শিল্পের নিরাময় শক্তি
বাংলাদেশি শিশু ও তরুণরা উন্নত মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য তাদের পথচলা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেয়

- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
আর্ট, পেইন্টিং, ফটোগ্রাফি ও কবিতার মত শৈল্পিক ক্রিয়াকলাপ মানসিক স্বাস্থ্য ও সামগ্রিক সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ সৃজনশীল উপায়গুলো কেবল অব্যক্ত অনুভূতি প্রকাশে সাহায্য করে না, এগুলো স্বাস্থ্যকর উপায়ে দৈনন্দিন দুশ্চিন্তা থেকে মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমায় এবং একইসঙ্গে আত্ম-সচেতনতা, আত্ম-সম্মান এবং সন্তুষ্টির অনুভূতি বাড়ায়।
এর আলোকে ইউনিসেফ বাংলাদেশ তরুণরা কীভাবে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয় সে সম্পর্কে তাদের সাথে একটি কথোপকথন শুরু করে। তরুণরা যে বিষয়গুলো তাদের প্রভাবিত করে তা নিয়ে ইলাস্ট্রেশন, আলোকচিত্র, আঁকা ছবি ও কবিতা শেয়ার করে। এর মাধ্যমে তাদের আবেগ প্রকাশের একটি সুযোগ তৈরি হয় এবং সৃজনশীলতাও প্রকাশ পায়
এখানে #OnMyMind হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে শেয়ার করা অনুপ্রেরণামূলক শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে বাছাই করা কয়েকটি শিল্পকর্ম তুলে ধরা হলো।
"ফসলের আশা" – জাইমা রহমান, ১৫

“যদিও এখন শীতকাল এবং নৌকাগুলো এখনও শুকনো ঘাসের ওপর পড়ে আছে, তবে এখন সবুজ ধান রয়েছে। ধানের আশায় হাসিমুখে অপেক্ষায় কৃষকরা। শীত বসন্তে পরিণত হবে, আর্দ্রতা কমে আসবে এবং নৌকাগুলো আবার ধান নিয়ে শহরের দিকে যাত্রা করবে। আমাদের জীবনে যাই ঘটুক না কেন, আমরা যতই শূন্যতা অনুভব করি না কেন– সবসময় আশা থাকে। সবকিছুর পরও আমরা পরের দিনের জন্য ঘড়িতে অ্যালার্ম দেই– এটাই আশা। প্রতিটি কোণে আশা আছে; আমাদের শুধু এটা জানতে হবে। সময় সবকিছু ঠিক করে দেবে এবং আমরা জীবনের প্রকৃত অর্থ জানতে পারবো– আশাবাদী হতে, ভালোবাসতে ও বিলিয়ে দিতে,” চাষাবাদের এই সুন্দর রূপকটির সঙ্গে আশার ধারণা সম্পর্কে ১৫ বছর বয়সী জাইমার ভাবনা।
“কল্পনার প্রবেশদ্বার” – নুসরাত বিনতি, ২২

"ছবি আঁকার মাধ্যমে আমি কেবল আমার কল্পনার মধ্যেই বিশ্বকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারি," বলেন ২২ বছর বয়সী নুসরাত, যিনি ছবি আঁকাকে তার মন পরিষ্কার করার এবং নিজেকে আরও আত্মবিশ্বাসী করার একটি সুন্দর উপায় হিসেবে দেখেন।
“দেবদূতগুলোকে রক্ষা করা” – নুসরাত মিম, ২৪

“প্রত্যেক অভিভাবকের উচিত শিশুদের সঙ্গে সংঘটিত সহিংসতা সম্পর্কে পরিবারের তরুণ সদস্যদের অবহিত ও সতর্ক করা, এমনকি যদি আমরা অবিলম্বে সব অপরাধীকে চিহ্নিত করতে নাও পারি,” আশেপাশে থাকা যে বিপদগুলো তাকে রাতে জাগিয়ে রাখে সে বিষয়ে শক্তিশালী ও হৃদয় বিদারক এই বার্তার মাধ্যমে নিজের কথাগুলো বলেন ২৪ বছর বয়সী নুসরাত।
“তুলি নিয়ে লড়াই করা” – তাসফিয়া ইসমাত অ্যাথে, ১৬

“আপনি যদি দুশ্চিন্তার সঙ্গে লড়তে থাকেন, তাহলে একটি তুলি নিন এবং আপনার মন যা চায় তা আঁকুন। এটি হতাশা, মানসিক চাপ বা উদ্বেগের বিরুদ্ধে ওষুধের মতো কাজ করে,” পরামর্শ ১৬ বছর বয়সী তাসফিয়ার, যে তার শিল্পকর্মে জীবনের বিশৃঙ্খলা থেকে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায়।
“সামনে কি আছে” – নেহলা বিনতে হাসান, ১৬

বিশ্বে ঘটে চলা অনেক কষ্টদায়ক বিষয় সম্পর্কে কখনও কখনও আমরা অতি চিন্তিত এবং বিস্মৃত হয়ে পড়ি। লাখ লাখ ক্ষুধার্তের তুলনায় কীভাবে অগণিত উদ্বেগ সহ্য করে তা প্রতিফলিত করতে ১৬ বছর বয়সী নেহলা এই কবিতা লিখেছে।
“আপনার প্লাস্টিক সামলান” – মিনহাজুল ইসলাম মাহিব, ১৮

"আপনার প্লাস্টিক বর্জ্য অনেক দূরে একটি সমুদ্র সৈকতকে ধ্বংস করে দিতে পারে," বলেন ১৮ বছর বয়সী মিনহাজুল, যিনি তাকে পীড়া দেওয়া বিষয়গুলোর ছবি তুলে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে সেগুলো ব্যাপকভাবে শেয়ার করে পদক্ষেপ নিতে ফটোগ্রাফির শক্তিশালী মাধ্যমকে ব্যবহার করেন।
“সে কেবল তা ভাবনায় আটকে আছে” – উর্মিলা সেতু, ২১

“আমি ছোটবেলা থেকেই শিল্পের প্রতি অনুরাগী। এটি আমাকে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। আমি কোভিড-১৯ লকডাউনের সময় এটি আরও বেশি করে করতে শুরু করি। স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে ছিলাম বিধায় সেই সময়ে আমি সহজেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়তাম। সুতরাং, শিল্প আমাকে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ ভুলে যেতে সাহায্য করেছে, জীবন নিয়ে আমার স্বপ্ন ও দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত করেছে এবং আমাকে আরও আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তিতে পরিণত করেছে,” বলেন ২১ বছর বয়সী উর্মিলা, যিনি এই উদ্ভাবনী ডিজিটাল শিল্পকর্মে মহামারি সম্পর্কে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।
“প্রকাশ”– তাহজিবা তৌহিদ গুঞ্জন, ৭

"শিল্পের মাধ্যমে, আমি আমার অনুভূতিগুলো শেয়ার করি। কোন বিষয়টি আমাকে বিরক্ত করছে তা বিশ্বকে বলতে এটি আমাকে সাহায্য করে, আর সবচেয়ে বড় কথা– আমি সবার মাঝে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে পারি এবং প্রফুল্ল থাকতে পারি," সাত বছর বয়সী তাহজিবা এই কার্টুনে তার জীবনে বুলি বা উৎপীড়ন ও অমর্যাদার বিরুদ্ধে তার ভেতরকার লড়াইয়ের বিষয়টি তুলে ধরেছে।
“পুনরুজ্জীবন”– নুজহাত তাবাসসুম সিন, ১৬

"যখন আমার মন পুরো খালি থাকে, তখন আমি কিছু আঁকার বা রং করার চেষ্টা করি। এভাবে পড়তে বসার আগে আমি সতেজ বোধ করি," উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফেরার পর তাদের জন্য অপেক্ষারত হোমওয়ার্কের কঠিন চাপের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার উপায় খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে ১৬ বছর বয়সী নুজহাতের ভাবনা।
“উদ্বেগ, একাকীত্ব ও বিষণ্ণতায় ক্লান্ত” – আসিফ রহমান, ১৮

"উদ্বেগ, বিষণ্ণতা ও একাকীত্ব এখন শিশু, কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একটি বড় সমস্যা," বলেন ১৮ বছর বয়সী আসিফ, যিনি ফটোগ্রাফি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন তার আশেপাশের মানুষ সম্পর্কে আরও জানার জন্য, যারা মানসিক স্বাস্থ্যগত নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।
“বেশি করে গাছ লাগান” – সুতপা প্রভা বনিক, ১৩

“আমি ছবি আঁকার মাধ্যমে আমার মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিই। আমি আমার ছবিতে পরিবেশ নিয়ে আমার উদ্বেগ প্রতিফলিত করার চেষ্টা করি। একটি সুস্থ জীবনের জন্য আমাদের সবার আরও বেশি করে গাছ লাগানো উচিত,” কীভাবে নিজের শিল্পকর্মের মাঝে পরিবেশগত সচেতনতা লালন করে সে বিষয়ে ১৩ বছর বয়সী সুতপার ভাবনা।
“মননশীল চোখ” – ফাবিহা জান্নাত, ১৬

“শিল্প আমার কল্পনাকে বাস্তবে পরিণত করতে সাহায্য করে,” বলেন ১৬ বছর বয়সী ফাবিহা জান্নাত, যার জীবনের চাপ মোকাবিলা করার রহস্য হলো নিজের আঁকা ছবি দিয়ে যে রূপকগুলো সে তৈরি করে তার মাধ্যমে তার মনকে সতেজ রাখা।
“দৃষ্টিভঙ্গি”– তমাল দাস, ২০

“আমি প্রায় পাঁচ বছর আগে ছবি তোলা শুরু করি। এখন এটি আমার দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হয়ে গেছে। একটি সৃজনশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা আমাকে হতাশা ও উদ্বেগ সামাল দিতে সহায়তা করে,” বলেন ২০ বছর বয়সী তমাল দাস, যিনি একটি ফটো ফ্রেমে নিজের চিন্তাভাবনার উপস্থাপনা হিসেবে জীবন ও আলোকে তাদের সমস্ত আকার ও গঠনে ধারণ করার চেষ্টা করেন।
“সাতচক্র” – নীলাদ্রি শেখর রায়, ২২

"শিল্প হলো মনকে শিথিল করার এবং সব ধরনের ঝামেলা, যা উচ্চ মানসিক চাপের দিকে ঠেলে দেয়, তা থেকে আবেগগতভাবে মুক্ত থাকার একটি উপায়। সৃজনশীল মনকে উদ্দীপিত করার পাশাপাশি, যারা ছবি আঁকেন, যারা লেখালেখি করেন এবং যারা গান করেন, তাদের এই শিল্পচর্চা মানসিক উদ্বেগ কমাতে সহায়ক হয়,” শিল্প কীভাবে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে, সে বিষয়ে ২২ বছর বয়সী নীলাদ্রী শেখর রায়ের ভাবনা।