বাংলাদেশ সরকার ইউনিসেফের সহযোগিতায় শিশুদের ওপর সহিংসতা ও বাল্যবিবাহ মোকাবিলায় চলমান প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করছে

ঢাকা, ১১ মার্চ ২০২৪: বাংলাদেশে ইউনিসেফের কারিগরি সহায়তা নিয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আজ “শিশুদের ওপর সহিংসতা (ভিএসি) ও বাল্যবিবাহ (সিএম) প্রতিরোধে জাতীয় মাল্টিমিডিয়া ক্যাম্পেইন” উদ্বোধন করেছে।   

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইউনিসেফের নেতৃত্বাধীন ‘এক্সিলারেটিং প্রোটেকশন ফর চিলড্রেন (এপিসি)’ প্রকল্পের আওতায় চলমান শিশু সুরক্ষা আরও জোরদার করতে এই ক্যাম্পেইনটি চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে শিশুদের ওপর সহিংসতা ও বাল্যবিবাহ যে উদ্বেগজনক হারে ঘটে চলেছে, তা রোধ করতে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও আচরণগত পরিবর্তনের জন্য জাতীয় ও তৃণমূল পর্যায়ে শিশু সুরক্ষার একটি কার্যকরী সিস্টেম তৈরী করা হবে।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন (রিমি) বলেন, “বাংলাদেশে শিশুদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় আমাদের চলমান কার্যক্রমে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে থাকল আজকের এই ক্যাম্পেইন উদ্বোধন।” তিনি আরও বলেন, “শিশুদের ওপর সহিংসতা ও বাল্যবিবাহ শুধু তাদের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করছে না, তাদের শারীরিক, আবেগীয় ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এসব ক্ষতিকর চর্চা দূর করে প্রতিটি শিশুর জন্য একটি নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে ইউনিসেফ ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে হাতে হাত রেখে কাজ করার বিষয়ে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” 

ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ফরেন, কমনওয়েলথ ও ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) এর অর্থ সহায়তায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিশু অধিকার সমুন্নত রাখতে প্রণীত জাতীয় শিশু নীতি এবং বাংলাদেশে ২০৪১ সাল নাগাদ বাল্যবিবাহ নির্মূলের লক্ষ্যে গৃহীত জাতীয় কর্মপরিকল্পনার (এনএপি) আলোকে এটা সাজানো হয়েছে।

ইউনিসেফ বাংলাদেশের রিপ্রেজেন্টেটিভ এমা ব্রিগহাম বলেন, “শিশু সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে সক্ষম কমিউনিটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের অবিচল অবস্থানের প্রতিফলন এই ক্যাম্পেইন। এর আওতায় কৌশলগত যোগাযোগ ও কমিউনিটি মোবিলাইজেশন এর মধ্য দিয়ে আমরা এমন একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই যেখানে প্রতিটি শিশু সহিংসতা ও বঞ্চনা থেকে মুক্ত থাকবে। যে কোনো শিশুর প্রয়োজনে দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে বিনামুল্যে চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ এ ফোন করে কাউন্সেলিং (পরামর্শ) এর পাশাপাশি নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, আশ্রয়, শিক্ষা ও আইনি সহায়তা বিষয়ক রেফারেল পরিষেবা গ্রহন কারার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। ”

বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স ডঃ বার্নড স্পেনিয়ার এই উদ্যোগের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, “শিশুদের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টার সঙ্গে আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাল্যবিবাহ ও শিশুদের ওপর সহিংসতা মোকাবিলায় এই জরুরি ক্যাম্পেইন চালু করার জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকার ও ইউনিসেফকে সাধুবাদ জানাই।”

দ্যা মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (এমআইসিএস) ২০১৯ এ দেখা গেছে, ১ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের প্রায় প্রতি ১০ জনের মধ্যে নয়জন তাদের বাড়িতে শারীরিক সহিংসতা ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

উপরন্তু, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহের দিক দিয়ে প্রথম ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। হিসেবে বাংলাদেশে ১৮ বছরের আগেই অর্ধেকেরও বেশি মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার হয়; তাদের মাঝে প্রতি চারজনে একজন ১৮ বছর বয়সের আগে মা হয়ে যায়; আর প্রতি ১০ জনের মধ্যে আটজনই ২০ বছর বয়সের আগে সন্তান জন্ম দেয়।

প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এই ক্যাম্পেইনের আওতায় বাল্যবিবাহ ও শিশুদের ওপর সহিংসতা রোধে সচেতনতামূলক বার্তা (PSA) ছড়িয়ে দেবার মাধ্যমে আচরণগত পরিবর্তন ত্বরান্বিত করতে এবং এ বিষয়ে একটি মজবুত সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সমন্বিতভাবে কাজ করা হবে। দুর্গম এলাকা এবং যেসকল জেলাগুলোতে শিশুদের ওপর সহিংসতা ও বাল্যবিবাহের হার বেশি সেসকল জায়গায় কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। শিশুদের প্রতি বাবা-মায়ের ইতিবাচক আচরণের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্ষতিকর সামাজিক রীতি-নীতিগুলো দূর করতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।