নতুন নতুন খেলা শিখছি
বাংলাদেশী কিশোররা তাদের শরণার্থী বন্ধুদের কাছ থেকে একটি সনাতন রোহিঙ্গা খেলা শিখচ্ছে

- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
সামাজিক কেন্দ্রে দিনটি ছিল বেশ রৌদ্রোজ্জ্বল। পরিষ্কার নীল আকাশের সুযোগ নিয়ে স্থানীয় কমিউনিটির ছেলেরা সামাজিক কেন্দ্রের সামনের ফাঁকা জায়গায় অবস্থিত ভলিবল নেটের উপর দিয়ে একবার সামনে আবার একবার পেছনে ভলিবল ছুড়ছিল।
অল্প কিছু সময়ের মধ্যে পরিস্কার সাদা শার্ট পরিহিত ক্লাশের অবশিষ্ট ছেলেরা কম্পিউটার ক্লাশ শেষ করে খেলায় যোগ দিল।
দেশের অন্যান্য অংশের মতো বাংলাদেশের এই অংশেও ভলিবল অপেক্ষাকৃত কম জনপ্রিয় খেলা।
ছেলেরা একটি তরমুজের আকারের ভলিবল উপরে নিক্ষেপ করছিল এবং স্বাভাবিকভাবেই লম্বা ছেলেরা খেলায় আধিপত্য বিস্তার করছিল। এরকম ছেলেদের একজন হলো ১৭ বছর বয়সী শরিফ। সে মাত্র ২০ দিন আগে এই কেন্দ্রে যোগ দিয়েছে।
হাসিমাখা মুখে কেন্দ্রের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে সে জানায়, “এই স্থানটি সত্যিই আমার খুব ভাল লাগে।” সে আরও জানায়, “আমি এখানে খেলতে পারি এবং কম্পিউটার নাড়াচাড়া করতে পারি…।”
সে আরও জানায়, “…এছাড়াও আমি এখানে বই পড়তে পারি। আমি জীবন-দক্ষতা সম্পর্কিত অধিবেশনে অংশ নিতে পছন্দ করি। আমরা এখানে একসাথে অনেক মজার মজার খেলা খেলি।”
ক্যারাম, ভলিবল এবং ব্যাডমিন্টনসহ কেন্দ্রটিতে রয়েছে এমন অন্যান্য সব খেলার বিষয়ে সে কথা বলছিল।
সে জানায়, “এমনকি এখানে দাবা খেলার একটি বোর্ডও আছে। আমি যদিও দাবা খেলতে চাই কিন্তু আমার সাথে খেলার মতো এখানে কেউ নেই।”
পরিতাপের সাথে সে আরও জানায়, “আমি অন্যদের এই খেলাটি শেখাতে পারি। কিন্তু অন্য কেউ খেলাটি শিখতে চায় না।” সে বলছিল, “দাবা আমার সবচেয়ে প্রিয় খেলা।


এখন সে কোন খেলাটি খেলছে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে শরিফ জানায়, “এই খেলাটির সঠিক নাম সম্পর্কে আমরা জানি না। তবে, এই গ্রামে সবাই খেলাটিকে সেলুম বলে। এটি একটি রোহিঙ্গা খেলা। আমরা তাদের খেলা দেখেই এটি বাছাই করেছি। বলটি ফাঁপা হলেও বেশ শক্ত। বলটিতে পায়ে ব্যাথা লাগে!”
সে আরও জানায়, “তবে, রোহিঙ্গাদের এটি খেলতে দেখলে আপনি হতবাক হয়ে যাবেন।”
১৬ বছর বয়সী মোহাম্মদ নামে শরিফের এক বন্ধু যে আগে সাইফুলের সাথে খেলতো সে জানায়, “যদিও খেলাটির নিয়ম-কানুন আমরা ভালভাবে জানি না। তবে, কীভাবে এতো ভালভাবে তারা খেলাটি খেলে সেটা সত্যিই বিম্ময়ের ব্যাপার। মোদ্দা কথা হলো খেলাটিতে তারা ভীষণ মনোযোগী।”
ছেলেদের দুজনেই হাসতে হাসতে জানায়, “আমরা খেলাটি খেলতে ভালবাসি, কিন্তু খেলাটির নিয়ম-কানুন জানি না। খেলাটি সম্পর্কে কোন কিছু না জেনেই আমরা এটি খেলি।”
শরণার্থী এবং স্থানীয় কমিউনিটির মধ্যে বিদ্যমান সমস্যাগুলো দুর করতে একটু সময় লাগতে পারে বলে ওসমান মনে করে।
তবে খুব বেশি সময় নাও লাগতে পারে উল্লেখ করে শরিফ বলে, অনেক সংখ্যক রোহিঙ্গা ছেলে সামাজিক কেন্দ্রটিতে এসে সেলুম খেলে এবং এতে করে রোহিঙ্গা কমিউনিটির ছেলেদের সাথে স্থানীয় কমিউনিটির ছেলেদের যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হয়।
শরিফ জানায়, “আমরা অবাধে তাদের সাথে কথা বলি।” সে আরও জানায়, “তবে, খেলাটি কীভাবে খেলতে হয় তা দেখানোর জন্য আমরা কখনই তাদেরকে জিজ্ঞাসা করিনি। পরবর্তীতে আমরা তাদেরকে খেলাটি আমাদের শেখাতে অনুরোধ করবো।”
শরিফ আরও বলেছিল, “আমরা তাদের ভাষা বুঝতে পারি এবং তারাও আমাদের ভাষা বুঝতে পারে। আমাদের উভয়ের ভাষার মধ্যে অনেক মিল রয়েছে।”
এছাড়াও শরিফ উল্লেখ করে, “তারা আমাদের প্রতিবেশী হওয়ায় আমরা তাদের বন্ধু হতে চাই। তাদেরকে আমাদের অতিথি মনে করে সামাজিক কেন্দ্রে আমরা তাদের সাথে খুব ভাল ব্যবহার করি।”
ওমর নামে এক রোহিঙ্গা ছেলের নাম শরিফ উচ্চারণ করল। কারন, সে খুব ভালভাবে স্থানীয় কমিউনিটির সাথে মিশতে পারে।
আমি যাই খেলি না কেন, সেও আমার সাথে একই খেলা খেলে। সে যদি খেলাটি খেলতে নাও পারে, সেক্ষেত্রে খেলাটি কীভাবে খেলতে হয় তা আমি তাকে দেখিয়ে দিই।
মুখ বাঁকা করে হাসি দিয়ে শরিফ জানায়, “হয়তো আমি তাকে দাবা কীভাবে খেলতে হয় তাও শিখিয়ে দিব।”
ঘোষণা: গোপনীয়তা রক্ষায় কিছু ব্যক্তির নাম এবং পরিচয় পরিবর্তন করা হয়েছে।
স্থিতিশীলতা এবং শান্তিতে সহায়তাকারী ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইন্সট্রুমেন্টের (আইসিএসপি) সহযোগিতায় ইউনিসেফের এই কর্মসূচির লক্ষ্য হলো কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতীদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বাড়ানো, এবং রোহিঙ্গা ও স্বাগতিক বাংলাদেশী জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক সংহতি শক্তিশালী করা ও নিজেদের মধ্যে ব্যবধানকে কমিয়ে আনা। প্রকল্পের ডিজিটাল ব্রোশিওর (digital brochure) এবং পোস্টার (poster) এখানে ডাউনলোড করতে পারেন।
এই প্রকাশনাটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় করা হয়েছিল। এই প্রকাশনাটির বিষয়বস্তুর সম্পূর্ণ দাবীদার ইউনিসেফ এবং এখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতামত প্রতিফলিত হয় না।