প্যানিক অ্যাটাক কী

কারণগুলো বুঝতে পারা আপনার সন্তানকে এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ।

ইউনিসেফ
“She's just stuck in her head” by Urmila Shetu, 21
UNICEF Bangladesh/2023/Shetu

প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে, ভীতি ও উদ্বেগের তীব্র অনুভূতি। এটি প্রায়ই ঘটে, যদি কেউ তার জীবনে ঘটছে এমন কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন বোধ করে অথবা কঠিন বা মানসিক চাপযুক্ত কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়।

প্যানিক অ্যাটাক খুব ভীতিকর মনে হতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের জন্য। তবে সাধারণত চিকিত্সার মাধ্যমে এটি রোধ করা যেতে পারে। এটি জানা গুরুত্বপূর্ণ যে, প্যানিক অ্যাটাক কোনো ক্ষতি সাধন করবেনা, এবং ঐ মুহূর্তে অসম্ভব মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে ওই অনুভূতিটি এক সময় চলে যায়।


 

? mark

প্যানিক অ্যাটাক কি?

প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে ভীতি ও উদ্বেগের অনুভূতি যা হঠাৎ করেই আমাদের হতবিহ্বল করে দিতে পারে এবং সাধারণত এর সঙ্গে হালকা মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার মতো তীব্র শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে অনেক শিশু আতঙ্কঅনুভব করে, যেমন সে মনে করতে পারে খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে। এমনকি যখন প্রকৃতপক্ষে কোনো বিপদ থাকে না, তখনও এই অনুভূতি হতে পারে।

 

প্যানিক অ্যাটাকের কারণ কী?

শিশু বা বড়দের মাঝে প্যানিক অ্যাটাকের কারণ কী তা সবসময় পরিষ্কার নয়। আমরা যা জানি তা হলো– কোন কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন বোধ করা অথবা কঠিন বা মানসিক চাপযুক্ত কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া প্যানিক অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। এসব পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে:

  • বাড়িতে বা স্কুলে কোনো কঠিন অভিজ্ঞতার কারণে সৃষ্ট উদ্বেগ
  • পরীক্ষা, বন্ধুত্ব বা সম্পর্কের মতো বিষয়গুলো নিয়ে মানসিক চাপ
  • প্রিয়জনের মৃত্যু
  • নির্যাতন বা অবহেলার মতো ভীতিকর কোনো অভিজ্ঞতা
  • একটি সহিংস অভিজ্ঞতা

 

শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মাঝে প্যানিক অ্যাটাক

প্যানিক অ্যাটক প্রায়শই বয়ঃসন্ধিকালে শুরু হয়, যদিও তা শৈশবেও শুরু হতে পারে। এসব অ্যাটাক গুরুতর উদ্বেগের কারণ হতে পারে, সেইসঙ্গে এটি শিশুর মেজাজ বা অন্যান্য কাজকর্মকে প্রভাবিত করতে পারে।

কিছু শিশু এমন পরিস্থিতি এড়াতে শুরু করে যেখানে তারা প্যানিক অ্যাটাকের শিকার হওয়ার আতঙ্কে থাকে। কিশোর-কিশোরীরা তাদের উদ্বেগ কমাতে অ্যালকোহল বা ড্রাগ নেওয়া শুরু করতে পারে। যদি এসব বিষয় চিহ্নিত ও চিকিত্সা করা না হয়, তাহলে প্যানিক অ্যাটাক শিশুদের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন- ওই শিশুরা গুরুতর বিষণ্ণতায় ভুগতে পারে এবং তারা আত্মঘাতমূলক আচরণ করতে পারে।

প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা হলে প্যানিক অ্যাটাকের সম্মুখীন হওয়া শিশুরা সাধারণত চিকিত্সায় ভালো সাড়া দেয়।

magnifying glass

প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণ ও উপসর্গ

আপনার সন্তান যদি প্যানিক অ্যাটাকের সম্মুখীন হয়, তবে চারপাশে যা ঘটছে সেগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে তারা অনুভব করতে পারে। তারা আতংকিত হয়ে পড়ে যে, তাদের শরীর বিপদে পড়েছে বা এমনকি তারা মারা যাচ্ছে! প্যানিক অ্যাটাকের কারণে  আমাদের শরীর বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসবের মধ্যে রয়েছে:

  • শ্বাসকষ্ট, দ্রুত শ্বাস নেওয়া বা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
  • মাথা হালকা হওয়া বা অচেতন হওয়ার অনুভূতি
  • আলো আরও উজ্জ্বল ও তীব্রতর মনে হওয়া 
  • হার্টবিট দ্রুততর হওয়া এবং বুকে চাপ অনুভব করা
  • স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘাম হওয়া
  • পায়ে কাঁপুনি ও টালমাটাল ভাব
  • অশ্রুসিক্ত হওয়া, যেন তারা কান্না থামাতেই পারে না
  • মনে হবে কিছুতে আটকে গেছে, যেন তারা নড়াচড়া করতে পারছে না 
  • পেট ফাঁপা বা অসুস্থ বোধ করা।
hands

আপনার সন্তানকে পরিস্থিতি সামাল দিতে সাহায্য করার উপা

প্যানিক বা আতঙ্কমোকাবিলার প্রথম ধাপ হলো- কী কারণে প্যানিক অ্যাটাক তৈরি হয় তা জানা। আপনার সন্তানকে জিজ্ঞাসা করুন, তারা কেমন অনুভব করে এবং কোন কারণে তারা উদ্বিগ্ন বা মানসিক চাপ অনুভব করে। এমন কোনো নির্দিষ্ট পরিস্থিতি কি আছে যা তাদের মাঝে আতংকের অনুভূতি তৈরি করে? আপনার সন্তান সেই পরিস্থিতিগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে কী করতে পারে সে সম্পর্কে চিন্তা করতে এই জ্ঞান তাকে সাহায্য করতে পারে।

প্যানিক অ্যাটাকের সময় আপনার সন্তানের মনে হতে পারে যে, সে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। তবে এমন কিছু জিনিস রয়েছে যা করার মাধ্যমে আপনি তাকে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে ও পুনরায় ভালো অনুভব করতে সাহায্য করতে পারেন:

১.  পরিস্থিতি মোকাবলা করুন: কখনও কখনও আমাদের আতংকিত করে– এমন পরিস্থিতি বা স্থানকে এড়িয়ে যাওয়া সহজ বলে মনে হতে পারে। এমনটা মনে হওয়া স্বাভাবিক। তবে, পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়ার অভ্যাস আমাদের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। আমাদের আতংকিত করে তোলে– এমন পরিস্থিতিগুলো এড়িয়ে যাওয়া লক্ষ্য নয়; লক্ষ্য হচ্ছে, আপনার সন্তানকে সেই পরিস্থিতিতে তারা কেমন অনুভব করে তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিখতে সাহায্য করা।

২.  বর্ণমালা ধরে এগিয়ে যাওয়া: আপনার সন্তানকে বর্ণমালার প্রতিটি অক্ষরের জন্য কিছু একটার নাম বলতে বলুন। এগুলো হতে পারে প্রাণী, নাম, স্থান, খাবার ইত্যাদি। এটি তাদের মস্তিষ্কের একটি ভিন্ন অংশকে নিযুক্ত করবে এবং তাদের মনোযোগ ভীতি ও উদ্বেগ থেকে দূরে সরিয়ে দেবে।

৩.  শ্বাস-প্রশ্বাসে মনোনিবেশ করুন: গভীর শ্বাস (পেট ফুলে উঠবে) খুবই প্রশান্তিদায়ক এবং এটি আমাদের ফুসফুসের গভীরে অক্সিজেন সরবরাহে সাহায্য করে। এখানে তিন ধাপের একটি সহজ প্রক্রিয়া দেওয়া হলো:

  • আপনার পেটে হাত রাখুন
  • ৫টি গভীর শ্বাস নিন, ৫ সেকেন্ড ধরে শ্বাস নিন এবং ৫ সেকেন্ড ধরে শ্বাস ছাড়ুন, আপনার নাক দিয়ে শ্বাস নিন এবং মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন।
  • বুঝিয়ে বলুন যে, আপনার শিশু যখন শ্বাস নেয়, তখন তারা একটি বেলুনের মতো নরমভাবে তাদের পেট ফোলায় এবং যখন তারা বাতাস ছাড়ে তখন আবার বেলুন থেকে ধীরে ধীরে বাতাস বের হয়।

৪.  নিরাপদ স্থান খুঁজুন: আপনার সন্তান যদি কোনো পরিস্থিতিতে আতংকিত বোধ করে, তাহলে তাদের এমন একটি স্থান খুঁজে বের করতে সহায়তা করুন, যেখানে তারা শান্তভাবে শ্বাস নিতে ও চিন্তা করতে পারে। এটি আপনার বাড়ি বা তাদের কক্ষের মতো একটি স্থান হতে পারে, যে স্থানের সঙ্গে তারা পরিচিত। অথবা, একটি কাল্পনিক স্থান– এমন কোথাও যেখানে প্রশান্তি বোধ হয়, যেমন- পার্কের বা সমুদ্রের ধারে তাদের প্রিয় অংশ।

৫.  তাদের ইন্দ্রিয় ব্যবহার করতে সাহায্য করুন: আতংক, উদ্বেগ ও মানসিক চাপের অনুভূতিগুলো মোকাবিলা করতে আমাদের ইন্দ্রিয় হলো শক্তিশালী হাতিয়ার। আপনার সন্তানকে সেগুলো ব্যবহার করা শেখানোর জন্য এখানে একটি সহজ উপায় রয়েছে:

আপনার সন্তানকে স্বচ্ছন্দে বসতে বলুন এবং ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে ও ছাড়তে বলুন। এখন তাদের যন্ত্রণাদায়ক নয় এমন কিছু জিনিসের নাম বলতে বলুন। তারা দেখতে পারে এমন ৪টি জিনিস, তারা শুনতে পারে এমন ৩টি জিনিস, তারা গন্ধ নিতে পারে এমন ২টি জিনিস এবং তারা স্বাদ নিতে পারে এমন একটি জিনিসের নাম বলতে বলুন।

mental_health-support

কখন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে

উচ্চমাত্রায় প্যানিক অ্যাটাকের ক্ষেত্রে শিশু বা কিশোর-কিশোরীরা ঘর ছেড়ে বের হতে ভয় পেতে পারে। আপনার সন্তানের মাঝে প্যানিক অ্যাটাকের গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে, আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার সময় এসেছে। প্রথমে তাদের পারিবারিক চিকিৎসক বা শিশু বিশেষজ্ঞ দিয়ে মূল্যায়ন করা উচিত। যদি উপসর্গের কারণ হিসেবে অন্য কোনো শারীরিক অসুস্থতা পাওয়া না যায়, তাহলে তাদের মূল্যায়নের জন্য একজন শিশু ও কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো যেতে পারে।

চিকিৎসার মাধ্যমে প্যানিক অ্যাটাক থামানো যেতে পারে। শুরুতেই চিকিৎসা দেওয়া হলে, তা গুরুতর জটিলতা প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।