পুষ্টি

আজীবন সুস্বাস্থ্যের জন্য একটি ভিত্তি তৈরি করা

Bangladeshi children
UNICEF Bangladesh/2016/Sujan

চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের লাখ লাখ শিশু, কিশোরী ও মা অপুষ্টির শিকার।

অপর্যাপ্ত সেবা ও বারবার সংক্রমণের প্রভাব এবং সেইসাথে শাকসবজি, ফলমূল এবং প্রোটিন যেমন ডিম, মাছ, মাংস এবং ডাল থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি না পাওয়ার কারণে অপুষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এটি বৃদ্ধি এবং বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করার মাধ্যমে মানুষকে প্রতিবন্ধীত্বের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এই অবস্থাটি "খর্বকায়" নামে পরিচিত। অপুষ্টির কারনে অনেকে বেশিমাত্রায় পাতলা হয়ে যেতে পারে, যা "কৃশকায়" নামে পরিচিত। অপুষ্টির অন্য পিঠে রয়েছে, অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা। শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের জীবনকে এটি ক্রমবর্ধমান হারে ব্যাহত করছে।

বাংলাদেশে, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ২৮ শতাংশ খর্বকায় এবং ১০ শতাংশ কৃশকায়তায় ভোগে। যেসব শিশু অপুষ্টিতে ভোগে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং তাদের অন্যান্য রোগের সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি। তারা প্রায়শই একাগ্রতার সমস্যায় ভোগে এবং কোনো কিছুতে বেশি মনোযোগ দিতে পারে না। একারনে তাদের শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কিছু শিশুর অন্যদের তুলনায় অপুষ্টির ঝুঁকি বেশি থাকে। শহরের বস্তিতে, চা বাগানে বা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে, দরিদ্র পরিবারে এবং অশিক্ষিত মায়েদের ঘরে যেসব শিশু জন্মগ্রহণ করে, তাদের খর্বকায় এবং কৃশকায় হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়সের আগেই ৫১ শতাংশ নারী ও মেয়ের বিয়ে হয় । বাল্যবিবাহের উচ্চমাত্রার ফলে পরিণত বয়সের আগে গর্ভধারণের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। অকালে গর্ভাধারণের ফলে প্রায়ই কম ওজনের শিশুর জন্মদানের আশঙ্কা থাকে। এই হার বাংলাদেশে এখনও ১৫ শতাংশের বেশি।

জন্মের প্রথম ঘন্টার মধ্যে নবজাতককে মায়ের দুধ খাওয়ানোর সুপারিশ করা হয়। তবে বাংলাদেশে জন্মের প্রথম ঘন্টার মধ্যে নবজাতকদের মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার মাত্র ৪৭ শতাংশ। ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে মাত্র ৬৩ শতাংশ শুধুমাত্র মায়ের দুধ পান করে। এছাড়া ছয় মাসের বেশি বয়সী শিশুদের মধ্যে মাত্র ২৮ শতাংশ পযা©প্ত সুষম খাদ্য পায়। পরিবারগুলো হয় অতি দারিদ্র অথবা অজ্ঞতার কারণে জানেনা কীভাবে তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্যকর খাদ্য দিতে হয়। কম ওজন নিয়ে জন্মানো শিশু এবং নবজাতক ও ছোট শিশুদের সুষম খাদ্য অভ্যাসের অপর্যাপ্ততার সংমিশ্রণে শিশুদের খর্বকায় এবং কৃশকায় হয়ে বেড়ে ওঠার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

অনুপুষ্টির ঘাটতি এখনও ছোট শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে বিবেচিত হয়। মা এবং তাদের শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির জন্য মায়ের রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারপরও বাংলাদেশে গর্ভবতী কিশোরীদের মধ্যে দুই শতাংশেরও কম স্বাস্থ্যকর গর্ভধারণ নিশ্চিত করতে আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট গ্রহণ করে।

উন্নত পুষ্টি অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম ভিত্তি। খর্বকায় রোগ দেশের ভবিষ্যত এবং অর্থনীতির কাঠামো সুদৃঢ় করতে প্রয়োজনীয় 'ধূসর পদার্থের অবকাঠামো' কিংবা মস্তিষ্কের বিকাশকে ব্যাহত করে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা হলে তা সারাজীবন মানব উন্নয়নে সহায়তা করে, মানসিক ও উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ায়, এবং প্রতি এক ডলার বিনিয়োগের বিপরীতে ১৬ ডলারের সমান রিটার্ন পাওয়া যায়। জাতীয় প্রবৃদ্ধি বাড়ার সাথে পুষ্টি সংযুক্ত: মাথাপিছু আয় প্রতি ১০ শতাংশ বৃদ্ধির হলে কৃশকায়তার প্রবণতা আনুমানিক ৩.২ শতাংশ হ্রাস পায়। এছাড়াও, মাথাপিছু আয়ের ১০ শতাংশ বৃদ্ধি হলে খর্বকায় হওয়ার প্রবণতা ৭.৪ শতাংশ কমে যায়।

সমাধান

গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মা, নবজাতক, ছোট শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের উন্নত পরিচর্যার জন্য পুষ্টি পরিষেবার গুণগতমান এবং বিস্তার বাড়াতে বিকাশ পর্যবেক্ষণ, পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং এবং অনুপুষ্টিকণার সম্পূরককে শক্তিশালী করতে ইউনিসেফ বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করছে।

এর মধ্যে রয়েছে নির্ভরযোগ্য প্রমাণের ভিত্তিতে নীতির উন্নয়ন ও বাস্তবায়নকে সমর্থন করা; প্রাসঙ্গিক খাত এবং অংশীজনদের মধ্যে পরিকল্পনা ও সমন্বয় করা; সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করতে সাহায্য করা; প্রচার ও পর্যবেক্ষণে সহযোগিতা প্রদান করা; এবং পুষ্টিতে বিনিয়োগের মাত্রা নিরীক্ষণের জন্য সুশৃঙ্খল ও ধারাবাহিকভাবে আর্থিক বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা।

সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ নবজাতক, শিশু, নারী এবং কিশোর-কিশোরীদের জলবায়ু-জনিত দুর্যোগ ও জরুরী পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় ও মানসম্পন্ন পুষ্টি পরিষেবা পাবার সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইউনিসেফ কমিউনিটি প্রচারকে শক্তিশালী করতে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করছে। জনসচেতনতা বাড়াতে এবং অপুষ্টি প্রতিরোধে কাজ করে এমন সব পরিষেবার প্রাপ্যতা বাড়াতে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের সাহায্যে কমিউনিটির সাথে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি করা হচ্ছে।

এছাড়াও, দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে কৃশকায়তা কমাতে বিষয়টি প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করতে এবং চিকিৎসার সুযোগ বাড়াতে ইউনিসেফ তার অংশীদারদের সাথে কাজ করছে। এই লক্ষ্যে, দেশের দুর্গম অঞ্চলসমূহ যেমন, পার্বত্য চট্টগ্রাম, চা বাগান, হাওর বা বন্যাবিধৌত অঞ্চল, শহুরে বস্তি এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।

আরও জানার জন্য

তাওহিদা ও তানিয়া: মধুর এক বন্ধুত্ব

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকটের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হার, তীব্রতা ও ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে, তাই লেখাপড়ার কোন ব্যাঘাত না ঘটে এমন একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে

লেখাটি পড়ুন

স্থিতিশীল ভবিষ্যতের জন্য দক্ষতা ও উদ্যোক্তা হবার শিক্ষা

ইউনিসেফ-এর সহযোগিতায় পরিচালিত দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ শেষে কক্সবাজারের স্থানীয় এক মেলায় হাস্যোজ্জ্বল কিশোরীরা

লেখাটি পড়ুন

তাপপ্রবাহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে মা শিল্পীর মুখে আজ হাসি

ইউনিসেফের সহায়তা নিয়ে কমিউনিটিভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবকেরা তীব্র তাপমাত্রার মধ্যেও অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের সুস্থ থাকার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেন।

লেখাটি পড়ুন

রোহিঙ্গা শিবিরে মেয়েদেরশিক্ষা নিশ্চিতে স্বেচ্ছাসেবকদের অবদান

কিশোরীদের পড়াশোনা থেকে দূরে রাখার ক্ষেত্রে বাধা অপসারণে সাহায্য করছেন নারী রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকেরা

লেখাটি পড়ুন