পানিতে ডুবে মৃত্যু থেকে রক্ষা পেলো আয়েশা ফারিন
বাংলাদেশে প্রতি বছর হাজার হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়, যা বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ

- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
২০২২ সালের ৬ জুলাই ১৭ মাস বয়সী শিশু আয়েশা ফারিন বরগুনা জেলায় তার দাদা-দাদির বাড়ির একটি পুকুরের কাছে খেলছিল। তার মা শারমিন শিশুদের প্রতি খেয়াল রাখছিলেন। কিন্তু এক আত্মীয়ের সাথে কথা বলতে যেই শারমিন এক মুহূর্তের জন্য অন্য দিকে তাকায়, ঠিক তখনই ফারিন পুকুরে পড়ে যায়। তার মাথা পানির নিচে চলে গিয়েছিল এবং শুধুমাত্র তার পা দেখা যাচ্ছিল। ফারিন ডুবে যাচ্ছিল। এটা দেখে শারমিন আতঙ্কিত হয়ে সাথে সাথে পুকুরে ঝাঁপ দেন এবং ফারিনকে পানি থেকে টেনে তোলেন। বুকে কয়েকবার চাপ দেওয়ার পর ফারিন কাঁদতে শুরু করে এবং সে আবার জীবন ফিরে পায়।
“আমি আমার মেয়েকে প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমি ফারিনকে এক মিনিটের জন্য দৃষ্টির আড়াল করেছিলাম এবং সে প্রায় ডুবে গিয়েছিল। ভাগ্যক্রমে, আমি সঠিক মুহূর্তে লক্ষ্য করেছি এবং তাকে বাঁচাতে পেরেছি”, বলেন শারমিন।
গত এক দশকে বিশ্বব্যাপী পানিতে ডুবে ২৫ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রতি বছর বাংলাদেশে পানিতে ডুবে ১৪ হাজারের বেশি শিশু মারা যায়, যা ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার বেশির ভাগ ঘটনা ঘটে আশেপাশের জলাশয়গুলোতে, যার কারণে গ্রামেই এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে।

ডুবে যাওয়া অনিবার্য নয়, এটি প্রতিরোধযোগ্য
পাঁচ বছরের কম বয়সী মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ হওয়া সত্ত্বেও পানিতে ডুবে মারা যাওয়া প্রতিরোধযোগ্য। শিশুদের সাঁতার শেখানো, জলাশয় ঘিরে বেড়া দেওয়া ও প্রাক-স্কুল শিশুদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্রের মতো নিরাপদ স্থান তৈরি করা এবং পরিবার, কমিউনিটি ও জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো হাজার হাজার জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত।
শিশুদের সাঁতারে দক্ষ হওয়া প্রয়োজন, অভিভাবকদের প্রয়োজন সচেতনতা
“আমাদের অবশ্যই আমাদের শিশুদের সাঁতার শেখাতে হবে। যদি তারা সাঁতার জানে তবে তারা এই ধরনের প্রতিরোধযোগ্য দুর্ঘটনা থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারে,” বলেন শারমিন, যিনি নিজে সাঁতার জানার কারণে তার মেয়ে ফারিনকে বাঁচাতে পেরেছিলেন।

বিশ্বজুড়ে পানিতে ডুবে যাওয়াকে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে এবং পানিতে ডুবে প্রতিটি মৃত্যুই যে প্রতিরোধযোগ্য তা জোরালোভাবে তুলে ধরতে ২০২১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২৫ জুলাইকে ‘বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে।
পানিতে ডুবে মারা যাওয়া প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে এবং শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সাঁতারে দক্ষ করে তুলতে ইউনিসেফ সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে। এর পাশাপাশি ইউনিসেফ বাংলাদেশে শিশুদের আঘাত পাওয়া ঠেকাতে ““প্রিভেনশন অফ চাইল্ড ইনজুরি থ্রু সোশ্যাল-ইন্টারভেনশন এন্ড এডুকেশন (পিআরইসিআইএসই)” শীর্ষক একটি গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।”
শিশু সুরক্ষা কর্মসূচিতে অবদানের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে ইউনিসেফ বাংলাদেশ। এই কর্মসূচির লক্ষ্য হলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের তাদের অধিকার সম্পর্কিত দাবি আদায়েরজন্য ক্ষমতায়িত করা।