পানি, পয়ঃনিষ্কাশন এবং স্বাস্থ্যবিধি
পরিষ্কার পানি, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন এবং ভাল স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলনের মাধ্যমে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা

- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের শহর ও গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী অধিকাংশ জনগোষ্ঠির মৌলিক পানীয় জলের প্রাপ্যতা থাকলেও এসব পানীয় জলে ব্যাকটেরিয়াজনিত দূষণ থাকে। যথাযথ পয়ঃনিষ্কাশনের অভাব, পানীয় জলের ১০ শতাংশেরও বেশি উৎসে আর্সেনিকের অবাঞ্ছিত রাসায়নিক দূষণ এবং জলবায়ু সমস্যার ফলে সমুদ্রের জলের অনুপ্রবেশ পানি দূষণের অন্যতম কারণ।
প্রতিদিন দীর্ঘ পথ হেঁটে গিয়ে পানীয় জল সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ ৩০ মিনিট থেকে এক ঘন্টা এবং ছয় শতাংশ মানুষকে এক ঘন্টা থেকে তিন ঘন্টা ব্যয় করতে হয়। পানীয় জল সংগ্রহের সিংহভাগ বোঝা নারী ও মেয়েদের উপরই পড়ে। এসব পানীয় জলের ৮৫ শতাংশ নারীরা এবং ৪.৭ শতাংশ মেয়েরা সংগ্রহ করে থাকে। এর অর্থ হলো নারীরা পরিবারের সাথে ও পরিবারের জন্য মানসম্পন্ন সময় কাটাতে পারেনা এবং মেয়েরা লেখাপড়া ও শেখার জন্য মানসম্পন্ন প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারেনা।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগের অভ্যাসটি যথেষ্ট পরিমাণে কমিয়ে আনতে সফল হয়েছে। তবে, নারী এবং মেয়েদের জন্য নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা নিশ্চিত করে পরিষেবাগুলোকে মৌলিক ও নিরাপদে পরিচালিত পয়ঃনিষ্কাশনের পথে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এখনও অনেক কাজ বাকী রয়েছে৷
অনিয়ন্ত্রিত পয়ঃনিষ্কাশন কোনো প্রকার শোধন ছাড়াই অপসারণ করার ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এটি দেশের মিঠা পানির সম্পদের প্রাপ্যতাকে ভয়ঙ্করভাবে বিপন্ন করে তুলছে এবং রোগের বিস্তার ঘটাচ্ছে।
পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও হাইজিন বা স্বাস্থ্যবিধির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ইউনিসেফ মূলত নায্যতা এবং যেসব এলাকায় পরিষেবাগুলো অপেক্ষাকৃত কম উন্নত, বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠির বাস এমন এলাকা, শহুরে বস্তি, প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকা, জলবায়ুজনিত ঝুঁকিতে থাকা এলাকা ও রাসায়নিক দূষণে ভুগছে এমন জায়গা ও জনগোষ্ঠীর উপর অগ্রাধিকার দেয়।
সকল শিশু ও নারীর জন্য মানসম্মত, ন্যায়ভিত্তিক, স্থিতিস্থাপক এবং টেকসই ওয়াশ পরিষেবার প্রাপ্যতা ও ব্যবহারসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও পরিষেবাসমূহের অনুশীলন নিশ্চিত করতে ইউনিসেফ কাজ করছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় মন্ত্রনালয় দ্বারা পরিচালিত অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ওয়াশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ইউনিসেফ সরকারকে সহায়তা করছে।
মানব ও আর্থিক সম্পদ বৃদ্ধি, লক্ষ্যমাত্রা উন্নত করা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাড়া দেওয়া এবং লিঙ্গ প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে প্রমাণ-ভিত্তিক নীতি প্রচার এবং সমর্থন যোগাতে কাজ করে ইউনিসেফ। দূর্যোগ এবং জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক সুবিধাগুলোর পাইলটিং করা ও এগুলোর যথাযথ বিস্তারের মাধ্যমে ওয়াশ পরিষেবাগুলোর স্থায়িত্ব জোরদার করাও ইউনিসেফের অন্যতম উদ্দেশ্য।
চলমান ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং বাজার-ভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে মানসম্পন্ন, টেকসই ও নিরাপদ পানীয় জল এবং উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হবে। আর্সেনিক ও জলবায়ু নিরাপদ গ্রাম ও ইউনিয়নের সফল মডেল এবং গ্রামীণ পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা সম্পর্কিত ব্যবস্থাপনার সফল মডেলকে আরও বিস্তৃত করা হবে। পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা, বিকল্প টয়লেট, এবং মাসিক স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও এসব পরিষেবার প্রাপ্যতা বাড়াতে ২০১৯ সালের পয়ঃনিষ্কাশন সম্পর্কিত বাজার মূল্যায়নের ফলাফল এবং পরিষেবা ব্যবহারে মুল্য পরিশোধের প্রবণতা সংক্রান্ত পর্যালোচনাকে ভিত্তি হিসাবে ব্যবহার করা হবে।
সমাধান
ইউনিসেফ বাংলাদেশ সরকারের সাথে নিম্নলিখিত লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে:
- প্রদত্ত পরিষেবার গুণমান এবং নিরাপত্তার উপর গুরুত্ব দেবার মাধ্যমে "এমডিজি ওয়াশ মডেল" থেকে "এসডিজি ওয়াশ মডেল"-এ উত্তরণ;
- জলবায়ু স্থিতিস্থাপক ওয়াশ পরিষেবাগুলোকে প্রচার করার জন্য ওয়াশ ব্যবস্থা এবং পরিষেবাগুলোর সমাধানের নকশায় জলবায়ু ঝুঁকিগুলোকে পদ্ধতিগতভাবে সম্পৃক্ত করা;
- টেকসই এবং মানসম্পন্ন ওয়াশ পরিষেবাগুলোকে উৎসাহিত করার জন্য বাজার-ভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে জাতীয় বেসরকারী খাতের ক্ষমতা ও দক্ষতার মধ্যে সমন্বয় স্থাপন করা;
- পরিকল্পনা করতে এবং জ্ঞাত সিদ্ধান্ত গ্রহণকে অপ্টিমাইজ এবং উৎসাহিত করতে সহায়তা করার জন্য প্রমাণ দাঁড় করানো;
- বিস্তারযোগ্য মডেল প্রচারের লক্ষ্যে উন্নত মান নিশ্চিত করার জন্য উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর জোর দেবার মাধ্যমে ন্যায়ভিত্তিক পরিকল্পনা এবং টেকসই সমাধানগুলোকে একীভূত করে এমন সুপরীক্ষিত এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা তৈরি করা।