শিক্ষা
সব শিশুকে তাদের সম্ভাবনার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে সাহায্য করা
- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
চ্যালেঞ্জ
সকল শিশু ও কিশোর-কিশোরীকে সহজলভ্য ও মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা বা চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হচ্ছে।
তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে মাত্র ১৯ শতাংশ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে। যদিও মেয়ে এবং ছেলেদের প্রাথমিক পর্যায়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য প্রায় সার্বজনীন, প্রাপ্ত তথ্য যে ইঙ্গিত প্রদান করে তা হলো, শিশুদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার সংখ্যাও বেড়ে যায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে, এটি প্রায়শই বাল্যবিবাহের কারণে হয় এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয় শিশুশ্রমের কারণে।
দেশের মাত্র ৬৪ শতাংশ শিশু মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম সমাপ্ত করে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। কারণ, বাংলাদেশের ৫ কোটি ৮০ লক্ষ শিশু যারা দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৪ শতাংশ এবং একটা বিরাট জনগোষ্ঠিকে প্রতিনিধিত্ব করে, তাদের উপরই দেশের ভবিষ্যত কর্মশক্তি নির্ভর করছে।
উপরন্তু দেশের সবচেয়ে দরিদ্র শিশু, প্রতিবন্ধী এবং দুর্যোগ-কবলিত অঞ্চলে বসবাসকারী প্রান্তিক শিশুরা বিদ্যালয়ের শিক্ষা না পাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, অন্যান্য শিশুদের তুলনায় প্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুল থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা সাতগুণ বেশি এবং অবিবাহিত মেয়েদের তুলনায় বিবাহিত মেয়েদের বাদ পড়ার সম্ভাবনা চারগুণ বেশি। বৈরী জলবায়ুর কারণে এদেশের প্রায় ২ কোটি শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এসব দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, অতিরিক্ত গরম এবং খরা।
এছাড়া অনেক শিশু যারা স্কুলে যায়, তাদের মধ্যেও অনেককেই নূন্যতম শিক্ষাগত দক্ষতা অর্জনে বেশ বেগ পেতে হয়। তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের এক তৃতীয়াংশেরও কম স্বাক্ষরতা এবং সংখ্যাগত দক্ষতা পূরণের কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছাতে পারে। কোভিড-১৯ মহামারীর পূর্বে বাংলাদেশে ১০ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ৪৩ শতাংশ দক্ষতার সাথে পড়তে পারতো। এছাড়াও, মাধ্যমিক পর্যায় পার হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ মৌলিক দক্ষতা অর্জন করেছিল।
শিক্ষা গ্রহণ এবং মানসম্পন্ন শিক্ষার প্রাপ্তির সুযোগ মহামারীর কারনে আরও সংকুচিত হয়েছে। কারণ বাংলাদেশে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় স্কুল বন্ধ ছিল।
সমাধান
বাংলাদেশকে যদি মধ্য আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার লক্ষ্য অর্জন করতে হয়, তাহলে মৌলিক সাক্ষরতা এবং সংখ্যাগত দক্ষতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া বা স্কুল থেকে বাদ যাওয়ার রাশ টেনে ধরতে হবে।
একারণেই অন্তর্ভুক্তিমূলক, প্রাসঙ্গিক এবং সহজে গ্রহণ করা যায় এমন একটি শক্তিশালী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ইউনিসেফ বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করছে। শিশুদের মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার হারের উন্নতির জন্যও ইউনিসেফ কাজ করছে, যাতে শিশুরা মিশ্র-পদ্ধতির শিক্ষা, দক্ষতা এবং স্মার্ট প্রযুক্তির সাথে সমন্বয় করে শিক্ষা চালিয়ে যেতে পারে।
এটা অর্জনের লক্ষ্যে ইউনিসেফ এবং সহযোগীরা তিনটি বিষয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলোকপাত করছে:
প্রাথমিক শিক্ষা: সকল শিশু যেন প্রাথমিক শিক্ষা এবং প্রাক-প্রাথমিক বা প্রারম্ভিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে ইউনিসেফ শিক্ষা ব্যবস্থার সক্ষমতাকে বাড়ানোর জন্য কাজ করছে যাতে যত অল্প বয়সে সম্ভব মূল দক্ষতা অর্জনের দিকে যাত্রা শুরু করা সম্ভব হয়।
মানসম্মত অন্তর্ভুক্তিমুলক প্রাথমিক শিক্ষা: সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত এবং প্রান্তিক শিশুসহ সকলের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় সক্ষমতা বাড়াতে এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করতে কাজ করছে ইউনিসেফ।
কিশোর-কিশোরীদের জন্য শিক্ষা এবং দক্ষতা: একুশ শতকের তরুণদের প্রস্তুত করার জন্য পাঠ্যক্রমের মধ্যে হস্তান্তরযোগ্য দক্ষতার বিষয়টি সন্নিবেশ করে কিশোর-কিশোরীদের শিক্ষা এবং দক্ষতা জোরদার করার জন্য জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে ইউনিসেফ। সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত এবং স্কুলের বাইরে থাকা কিশোর-কিশোরীদের জীবন ও জীবিকার দক্ষতাসহ তাদের দুর্বলতা হ্রাস করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলোর সাথে বিকল্প শিক্ষার পথকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্যও ইউনিসেফ কাজ করে চলেছে।
জরুরী পরিস্থিতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে সক্ষম এমন শিক্ষা প্রদানের জন্য জাতীয় সক্ষমতা জোরদারেও কাজ করছে ইউনিসেফ।