কিছুই লাল ধুলায় আবৃত থাকে।
কেন্দ্রটির কাঠামোর চারদিকে উজ্জ্বল রঙে আঁকা এবং প্রবেশ পথের বাইরে শিশুদের তৈরি হাসিভরা মুখের শিল্পকর্ম শোভা পাচ্ছে।
বাম পাশের একটি কক্ষে রোহিঙ্গা কিশোরদের চাইনিজ ফিসফিসার খেলা খেলতে দেখা যাচ্ছে। কেন্দ্রটির বাইরে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে কিশোররা ক্যারাম বোর্ড খেলছে। কোন্ কার্যক্রম তারা পছন্দ করে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তাদের অনেকেই বিভিন্ন খেলা, ছবি আঁকা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত অধিবেশনগুলোতে শেখা পাঠ সম্পর্কে কথা বলছে। তবে অধিকাংশ কিশোররা খেলা সম্পর্কে কথা বলছে।
সেই হলওয়েতে একা দাঁড়িয়ে থাকা ১৫ বছর বয়সী ইয়াসিন গম্ভীর চেহারার একজন যুবক বলে মনে হচ্ছে।
তার বয়সী অন্যান্য ছেলেদের চেয়ে তাকে বয়স্ক এবং লম্বা দেখায়।
ইয়াসিন প্রায় নয় মাস ধরে সামাজিক কেন্দ্রে ঘন ঘন আসা যাওয়া করছে। সে জ্ঞান অর্জন করতে চায়।
ছেলেরা ‘ইভটিজিং’, ‘শিশু-সুরক্ষা’ এবং ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ প্রভৃতি প্রত্যয় ব্যবহার করে সামাজিক সমস্যা মোকাবিলার গুরুত্বের কথা বলেছে।
গর্ব করে সে জানায়, “সামাজিক কেন্দ্রে আসার পর থেকে যখন আশ্রয়শিবিরের লোকজনের মনে কোন প্রশ্ন আসে বা সমস্যা সমাধানের জন্য সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তখন তারা আমার কাছে আসে। কারন তারা আমাকে তথ্যের ভাল উৎস বলে মনে করে।”


এসব কারণেই ইয়াসিন শিখতে আগ্রহী বলে জানায়। কারন, সে যত বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারবে, নিজের জীবনে ততটাই ভাল করতে পারবে।
বড় হয়ে ইয়াসিন ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখে। সে জানায়, “বাংলাদেশে আসার পর থেকেই আমি এ বিষয়টা নিয়ে ভাবছি। কারন, আমি আমার কমিউনিটিকে সাহায্য করতে চাই।”
সর্বোপরি, ১৫ বছর বয়সেই ইয়াসিন অনেক বেশি বড় বলে মনে হয়। সামাজিক কেন্দ্রটিতে আসার আগ পর্যন্ত সে ফুটবল বা ক্যারাম বোর্ডের কথা শোনেনি বলে স্বীকার করেছে।
এই কেন্দ্রের জন্য হয়তো এটি ছিল বাড়তি সুবিধা। সামাজিন কেন্দ্রের এই সুযোগ-সুবিধা একজন ছেলেকে সত্যিকারের একজন ছেলে হিসাবে গড়ে তোলে।
তিন বছর আগে নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার পর ইয়াসিন এবং তার মতো আরও অনেককেই দ্রুত বড় হতে হয়েছিল।
তাদের চারদিকে এতো বিপর্যয় সত্ত্বেও এই কেন্দ্রটি তাদের হারিয়ে যাওয়া শৈশবের অনেক কিছুই ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করেছে।
ছেলেটি যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সামাজিক কেন্দ্রের সামনের সেই দেয়ালটি বিভিন্ন ধরণের সুন্দর অঙ্কন দ্বারা আবৃত।
ছেলেটি অঙ্কনগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিল। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে অত্যন্ত লাজুকভাবে সে উত্তর দিল যে, সামাজিক কেন্দ্রে এটি তার প্রিয় জায়গা।
গর্বিত কন্ঠে এবং প্রশস্ত হাসি মাখা মুখে সে জানায়, “সব শিল্পকর্মই আমার বেশ পছন্দ। এসব শিল্পকর্মগুলোর কিছু কিছু আমার নিজের তৈরি।”
এই আত্মতৃপ্তির হাসির মধ্যেই ১৫ বছর বয়সী ইয়াসিন ফিরে পাওয়া যায়।
ঘোষণা: গোপনীয়তা রক্ষায় কিছু ব্যক্তির নাম এবং পরিচয় পরিবর্তন করা হয়েছে।
স্থিতিশীলতা এবং শান্তিতে সহায়তাকারী ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইন্সট্রুমেন্টের (আইসিএসপি) সহযোগিতায় ইউনিসেফের এই কর্মসূচির লক্ষ্য হলো কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতীদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বাড়ানো, এবং রোহিঙ্গা ও স্বাগতিক বাংলাদেশী জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক সংহতি শক্তিশালী করা ও নিজেদের মধ্যে ব্যবধানকে কমিয়ে আনা। প্রকল্পের ডিজিটাল ব্রোশিওর (digital brochure) এবং পোস্টার (poster) এখানে ডাউনলোড করতে পারেন।
এই প্রকাশনাটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় করা হয়েছিল। এই প্রকাশনাটির বিষয়বস্তুর সম্পূর্ণ দাবীদার ইউনিসেফ এবং এখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতামত প্রতিফলিত হয় না।