শিশু সুরক্ষা
সহিংসতা, শোষণ, নির্যাতন ও অবহেলা থেকে শিশুদের নিরাপদ রাখা

- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
চ্যালেঞ্জ
যাদের দ্বারা শিশুরা সুরক্ষিত ও নিরাপদ থাকার কথা, তাদের হাতেই বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ শিশু প্রতিনিয়ত সহিংসতা, ভৎসনা এবং শোষণের শিকার হয়। প্রতি ১০ জনের মধ্যে নয়জন শিশুই তাদের বাবা-মা এবং শিক্ষক সহ সেবাদানকারীদের দ্বারা শারীরিক শাস্তি বা মানসিক আগ্রাসনের শিকার হয়।
বাংলাদেশে অনেক শিশুই সময়ের আগেই বড় হয়ে যেতে বাধ্য হয়। নিজেদের পরিবারের বেঁচে থাকার কৌশলের অংশ হিসেবে অনেক কিশোর-কিশোরীকে প্রায়ই কাজে পাঠানো হয় বা তাদের অপরিণত বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়। পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় সাত শতাংশ শিশু কোনো না কোনো ধরনের শিশুশ্রমে জড়িত। এছাড়াও খুব অল্পবয়সী শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত করা অব্যাহত রয়েছে।
বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আইন থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। বাইশ থেকে ২৪ বছর বয়সী বাংলাদেশি নারীর অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যকের (৫১ শতাংশ) তাদের ১৮তম জন্মদিনের আগেই বিয়ে হয়ে যায়।
বাল্যবিবাহ এবং অল্প বয়সে গর্ভাধারণ মেয়েদের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য গুরুতর সমস্যা এবং এটি তাদের স্বাস্থের ক্ষেত্রে আজীবন নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেসব মেয়েদের বাল্যকালে বিয়ে হয়, তাদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। তারা অপুষ্টিতে ভোগে, গর্ভাবস্থায় ও প্রসবকালীন জটিলতার কারণে অনেকেই অকালে মারা যায় এবং পরিণত বয়সে বিয়ে করা মেয়েদের তুলনায় বাড়িতেও তাদের বেশি সহিংসতার সম্মুখিন হতে হয়।
লাখ লাখ শিশুর মাথার ওপর ছাদ নেই।তারা রাস্তায় বসবাস করে ও শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। শিশুদের আরেকটি অংশ প্রতিবন্ধীত্বের শিকার। এসব শিশুরা অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত এবং বৈষম্য, সামাজিক কলঙ্ক ও বিচ্ছিন্নতার সম্মুখীন হয়।
শিশু অধিকারের সংগ্রাম জন্মলগ্ন থেকেই শুরু হয়। বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে মাত্র ৫৬ শতাংশ জন্মের সময় নিবন্ধিত হয়। এর অর্থ লক্ষ লক্ষ শিশু একটি পরিচয়ের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ন্যায়বিচার পাওয়া তাদের আরেকটি চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশে ১০২টি শিশু আদালত থাকা সত্ত্বেও কিশোর-কিশোরীদের জন্য যে বিচার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে ২৩ হাজারেরও বেশি মামলার এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।
সমাধান
শিশুদের প্রতি সহিংসতা, দুর্ব্যবহার, অবহেলা ও শোষণ রোধে এবং এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সাড়া প্রদান করতে একটি সমন্বিত জাতীয় শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ করছে ইউনিসেফ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদন্ড অনুযায়ী আইনের সংস্কার এবং নীতিমালা হালনাগাদ করার পাশাপাশি অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো প্রচার করতে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ ও তথ্যভাণ্ডার তৈরির মাধ্যমে এটি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার এবং অংশীদারদের সহযোগিতায়, ইউনিসেফ তিনটি বিষয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলোকপাত করছে:
শিশু-বান্ধব বিচার ব্যবস্থা: আইনের সাথে সংঘর্ষে থাকা শিশুদের জন্য ইউনিসেফ একটি শিশু-বান্ধব বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে, অপরাধ থেকে বেঁচে যাওয়া শিশু কিংবা অপরাধের প্রত্যক্ষদশী© শিশু এবং অপরাধমূলক দায়িত্বের ন্যূনতম বয়সের উপরে কিংবা নিচে অবস্থানরত শিশুদের জন্য উপযুক্ত বৈচারিক ব্যাবস্থা নিশ্চিত করা।
সমাজসেবা ব্যবস্থা: ইউনিসেফ সমাজসেবার সাথে সংশ্লিষ্টদের সক্ষমতা ও দক্ষতা জোরদার করতে কাজ করছে যাতে তারা যথাযথভাবে ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ, প্রতিরোধ এবং ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে সাড়া প্রদান করার ক্ষেত্রে আরও বলিষ্ঠ ভুমিকা পালন করতে পারে।
শিশুদের প্রতি সহিংসতা: সহিংসতা এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক সামাজিক প্রথা প্রতিরোধকল্পে ইউনিসেফ শিশু ও নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সম্পর্কে জ্ঞান ও বোধগম্যতা বৃদ্ধিতে কাজ করে। এর মধ্যে রয়েছে, বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে জীবন দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদেরকে পরিবর্তনের দূত হিসাবে গড়ে তোলা এবং ক্ষমতায়িত করা।