কোভিড-১৯ টিকা সম্পর্কে যা জানা দরকার
করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা সম্পর্কে সচরাচর যেসব প্রশ্ন করা হয় সেগুলোর উত্তর।

- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
টিকা প্রতি বছর লাখ লাখ জীবন বাঁচায়। নিরাপদ ও কার্যকর কোভিড-১৯ টিকা উদ্ভাবন আমাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি; আমাদের প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গে আমরা যে জিনিসগুলো উপভোগ করি সেগুলো আবারও করতে সহায়তা করার জন্য এই টিকার অবদান অনেক।
কোভিড-১৯ টিকা সম্পর্কে সচরাচর যে প্রশ্নগুলো করা হয় সে ধরনের কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে আমরা সর্বশেষ বিশেষজ্ঞ মতামত ও তথ্য সংগ্রহ করেছি। নিবন্ধটি কিছুদিন পরপর পুনরায় দেখুন, কারণ আরও তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা এটি আপডেট করব।
টিকা নেওয়ার সুবিধা কী?
টিকা প্রতি বছর লাখ লাখ জীবন বাঁচায় এবং একটি কোভিড-১৯ টিকা আপনারও জীবন বাঁচাতে পারে। কোভিড-১৯ টিকাগুলো নিরাপদ ও কার্যকর, গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যুর বিরুদ্ধে শক্তিশালী সুরক্ষা প্রদান করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, টিকা দেওয়া হয়েছে– এমন ব্যক্তিদের তুলনায় টিকা দেওয়া হয়নি– এমন ব্যক্তিদের কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি অন্তত ১০ গুণ বেশি।
আপনার পালা আসার সঙ্গে সঙ্গে টিকা নিয়ে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি ইতোমধ্যে যদি আপনি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েও থাকেন। কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে এর বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে আপনার জন্য নিরাপদ উপায় হচ্ছে টিকা নেওয়া।
কোভিড-১৯ টিকা অত্যন্ত কার্যকর, তবে কোনো টিকাই শতভাগ সুরক্ষা প্রদান করে না। টিকা নেওয়ার পরও অনেকে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হতে পারে বা অন্য কারও ভাইরাস সংক্রমণের মাধ্যম হতে পারে।
তাই, নিজেকে এবং অন্যদের সুরক্ষার জন্য ভিড় এড়ানো, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া ও মাস্ক পরাসহ নিরাপত্তামূলক পূর্বসতর্কতা মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ।
কাকে প্রথমে টিকা দিতে হবে?
টিকা প্রদানের জন্য প্রতিটি দেশকে অবশ্যই অগ্রাধিকারমূলক জনগোষ্ঠী শনাক্ত করতে হবে। ডব্লিউএইচওর সুপারিশ অনুযায়ী যারা সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মী (স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সুরক্ষিত করার জন্য) এবং যারা কোভিড-১৯-এর কারণে মৃত্যুর বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে, যেমন বয়স্ক ও নির্দিষ্ট কিছু শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত মানুষ, তাদেরকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে টিকা প্রদানের জন্য শনাক্ত করতে হবে। অন্যান্য অপরিহার্য কর্মী, যেমন শিক্ষক ও সমাজকর্মীদের এরপর অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত এবং তারপরে আরও কোভিড-১৯ টিকা পাওয়ার সাথে সাথে অন্যান্য শ্রেণির জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
স্বাস্থ্যবান শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলেও গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি কম থাকে। তাই তারা গুরুতর কোভিড-১৯-এর উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা কোনো জনগোষ্ঠীর অংশ না হলে, অগ্রাধিকারমূলক জনগোষ্ঠীর তুলনায় তাদের টিকা দেওয়া কম জরুরি।
তবে যেসব শিশু ও কিশোর-কিশোরীর কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে মারাত্মক অসুস্থ হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে আছে, যেমন- যাদের অন্তর্নিহিত অসুস্থতা রয়েছে, তাদের কোভিড-১৯ টিকার জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
কখন আপনাকে কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা দেওয়া উচিত নয়?
কোভিড-১৯ টিকা নেওয়া উচিত কিনা সে সম্পর্কে আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সঙ্গে কথা বলুন। বর্তমানে নিম্নলিখিত শারীরিক অবস্থার লোকজনের কোনও সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব এড়াতে কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণ করা উচিত নয়:
- আপনার যদি কোভিড-১৯ টিকার কোনো উপাদানে গুরুতর অ্যালার্জিজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার নজির থাকে এবং
- আপনি যদি অসুস্থ হয়ে থাকেন বা আপনার মধ্যে কোভিড-১৯ এর লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় (তবে, আপনি সুস্থ হয়ে গেলে এবং আপনার চিকিৎসক অনুমোদন করার পর আপনি টিকা নিতে পারেন)।
আমি যদি ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে থাকি তাহলে কি আমার টিকা নেওয়া উচিত?
হ্যাঁ, আপনি আগে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে থাকলেও টিকা নেওয়া উচিত। যদিও কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠতে পারে, তবে সেই প্রতিরোধ ক্ষমতা কতদিন বজায় থাকে অথবা আপনাকে কোভিড-১৯-এ পুনরায় আক্রান্ত হওয়া থেকে কতটা ভালোভাবে সুরক্ষা দিতে পারে তা এখনও নিশ্চিত নয়। টিকা আরও নির্ভরযোগ্য সুরক্ষা প্রদান করে, বিশেষ করে গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যু ঠেকাতে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের পরে টিকা নেওয়ার নীতিমালা একেক দেশে একেক রকম হতে পারে। আপনি যে এলাকায় বাস করেন সেখানে কোন নিয়ম উপযোগী সে সম্পর্কে জানতে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
কোভিড-১৯-এর কোন টিকা আমার জন্য সবচেয়ে ভালো?
ডব্লিউএইচও অনুমোদিত সব টিকাই কোভিড-১৯ থেকে গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যু থেকে সুরক্ষা প্রদানে অত্যন্ত কার্যকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আপনার জন্য সর্বোত্তম টিকা সেটিই যেটি আপনার জন্য সবচেয়ে সহজলভ্য।
ডব্লিউএইচওর ওয়েবসাইটে অনুমোদিত টিকার একটি তালিকা রয়েছে।
মনে রাখবেন, যদি আপনার টিকা দুই ডোজের হয়ে থাকে, তাহলে সর্বোচ্চ সুরক্ষা পেতে উভয় ডোজ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
কোভিড-১৯ টিকা কীভাবে কাজ করে?
রোগের ছড়ায় এমন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য অনুজীবের মতো সংক্রামক এজেন্টকে অনুকরণের মাধ্যমে টিকা কাজ করে। এটি সংক্রামক এজেন্টের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকরভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে 'শিক্ষিত করে'।
ঐতিহ্যগতভাবে, টিকা একটি সংক্রামক এজেন্টের দুর্বল রূপ প্রবর্তন করার মাধ্যমে এই কাজ করে, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এই সংক্রামক এজেন্টের একটি স্মৃতি তৈরি করার সুযোগ দেয়। এভাবে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দ্রুত সংক্রামক এজেন্টটি চিনতে পারে এবং আমাদের অসুস্থ করে ফেলার আগেই এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। এভাবেই কিছু কোভিড-১৯ টিকা বানানো হয়েছে।
অন্যান্য কোভিড-১৯ টিকা তৈরি করা হয়েছে নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে, যেগুলোকে বলা হয় মেসেঞ্জার আরএনএ বা এমআরএনএ টিকা। অ্যান্টিজেন (একটি পদার্থ যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে অ্যান্টিবডি তৈরিতে সহায়তা করে) প্রবর্তন করার পরিবর্তে এমআরএনএ টিকাগুলো আমাদের শরীরকে প্রয়োজনীয় জেনেটিক কোড দেয় যার মাধ্যমে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজে থেকেই অ্যান্টিজেন তৈরি করতে পারে। এমআরএনএ টিকা প্রযুক্তি নিয়ে কয়েক দশক ধরে গবেষণা করা হয়েছে। এগুলোতে কোনো জীবন্ত ভাইরাস থাকে না এবং মানুষের ডিএনএ-তে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করে না।
টিকা কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য অনুগ্রহ করে ভিজিট করুন ডব্লিউএইচও।
কোভিড-১৯ টিকা কি নিরাপদ?
হ্যাঁ, কোটি কোটি মানুষকে সুরক্ষিত করার জন্য কোভিড-১৯ টিকা নিরাপদে ব্যবহার করা হয়েছে। কোভিড-১৯ টিকাগুলো দ্রুততার সঙ্গে তৈরি করা হলেও টিকাগুলো যাতে আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত মানদণ্ড অনুযায়ী নিরাপদ ও কার্যকর হয় তা নিশ্চিত করার জন্য ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এগুলোকে কঠোর পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। কেবল এই মানদণ্ড নিশ্চিত হলেই একটি টিকা ডব্লিউএইচও এবং জাতীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে বৈধতা পেতে পারে।
ইউনিসেফ শুধু ডব্লিউএইচও'র নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার মানদণ্ড পূরণ করা এবং নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় অনুমোদন পাওয়া কোভিড-১৯ টিকা সংগ্রহ ও সরবরাহ করে।
কোভিড-১৯ টিকা এত দ্রুত কীভাবে তৈরি হল?
বিজ্ঞানীরা তুলনামূলক স্বল্প সময়ের মধ্যে নিরাপদ কার্যকর টিকা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন বেশ কিছু বিষয়ের সমন্বয়ের কারণে, যা তাদের নিরাপত্তার সঙ্গে আপোস না করে গবেষণা ও উৎপাদন জোরদার করার সুযোগ করে দেয়:
• বৈশ্বিক মহামারির কারণে গবেষণার জন্য বড় আকারের নমুনা পাওয়া গিয়েছিল এবং হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক এগিয়ে এসেছিল
• প্রযুক্তিতে অগ্রগতি (যেমন, এমআরএনএ টিকা), যা অনেক বছর ধরে তৈরি হচ্ছিল
• গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য অর্থায়নের বাধা দূর করতে সরকার এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো একত্রিত হয়েছিল
• উৎপাদনের গতি বাড়ানোর জন্য ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পাশাপাশি টিকা তৈরির কাজও চলছিল।
যদিও টিকাগুলো দ্রুত তৈরি করা হয়, তবে ব্যবহারের জন্য ডব্লিউএইচও অনুমোদিত সব কোভিড-১৯ টিকাই নিরাপদ ও কার্যকর।
কোভিড-১৯ টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো কী?
রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিপদ ছাড়াই আপনার শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করে দেওয়ার জন্যই টিকাগুলো তৈরি করা হয়েছে। সবার ক্ষেত্রে না হলেও কিছু ক্ষেত্রে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়া খুবই স্বাভাবিক, যেগুলো কয়েক দিনের মধ্যেই নিজে থেকে চলে যায়।
টিকা নেওয়ার পর হালকা থেকে মাঝারি ধরনের যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে তার মধ্যে রয়েছে:
• টিকা দেওয়ার স্থানে বাহুতে ব্যথা
• হালকা জ্বর
• ক্লান্তি
• মাথাব্যথা
• পেশী বা হাড়ের জোড়ায় ব্যথা
• ঠান্ডা লাগা
• ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়া
আপনি বিশ্রাম, বেশি বেশি পানি পান এবং প্রয়োজনে ব্যথা ও জ্বর কমানোর জন্য ওষুধ খাওয়ার মাধ্যমে যেকোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সামালে নিতে পারেন।
যদি কোনো উপসর্গ কয়েক দিনের বেশি চলতে থাকে তাহলে পরামর্শের জন্য আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আরও গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম, তবে আপনি যদি আরও গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
আমি কীভাবে একটি নির্দিষ্ট কোভিড-১৯ টিকা সম্পর্কে আরও জানতে পারি?
আপনি কোভিড-১৯ টিকা সম্পর্কে আরও জানতে পারেন ডব্লিউএইচওর ওয়েবসাইটে।
টিকা নেওয়ার পর আমি কি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া বন্ধ করতে পারি?
টিকা নেওয়ার পরেও যদি আপনার এলাকায় কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব থেকে থাকে, তবে নিজেকে, পরিবার ও বন্ধুদের রক্ষার জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রাখুন। কোভিড-১৯ টিকাগুলো গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যু ঠেকাতে অত্যন্ত কার্যকর, তবে কোনো টিকাই শতভাগ কার্যকর নয়।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এর যে ধরন বা ভ্যারিয়েন্টটি সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করছে, সেই 'ওমিক্রন' ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কোভিড-১৯ টিকাগুলো তুলনামূলক কম সুরক্ষা দিয়ে থাকে। তবে হাসপাতালে ভর্তি এড়াতে, মারাত্মক অসুস্থতা ও মৃত্যু ঠেকাতে এখনও টিকাগুলো বেশ কার্যকর। টিকা নেওয়ার পাশাপাশি নিজেকে এবং অন্যদের সুরক্ষার জন্য নিরাপত্তামূলক সতর্কতা অব্যাহত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এই সতর্কতার মধ্যে রয়েছে জনাকীর্ণ স্থান এড়ানো, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া ও মাস্ক পরিধান করা (স্থানীয় নীতিমালা অনুযায়ী)।
টিকা নেওয়ার পরেও কি আমি কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হতে পারি? 'ব্রেকথ্রু কেসগুলো' কী?
টিকা নেওয়ার পরও অনেকে কোভিড-১৯-এ সংক্রমিত হতে পারেন, যাকে একটি 'ব্রেকথ্রু' সংক্রমণ বলা হয়। এই ক্ষেত্রে আক্রান্তদের হালকা লক্ষণ থাকার সম্ভাবনা বেশি। গুরুতর অসুস্থতা এবং মৃত্যু প্রতিরোধে টিকার সুরক্ষা এক্ষেত্রে জোরালোই থাকে।
ওমিক্রনের মতো ভাইরাসের অতি সংক্রামক ধরনের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে 'ব্রেকথ্রু' সংক্রমণও বেড়েছে। সেজন্য, যদি আপনি টিকা নিয়েও থাকেন সেক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা যেমন- জনাকীর্ণ স্থান এড়িয়ে চলা, মাস্ক পরা এবং নিয়মিত হাত ধোয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আর মনে রাখবেন, সর্বাধিক সুরক্ষা পেতে টিকার প্রস্তাবিত সবগুলো ডোজ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
কোভিড-১৯ টিকার সুরক্ষা কতদিন স্থায়ী হয়?
ডব্লিউএইচও'র মতে, প্রাথমিক পর্বের টিকা শেষ হওয়ার প্রায় ৪-৬ মাস পরে কোভিড-১৯ টিকার কার্যকারিতা হ্রাস পায়। এজন্য গুরুতর রোগের বিরুদ্ধে আপনার সুরক্ষা জোরদার করার জন্য একটি বুস্টার নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, যদি এটি আপনার জন্যে সহজলভ্য হয়।
কোভিড-১৯ টিকাগুলো কি ভাইরাসের বিভিন্ন ধরন থেকে সুরক্ষা দেয়?
ডব্লিউএইচও অনুমোদিত কোভিড-১৯ টিকাগুলো গুরুতর অসুস্থতা এবং মৃত্যু ঠেকাতে অত্যন্ত কার্যকর।
তবে টিকাগুলো ওমিক্রনের সংক্রমণ থেকে কম সুরক্ষা দেয়, যা বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এর প্রভাবশালী রূপ। এ কারণেই টিকা নেওয়া এবং ভাইরাসের বিস্তার কমাতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা, বায়ু চলাচলের সুব্যবস্থা রাখা, নিয়মিত হাত ধোয়া এবং সংক্রমণের লক্ষণ থাকলে দ্রুত সেবা নেওয়ার মতো পদক্ষেপগুলো চালিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ, যা ভাইরাসের রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে।
আমার কি বুস্টার ডোজ নেওয়া প্রয়োজন?
বুস্টার ডোজ গুরুতর অসুস্থতা, হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যু থেকে সুরক্ষা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ডব্লিউএইচওর পরামর্শ হচ্ছে- আপনার পালা আসার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী কোভিড-১৯ টিকার সবগুলো ডোজ আপনি নেবেন এবং বুস্টার ডোজের কথা বলা থাকলে সেটাও নেবেন।
বুস্টার ডোজগুলো প্রথমে বেশি অগ্রাধিকারমূলক জনগোষ্ঠীকে দেওয়া উচিত। উপাত্ত বলছে যে, একটি বুস্টার ডোজ, কমতে থাকা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে এবং ওমিক্রনের মতো অত্যন্ত সংক্রামক ধরনগুলো সংক্রমিত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া থেকে সুরক্ষা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সহজলভ্য হলে প্রথম বুস্টার ডোজ গ্রহণের ৪-৬ মাস পর কিছু জনগোষ্ঠীর জন্য একটি অতিরিক্ত দ্বিতীয় বুস্টার ডোজও সুপারিশ করা হয়। এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে বয়স্ক ব্যক্তি, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম; অন্তঃসত্ত্বা নারী ও স্বাস্থ্যকর্মী।
বুস্টার ডোজের প্রাপ্যতা ও এ বিষয়ক নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে আপনি যেখানে থাকেন সেখানকার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
ওমিক্রনকে লক্ষ্য করে তৈরি করা দুই ডোজের কোভিড-১৯ বুস্টার ডোজ সম্পর্কে আমরা কী জানি?
বাইভ্যালেন্ট বা দুই ডোজের কোভিড-১৯ বুস্টার ডোজ এখন করোনাভাইরাসের মূল ধরন এবং ওমিক্রন- উভয় ধরন লক্ষ্য করেই তৈরি করা হয়েছে। এগুলোকে ওমিক্রনের সাবভ্যারিয়েন্টগুলো আরও ভালোভাবে সামাল দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে, যে সাবভ্যারিয়েন্টগুলো বিশেষভাবে সংক্রমণযোগ্য বলে ইতোমধ্যে প্রমাণিত। ল্যাব গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই ডোজগুলো আপনাকে ওমিক্রনের বিরুদ্ধে উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিবডি তৈরিতে সহায়তা করে। মডার্না ও ফাইজার- উভয়ই এই বাইভ্যালেন্ট টিকা তৈরি করেছে এবং কিছু দেশ এখন এসব টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।
এই ডোজগুলোর প্রাপ্যতা এবং আপনি যেখানে থাকেন সেখানে এই ডোজগুলো কারা পেতে পারে সে সম্পর্কে তথ্যের জন্য আপনার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আর এটি উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, মূল কোভিড-১৯ টিকাগুলো এখনও খুব ভালোভাবে কাজ করছে এবং ওমিক্রনে সংক্রমিত হলেও গুরুতর অসুস্থতা থেকে শক্তিশালী সুরক্ষা প্রদান করছে।
আমি কি বিভিন্ন ধরনের কোভিড-১৯ টিকা নিতে পারি?
হ্যাঁ, আপনি বিভিন্ন ধরনের কোভিড-১৯ টিাক নিতে পারেন। তবে দেশভেদে টিকার মিশ্রিত ডোজ নেওয়ার নীতিমালায় ভিন্নতা রয়েছে। কিছু দেশ প্রাথমিক পর্বের টিকা এবং বুস্টার ডোজের জন্য ভিন্ন ধরনের টিকা ব্যবহার করেছে। নির্দেশনার জন্য আপনি যেখানে থাকেন সেখানকার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং আপনার জন্য কোন টিকাটি সর্বোত্তম হবে সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সঙ্গে কথা বলুন।
আমি অন্তঃসত্ত্বা। আমি কি কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা নিতে পারি?
হ্যাঁ, আপনি অন্তঃসত্ত্বা হলেও টিকা নিতে পারেন। গর্ভাবস্থায় কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ গুরুতর অসুস্থ হওয়া এবং অপরিণত শিশু জন্ম দেওয়ার ঝুঁকিতে ঠেলে দেয়।
বিশ্বজুড়ে এমন অনেকে কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা নিয়েছেন, যারা অন্তঃসত্ত্বা বা শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াচ্ছেন। তাদের বা তাদের শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে কোন উদ্বেগ তৈরি হয়নি। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় টিকা নেওয়া আপনার শিশুর সুরক্ষায় সাহায্য করে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় কোভিড-১৯ টিকা নেওয়ার বিষয়ে আরও তথ্যের জন্য আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সঙ্গে কথা বলুন।
আমি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছি। আমার কি কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা নেওয়া উচিত?
হ্যাঁ, আপনি যদি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান তাহলেও আপনার কাছে টিকা সহজলভ্য হওয়া মাত্রই তা গ্রহণ করা উচিত। কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা খুবই নিরাপদ এবং মা বা শিশুর জন্য এতে কোনো ঝুঁকি নেই। বর্তমান কোভিড-১৯ টিকাগুলোর কোনোটিতেই জীবন্ত ভাইরাস নেই। তাই টিকা থেকে মায়ের দুধের মাধ্যমে আপনার শিশুর মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণের কোনো ঝুঁকি নেই। প্রকৃতপক্ষে, টিকা নেওয়ার পরে আপনার শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তা বুকের দুধের মধ্য দিয়ে শিশুর দেহে যেতে পারে এবং আপনার শিশুকে সুরক্ষা প্রদানে সাহায্য করতে পারে।
কোভিড-১৯ টিকা কি প্রজনন ক্ষমতার ক্ষতি করতে পারে?
না, আপনি হয়ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণা দেখেছেন, কিন্তু কোভিড-১৯ টিকাসহ কোনো টিকা নারী বা পুরুষের প্রজনন ক্ষমতার ক্ষতি করতে পারে- এমন কোনো প্রমাণ নেই। যদি এমন হয় যে, আপনি বর্তমানে সন্তান ধারণের চেষ্টা করছেন, তবে সেক্ষেত্রেও আপনার টিকা নেওয়া উচিত।
কোভিড-১৯ টিকা কি আমার মাসিক চক্রে বিঘ্ন ঘটাতে পারে?
কিছু নারী কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা নেওয়ার পরে তাদের মাসিক চক্রে সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার কথা জানিয়েছেন। যদিও এ বিষয়ে উপাত্ত এখনও খুব কম, মাসিক চক্রের ওপর টিকার প্রভাব নিয়ে গবেষণা চলছে।
আপনার মাসিক নিয়ে উদ্বেগ বা প্রশ্ন থাকলে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সঙ্গে কথা বলুন।
আমার শিশু বা কিশোর-কিশোরীর কি কোভিড-১৯ টিকা নেওয়া উচিত?
শিশুদের টিকাদানে ব্যবহারের জন্য ক্রমবর্ধমান সংখ্যক টিকা অনুমোদিত হয়েছে। এই টিকার সুরক্ষা ও কার্যকারিতা সম্পর্কিত উপাত্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই সেগুলো সহজলভ্য করা হয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ শিশুকে নিরাপদে টিকা দেওয়া হয়েছে। কিছু কোভিড-১৯ টিকা এমন শিশুদের জন্য অনুমোদিত হয়েছে যাদের বয়স ৬। আপনি যেখানে থাকেন সেখানে শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের জন্য কোন টিকা অনুমোদিত এবং সহজলভ্য কিনা তা জানতে আপনার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মাঝে সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় মৃদু অসুস্থতা দেখা যায়, তাই তারা গুরুতর কোভিড-১৯-এর উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা কোনো একটি জনগোষ্ঠীর অংশ না হলে বয়স্ক ব্যক্তি, দীর্ঘ সময় ধরে অসুস্থ ব্যক্তি এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের তুলনায় তাদের টিকা দেওয়া কম জরুরি।
প্রত্যেকেই একে অপরকে রক্ষা করার জন্য সতর্কতা অবলম্বনের গুরুত্বের কথা আপনার সন্তানদের মনে করিয়ে দিন, যেমন ভিড়ের জায়গা এড়ানো, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া এবং মাস্ক পরা।
শিশুরা যাতে তাদের জন্য সুপারিশকৃত শৈশবকালীন টিকাগুলো গ্রহণ করে, তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোভিড-১৯ টিকা সম্পর্কে আমি আমার বাচ্চাদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলব?
কোভিড-১৯ টিকা সম্পর্কিত খবরে আমাদের দৈনন্দিন জীবন ভরে উঠছে এবং এটাই স্বাভাবিক যে কৌতূহলী তরুণ মনে প্রশ্ন থাকবে, অনেক প্রশ্ন। একটি জটিল বিষয়কে সহজ এবং আশ্বাসদায়ক ভাষায় ব্যাখ্যা করতে সাহায্যের জন্য আমাদের বিশ্লেষণমূলক নিবন্ধ পড়ুন।
এটি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে, বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত যে লাখ লাখ শিশুকে কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব বিরল। প্রাপ্তবয়স্কদের মতো শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মাঝেও টিকার একটি ডোজ গ্রহণের পর পাশ্বপ্রতিক্রিয়ার হালকা উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন- মৃদু জ্বর ও শরীর ব্যথা। তবে এই উপসর্গগুলো সাধারণত মাত্র এক বা দুই দিন স্থায়ী হয়। কিশোর-কিশোরী ও শিশুদের জন্য অনুমোদিত টিকা খুবই নিরাপদ।
আমার বন্ধু বা পরিবারের সদস্য কোভিড-১৯ টিকার বিরুদ্ধে। আমি তাদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলব?
নিরাপদ ও কার্যকর কোভিড-১৯ টিকার বিকাশ মহামারি শেষ করার পথে আমাদের বৈশ্বিক প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে একটি বিশাল পদক্ষেপ। এই খবরটি যতই উত্তেজনাপূর্ণ হোক না কেন, তবে এখনও কিছু লোক আছে যারা কোভিড-১৯ টিকা নিয়ে সন্দিহান বা দ্বিধাগ্রস্ত। এই ক্যাটাগরিতে পড়ে- আপনার জানাশোনার মধ্যেও এমন কেউ থাকার সম্ভাবনাও রয়েছে।
কীভাবে এই চ্যালেঞ্জিং কথোপকথন করতে হয় সে সম্পর্কে পরামর্শ পেতে আমরা ইয়েল ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের পরিচালক ড. সাদ ওমরের সঙ্গে কথা বলেছি।
সবাই টিকা না নেওয়া পর্যন্ত আমি কীভাবে আমার পরিবারকে রক্ষা করতে পারি?
নিরাপদ ও কার্যকর টিকা পরিস্থিতি বদলে দেয়, তবে টিকা নেওয়ার পরেও আমাদের নিজেদের এবং অন্যদের রক্ষা করার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ওমিক্রনের মত ধরনগুলো প্রমাণ করেছে যে, যদিও কোভিড-১৯ টিকাগুলো গুরুতর অসুস্থতা প্রতিরোধে খুব কার্যকর, তবে এগুলো ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে যথেষ্ট নয়। আপনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি করতে পারেন তা হলো ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি কমানো। নিজেকে এবং নিজেকে ও আপনার প্রিয়জনের সুরক্ষার জন্য:
- যেখানে অন্যদের থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয় সেখানে মাস্ক পরিধান করুন।
- জনবহুল স্থানে অন্যদের থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন।
- বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা ভালো নয়- এমন স্থান বা জনাকীর্ণ জায়গা এড়িয়ে চলুন।
- ঘরের ভেতরে বায়ু চলাচল ব্যবস্থা উন্নত করতে জানালা খুলে দিন।
- সম্ভব হলে ঘরের বাইরে বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করুন।
- নিয়মিত সাবান ও পানি বা অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড রাব দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
যদি আপনার বা পরিবারের কোনো সদস্যের জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসা সেবা নিন এবং অন্য শিশু ও বয়স্কদের সঙ্গে মেলামেশা এড়িয়ে চলুন।
কোভিড-১৯ টিকা কি আপনার ডিএনএ'র ক্ষতি করতে পারে?
না, কোভিড-১৯ টিকার কোনোটিই কোনোভাবেই আপনার ডিএনএর ক্ষতি করে না বা ডিএনএনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে না। মেসেঞ্জার আরএনএ বা এমআরএনএ টিকাগুলো দেহকোষকে শেখায় কীভাবে একটি প্রোটিন তৈরি করতে হয়, যা শরীরের অভ্যন্তরে একটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরিতে উৎসাহ যোগায়। এই প্রতিক্রিয়া অ্যান্টিবডি তৈরি করে, যা আপনাকে ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখে। এমআরএনএ ডিএনএ থেকে আলাদা এবং প্রায় ৭২ ঘণ্টা কোষের ভেতরে থাকার পর নিঃশেষ হয়ে যায়। তবে এটি কখনোই কোষের নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করে না, যেখানে ডিএনএ থাকে।
কোভিড-১৯ টিকাগুলোতে কি কোনও প্রাণীজ উপাদান রয়েছে?
না, ডব্লিউএইচও-অনুমোদিত কোভিড-১৯ টিকার কোনোটিতেই প্রাণীজ উপাদান নেই।
অনলাইনে কোভিড-১৯ টিকা সম্পর্কে আমি ভুল তথ্য দেখেছি। আমার কি করা উচিত?
দুঃখের বিষয় হলো কোভিড-১৯ ভাইরাস ও টিকা সম্পর্কে অনলাইনে অনেক ভুল তথ্য রয়েছে। আমরা যা কিছু দেখেছি তার বেশিরভাগই আমাদের সবার জন্য নতুন। তাই এমন কিছু ঘটনা থাকতে পারে যে, ক্ষতির উদ্দেশ্যে নয় – এমন তথ্য শেয়ার করা হয়েছে, যা পরে ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
স্বাস্থ্য সংকটের সময়ে ভুল তথ্য প্যারানয়া, আতঙ্ক ও বিভেদ সৃষ্টির কারণ হতে পারে। এটি মানুষকে অরক্ষিত করতে বা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে আরও ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। আপনার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, জাতিসংঘ, ইউনিসেফ, ডব্লিউএইচওর মতো বিশ্বস্ত উৎস থেকে যাচাইকৃত তথ্য এবং পরামর্শ নিন।
আপনি যদি অনলাইনে এমন কিছু দেখেন যা আপনার কাছে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর বলে মনে হয়, তবে আপনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ করে তার বিস্তার ঠেকাতে সহায়তা করতে পারেন।
কোভ্যাক্স কি?
কোভ্যাক্স হলো বিশ্বব্যাপী টিকার উন্নয়ন, উৎপাদন এবং ন্যায়সঙ্গত বিতরণের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি বৈশ্বিক প্রচেষ্টা। সব দেশ সুরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো দেশই কোভিড-১৯ থেকে নিরাপদ থাকবে না।
কোভ্যাক্সের সঙ্গে ১৯০টি দেশ ও অঞ্চল যুক্ত, যার ফলে বিশ্বের জনসংখ্যার ৯০ শতাংশেরও বেশি এই সুবিধার আওতায় রয়েছে। সিইপিআই, জিএভিআই, ডব্লিউএইচও এবং অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে ইউনিসেফ কোভ্যাক্স-এর পক্ষ থেকে কোভিড-১৯ টিকা সংগ্রহ ও সরবরাহের প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিচ্ছে।
কোভ্যাক্স সম্পর্কে আরও জানুন।
এই নিবন্ধ হালনাগাদ হয়েছে ৬ জুন ২০২২। সর্বশেষ তথ্যসহ এটি নিয়মিত হালনাগাদ হতে থাকবে।