করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সময়ে সন্তানের যত্ন সংক্রান্ত টিপস
কোভিড-১৯ এর সময়ে সন্তানের যত্ন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আপনাকে সহায়তা করতে বিশেষজ্ঞ টিপস
- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
<কোভিড-১৯ তথ্য কেন্দ্রে ফিরে যেতে
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)মহামারি বিশ্বজুড়ে পারিবারিক জীবন এলোমেলো করে দিয়েছে। স্কুল বন্ধ হওয়া, দূর থেকে কাজ করা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা – এগুলো যে কারও জন্যই নতুন বিষয়, বিশেষ করে বাবা-মায়েদের জন্য। এই নতুন (সাময়িক) পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সহায়তা করতে বাবা-মা ও সেবাদানকারীদের একগুচ্ছ সহজ টিপস বা পরামর্শ প্রদানের জন্য আমরা ‘প্যারেন্টিং ফর লাইফলং হেলথ ইনিশিয়েটিভ’-এর সাথে যোগ দিয়েছি।
সন্তানের যত্ন সংক্রান্ত টিপসগুলো জানুন
১. কোভিড-১৯ সম্পর্কে আলোচনা করা
শিশুদের সঙ্গে কথা বলুন। তারা ইতোমধ্যেই এবিষয়ে কিছু না কিছু শুনে থাকবে। নীরবতা ও গোপনীয়তা শিশুদের সুরক্ষা দেয় না। বরং সুরক্ষা দিতে পারে সততা ও খোলামেলা আলোচনা। তারা কতটা বুঝতে পারবে তা ভেবে দেখুন। আপনিই তাদের সম্পর্কে সবচেয়ে ভালোভাবে জানেন।
এই টিপসগুলো ডাউনলোড করুন [পিডিএফ ফরম্যাট]।
মন খোলা রাখুন এবং শুনুন
আপনার শিশুকে নির্দ্বিধায় কথা বলার সুযোগ দিন। তাদের খোলামেলা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন এবং তারা ইতোমধ্যে কতটা জানে তা বোঝার চেষ্টা করুন।
সৎ হোন
সর্বদা সততার সঙ্গে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিন। আপনার সন্তানের বয়স কত এবং তারা কতটা বুঝতে পারবে সে সম্পর্কে ভাবুন।
সহায়ক হোন
আপনার শিশু আতঙ্কিত বা বিভ্রান্ত থাকতে পারে। তারা কেমন অনুভব করছে তা প্রকাশ করার সুযোগ করে দিন এবং আপনি যে তাদের পাশে আছেন সেটা তাদেরকে নিশ্চিত করুন।
উত্তর জানা না থাকলেও সমস্যা নেই
“আমরা জানি না, তবে এটি জানার চেষ্টা করছি; অথবা আমরা জানি না, তবে আমরা মনে করি’’– এভাবেও তাদেরকে বলা যায়। এ বিষয়টিকে আপনার সন্তানের সঙ্গে নতুন কিছু শেখার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করুন!
বীরেরা কখনও ভীতিকর না
একজন মানুষ দেখতে কেমন, কোথায় থাকে বা কোন ভাষায় কথা বলে তার সঙ্গে কোভিড-১৯ এর যে কোনো সম্পর্ক নেই তা তাদেরকে ব্যাখ্যা করুন। আপনার শিশুকে বলুন যে, অসুস্থ এবং যারা অসুস্থদের যত্ন নিচ্ছেন তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতিশীল হতে হবে। এমন লোকদের কথা জানার চেষ্টা করুন যারা কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব বন্ধ করতে কাজ করছেন এবং অসুস্থ মানুষের যত্ন নিচ্ছেন।
চারদিকে নানা ধরনের গল্প শোনা যাচ্ছে
নানা ধরনের কথা/গল্প চারদিকে শোনা যাচ্ছে, যার অনেকগুলো সত্য নাও হতে পারে। ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো বিশ্বাসযোগ্য সাইট ভিজিট করুন।
ভালো কিছু বলে শেষ করুন
আপনার শিশু ঠিক আছে কিনা তা দেখুন। তাদের মনে করিয়ে দিন যে, আপনি তাদের গুরুত্ব দেন এবং চাইলে যে কোনও সময় তারা আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারে। এরপর একসঙ্গে মজার কিছু একটা করুন !
২. কোভিড-১৯ এর সময়ে একজন আরেকজনকে সময় দেওয়া
কাজে যেতে পারছেন না? স্কুল বন্ধ? অর্থকড়ি নিয়ে চিন্তিত? মানসিক চাপ অনুভূব করা ও হতবিহ্বল হয়ে পড়া স্বাভাবিক।
স্কুল বন্ধ হওয়ায় এটা আমাদের শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ভালো করার একটি সুযোগও। এখন একজন আরেকজনকে সময় দেওয়ার কাজটি করা যায় এবং এটি আনন্দের। এটি শিশুর প্রতি আপনার ভালোবাসা প্রকাশ করবে ও তারা সুরক্ষিত বোধ করবে এবং এতে তারা বুঝতে পারবে যে তারাও গুরুত্বপূর্ণ।
এই টিপসগুলো ডাউনলোড করুন [পিডিএফ ফরম্যাট]।
প্রতিটি সন্তানের সঙ্গে কাটানোর জন্য আলাদা সময় ঠিক করে রাখুন
এটি মাত্র ২০ মিনিট বা তার বেশি সময়ও হতে পারে – তা পুরোপুরি আমাদের ওপর নির্ভর করে। এটি প্রতিদিন একই সময়ে হতে পারে, যাতে শিশু বা কিশোর-কিশোরীরা এর জন্য অপেক্ষায় থাকে।
আপনার সন্তানকে জিজ্ঞাসা করুন তারা কী করতে চায়
কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে। তারা যদি এমন কিছু করতে চায় যা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, সেক্ষেত্রে বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলার এটি একটি সুযোগ।
আপনার একেবারেই ছোট বা সদ্য হাঁটতে শেখা শিশুর সঙ্গে যা করতে পারেন
- তাদের মুখের অভিব্যক্তি ও শব্দ অনুকরণ করুন।
- গান গেয়ে শোনান, হাঁড়ি ও চামচ দিয়ে বাজনা বাজান।
- কাপ অথবা ব্লক সারি করে রাখুন।
- একটি গল্প বলুন, একটি বই পড়ে শোনান বা ছবি শেয়ার করুন।
একটু বড় শিশুর সঙ্গে যা করতে পারেন
- একটি বই পড়ে শোনান বা ছবি দেখান।
- হালকা রঙের চকখড়ি বা পেন্সিল দিয়ে ছবি এঁকে দিন।
- গানের সঙ্গে নাচুন বা গান গেয়ে শোনান!
- একসঙ্গে কিছু একটা করুন – কিছু একটা পরিষ্কার করার বা রান্না করার খেলা খেলুন।
- শিশুর স্কুলের কাজে সাহায্য করুন।
আপনার কিশোর-কিশোরী বয়সী সন্তানের সঙ্গে যা করতে পারেন
- তারা পছন্দ করে এমন কিছু নিয়ে কথা বলুন: খেলাধুলা, সঙ্গীত, খ্যাতিমান ব্যক্তি, বা বন্ধু।
- পছন্দের কোনো খাবার একসঙ্গে রান্না করুন।
- তাদের পছন্দের গানের সঙ্গে একত্রে শরীর চর্চা করুন।
তাদের কথা শুনুন,তাদের দিকে তাকান। তাদের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিন। মজা করুন!
৩. করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময়ে ইতিবাচক থাকা
আমাদের শিশু বা কিশোর বয়সী সন্তানেরা যখন তাদের কর্মকাণ্ড দিয়ে আমাদের পাগল করে তোলে, তখন ইতিবাচক থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। প্রায়ই আমরা একটি কথা বলে শেষ করি – “এটা করা বন্ধ কর!” তবে আমরা যদি শিশুদের ইতিবাচক নির্দেশনা দেই এবং তারা কাজটি ঠিকঠাক করতে পারলে যদি তাদের প্রশংসা করি, তাহলে আমরা যা করতে বলবো শিশুরা সেটা করতেই বেশি আগ্রহী থাকবে।
এই টিপসগুলো ডাউনলোড করুন [পিডিএফ ফরম্যাট]।
আপনি যে আচরণটি দেখতে চান তা বলুন
আপনার শিশুকে কোন কাজ করতে বলার সময় ইতিবাচক শব্দ ব্যবহার করুন; যেমন: “অনুগ্রহ করে তোমার কাপড়-চোপড়গুলো দূরে রাখ"(“বিশৃঙ্খলা করো না” এর বদলে)।
সবকিছুই উপস্থাপনার ওপর নির্ভর করে
আপনার শিশুর সঙ্গে চিৎকার-চেঁচামেচি করলে তা কেবল আপনার ও তাদের ওপর চাপ আরও বাড়াবে এবং আরও সবাইকেই রাগিয়ে তুলবে। আপনার শিশুর নাম ব্যবহার করে তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করুন। শান্ত স্বরে তাদের সাথে কথা বলুন।
আপনার শিশু ভালো কিছু করলে প্রশংসা করুন
আপনার শিশু বা কিশোর বয়সী সন্তান ভালো কিছু করলে তার জন্য তাদের প্রশংসা করার চেষ্টা করুন। তারা হয়তো এটি বুঝতে দেবে না, তবে আপনি দেখবেন তারা সেই ভালো কাজটি আবারও করবে। এটি তাদের পুনরায় আশ্বস্ত করবে যে আপনি তাদের প্রতি খেয়াল রাখছেন এবং তাদের গুরুত্ব দিচ্ছেন।
বাস্তবতা মেনে নিন
আপনি আপনার শিশুকে যা করতে বলছে তারা কি সেটা করতে পারছে? ঘরের ভেতরে পুরো দিন চুপচাপ থাকা একটি শিশুর জন্য খুব কষ্টসাধ্য, তবে আপনি যখন ফোনে কথা বলবেন তখন তারা ১৫ মিনিটের জন্য চুপচাপ থাকতে পারে।
আপনার কিশোর বয়সী সন্তানকে সংযুক্ত থাকতে সহায়তা করুন
কিশোর বয়সীদের বিশেষ করে তাদের বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হওয়া প্রয়োজন। আপনার কিশোর বয়সী সন্তানকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার অন্যান্য উপায়গুলোর মাধ্যমে সংযুক্ত হতে সহায়তা করুন। এটি এমন কিছু যা আপনারা একসঙ্গেও করতে পারেন!
৪. গোছালো হওয়া
কোভিড-১৯ আমাদের প্রতিদিনের কাজ, বাড়ি ও স্কুলের রুটিন কেড়ে নিয়েছে। এটি শিশু, কিশোর বয়সী এবং আপনার জন্য কঠিন সময়। নতুন রুটিন তৈরি করা এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
এই টিপসগুলো ডাউনলোড করুন [পিডিএফ ফরম্যাট]।
নমনীয় তবে ধারাবাহিক দৈনিক রুটিন তৈরি করুন
- আপনার এবং আপনার শিশুদের জন্য এমন একটি সময়সূচি তৈরি করুন যেখানে গোছালোভাবে সব কাজ করার পর অবসর সময়ও থাকে। এটি শিশুদের আরও নিরাপদ বোধ করতে এবং আরও ভালো আচরণ করতে সহায়তা করবে।
- শিশু বা কিশোর বয়সীরা স্কুলের সময়সূচি তৈরির মতো তাদের দিনের রুটিন তৈরিতে পরিকল্পনা দিয়ে সহায়তা করতে পারে। এটি তৈরিতে শিশুদের সহায়তা করলে তারা আরও ভালোভাবে এটি অনুসরণ করবে।
- প্রতিদিন শরীর চর্চার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করুন। এটি মানসিক চাপ কমাতে এবং বাড়িতে থাকা শিশুদের প্রচুর শক্তি যোগাতে সহায়তা করে।
আপনার শিশুকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে শিক্ষা দিন
- আপনার দেশের জন্য প্রযোজ্য হলে শিশুদের বাড়ির বাইরে নিয়ে যান।
- লোকজনের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য আপনি চিঠি লিখতে এবং ছবিও আঁকতে পারেন। এগুলো আপনার বাড়ির বাইরে টাঙিয়ে রাখুন যাতে অন্যরা দেখতে পারে!
- আপনি কীভাবে আপনার সন্তানদের সুরক্ষিত রাখছেন সে বিষয়ে কথা বলে আপনি তাদের পুনরায় আশ্বস্ত করতে পারেন।
- তাদের পরামর্শ শুনুন এবং সেগুলোকে গুরুত্ব সহকারে নিন।
হাত ধোয়া ও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়গুলোকে মজার করে তুলুন
- হাত ধোয়ার জন্য ২০ সেকেন্ডের একটি গান বানান। এর সঙ্গে কাজ যুক্ত করুন!
- নিয়মিত হাত ধোয়ার জন্য শিশুদের পয়েন্ট দিন এবং প্রশংসা করুন।
- আমরা কত কম সংখ্যকবার আমাদের মুখমণ্ডল স্পর্শ করে থাকতে পারি সেটা দেখার জন্য একটি খেলা তৈরি করুন এবং সবচেয়ে কমবার যে স্পর্শ করবে তার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখুন (একজন আরেকজনের স্পর্শের বিষয়টি গণনা করতে পারেন)।
আপনি আপনার সন্তানের আচরণের আদর্শ
- আপনি যদি নিজে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো চর্চা করেন এবং অন্যের প্রতি সমবেদনা সাথে আচরণ করেন, বিশেষ যারা অসুস্থ বা ঝুঁকির মুখে রয়েছে তাদের সঙ্গে, তাহলে আপনার শিশু এবং কিশোর বয়সী সন্তানেরা আপনার কাছ থেকে শিখবে।
- প্রতিটি দিনের শেষে ওই দিনটি সম্পর্কে এক মিনিট ভাবুন। আপনার শিশুদের করা একটি ইতিবাচক বা মজার বিষয় সম্পর্কে তাদের বলুন। আপনি আজ ভালো যা কিছু করেছেন তার জন্য নিজের প্রশংসা করুন। আপনি একজন তারকা!
৫. খেলার মাধ্যমে শেখা
লাখ লাখ শিশু স্কুল বন্ধ হওয়া এবং তাদের নিজ বাড়িতে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকার বিষয়টির সম্মুখীন। এই পরামর্শটি খেলার মাধ্যমে শেখার বিষয়ে – এটি এমন কিছু, যা সব বয়সী মানুষের জন্যই আনন্দদায়ক হতে পারে!
এই টিপসগুলো ডাউনলোড করুন [পিডিএফ ফরম্যাট]।
খেলার ধরন
- বিভিন্ন ধরনের এমন অনেক খেলা রয়েছে যেগুলো একইসঙ্গে আনন্দদায়ক ও শিক্ষামূলক হতে পারে।
- ভাষা, সংখ্যা, বস্তু, নাটক ও সঙ্গীত বিষয়ক খেলাগুলো শিশুদের নিরাপদ ও আনন্দদায়ক উপায়ে নতুন কিছু শেখার এবং নিজেদের প্রকাশ করার সুযোগ করে দেয়।
নড়াচড়া সংক্রান্ত খেলা
- আপনার শিশুদের পছন্দের গানে সঙ্গে একটি নাচের কোরিওগ্রাফ তৈরি করুন। একজন নাচের একটি মুদ্রা করে দেখাবে এবং বাকিরা অনুকরণ করবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেকই নেতৃত্বের সুযোগ পাবে।
- কে সবচেয়ে বেশিবার পায়ের আঙুল স্পর্শ করতে পারে তার “চ্যালেঞ্জ” ছুঁড়ে দিন – এক মিনিটের মধ্যে জাম্পিং জ্যাকস, উইন্ডমিলের মাধ্যমে পায়ের আঙুলের স্পর্শ করা।
- একে অপরের “আয়না” হয়ে যান – মুখের অভিব্যক্তি, নড়াচড়া, শব্দ অনুকরণ করুন। একজন নেতা হিসেবে শুরু করতে পারেন এবং পর্যায়ক্রমে অন্যরাও নেতৃত্বে ভূমিকায় আসার সুযোগ পাবে। আবার কখনো কোনো নেতা ছাড়াই এটা চেষ্টা করে দেখুন!
- বরফ নাচ: গান বাজবে বা কেউ একজন গান গাইতে থাকবে এবং সবাই নাচতে থাকবে। যখন গান থেমে যাবে তখন সবাইকে অবশ্যই স্থির হয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে সবার শেষে যে নাচ থামাবে সে পরবর্তী রাউন্ডে বিচারকের দায়িত্ব পালন করবে।
- প্রাণী নৃত্য: উপরেরটির মত একইরকম, তবে এক্ষেত্রে গান যখন থেমে যাবে, তখন কোনও একটি প্রাণীর নাম বলতে হবে এবং প্রত্যেককে সেই প্রাণীর মতো অভিনয় করে দেখাতে হবে।
গল্প বলা
- আপনার নিজের শৈশব থেকে আপনার শিশুদের একটি গল্প বলুন।
- আপনার শিশুদের একটি গল্প বলতে বলুন।
- “অনেককাল আগে...” শব্দগুলো দিয়ে একটি গল্প বানান। প্রত্যেকে এই গল্পে একটি করে বাক্য যুক্ত করবে।
- প্রিয় একটি গল্প বা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের অনুকরণ করুন – বড় শিশুরা দায়িত্ববোধ শেখার সঙ্গে সঙ্গে এমনকি ছোটদের নির্দেশনাও দিতে পারে।
বিষয়বস্তু পরিবর্তন করুন
- ঝাড়ু বা স্কার্ফের মতো গৃহস্থালী সামগ্রী প্রতিদিন খেলার জন্য মজাদার উপকরণে পরিণত হতে পারে।
- ঘরের মাঝখানে একটি বস্তু রাখুন এবং যখনই কারো মাথায় নতুন কোনো বুদ্ধি আসবে, তখনই সে লাফিয়ে বস্তুটির কাছে যাবে এবং এই বস্তুটি দিয়ে কী বানানো যায় তা বাকিদের দেখাবে।
- উদাহরণস্বরূপ, একটি ঝাড়ু একটি ঘোড়া বা একটি মাইক্রোফোন বা এমনকি একটি গিটার হতে পারে!
স্মৃতির খেলা
- প্রথম জন বলবে, “যখন কোভিড-১৯ লকডাউন শেষ হবে, আমি যাব ... (উদাহরণস্বরূপ, পার্কে)"।
- দ্বিতীয় জন প্রথমজনের সঙ্গে যোগ করবে, "যখন কোভিড-১৯ লকডাউন শেষ হবে, আমি পার্কে যাব এবং … (যেমন, আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করবো)”।
- প্রত্যেকেই কোভিড-১৯ লকডাউন শেষ হওয়ার পর আনন্দদায়ক সমস্ত কিছুর কথা ভাবার চেষ্টা করবে এবং আগের জনের কথার সঙ্গে যুক্ত করবে।
গান গাওয়া
- আপনার শিশুকে গান গেয়ে শোনালে এটি তার ভাষা শেখায় সহায়ক হবে।
- একটি গান বাজান বা গেয়ে শোনান এবং প্রথম যে এটি সঠিকভাবে অনুমান করতে পারবে সে হবে পরবর্তী নেতা।
- হাত ধোয়া বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্পর্কে একটি গান বানান। এর সঙ্গে নাচের মুদ্রা যুক্ত করুন!
৬. কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের সময়ে শিশুদের অনলাইনে নিরাপদ রাখা
শিশু এবং কিশোর বয়সীরা এখন অনলাইনে অনেক বেশি সময় ব্যয় করছে। সংযুক্ত থাকা তাদের কোভিড-১৯ এর প্রভাব কমাতে সহায়তা করে এবং তাদের জীবন চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয় ... তবে একইসঙ্গে এটি ঝুঁকি ও বিপদগুলোকেও উপস্থাপন করে।
এই টিপসগুলো ডাউনলোড করুন [পিডিএফ ফরম্যাট]।
অনলাইনে ঝুঁকিসমূহ
- প্রাপ্তবয়স্করা যৌন উদ্দেশ্যে সামাজিক যোগাযোগাম মাধ্যম, অনলাইন গেমস ও বার্তা আদান প্রদানের প্ল্যাটফর্মে শিশুদের টার্গেট করে।
- ক্ষতিকারক বিষয়বস্তু -- সহিংসতা, নারী বিদ্বেষ, বিদেশিদের প্রতি অহেতুক ভয় বা ঘৃণা, আত্মহত্যা ও আত্ম-ক্ষতিতে প্ররোচণা, ভুল তথ্য ইত্যাদি।
- কিশোর বয়সীদের নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য ও যৌন সংক্রান্ত ছবি বা ভিডিও শেয়ার করা।
- সহপাঠী বা সহযোগী এবং অপরিচিতদের কাছ থেকে অনলাইনে উৎপীড়নের শিকার হওয়া।
অনলাইনে আপনার শিশুদের সুরক্ষার জন্য প্রযুক্তিগত সমাধান
- ‘প্যারেন্টাল কন্ট্রোল’ চালু করুন।
- আপনার ব্রাউজারে ‘সেইফসার্চ’ অপশনটি চালু করুন।
- অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন ও গেমগুলোতে কঠোর গোপনীয়তা সেটিংস চালু করুন।
- ওয়েবক্যামগুলো যখন ব্যবহার না হয় তখন সেগুলোকে ঢেকে রাখুন।
অনলাইনে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ অভ্যাস তৈরি করুন
- স্বাস্থ্যকর উপায়ে ডিভাইস ব্যবহার বিষয়ে পারিবারিক প্রযুক্তি চুক্তি তৈরিতে আপনার শিশু বা কিশোর বয়সী সন্তানকে সম্পৃক্ত করুন।
- আপনার বাড়িতে ডিভাইস-মুক্ত স্থান ও সময় তৈরি করুন (খাওয়া, ঘুমানো এবং খেলাধুলা, স্কুলের কাজকর্ম)।
- ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে ব্যক্তিগত রাখতে হবে তা শিখতে আপনার শিশুদের সহায়তা করুন, বিশেষ করে অপরিচিতদের কাছ থেকে, কেননা এমন কিছু মানুষ আছে যারা নিজেদের সম্পর্কে অনলাইনে যা বলে তা সত্যি নয়!
- আপনার শিশুদের মনে করিয়ে দিন যে অনলাইনে একবার যা যায় তা অনলাইনেই থেকে যায় (বার্তা, ছবি ও ভিডিও)।
আপনার শিশু বা কিশোর বয়সী সন্তানের সঙ্গে অনলাইনে সময় ব্যয় করুন
- ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া, গেমস ও অ্যাপ্লিকেশন একসঙ্গে দেখুন।
- কীভাবে অনুপযুক্ত কনটেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে হয় সে বিষয়ে আপনার কিশোর বয়সী সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন (নীচে দেখুন)।
- কমন সেন্স মিডিয়াতে বিভিন্ন বয়সীদের জন্য অ্যাপস, গেমস ও বিনোদন বিষয়ে দারুণ কিছু পরামর্শ রয়েছে।
যোগাযোগ উন্মুক্ত রাখার মাধ্যমে আপনার শিশুদের সুরক্ষিত রাখুন
- আপনার শিশুদের বলুন যে তারা যদি অনলাইনে এমন কোনো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয় যা তাদের জন্য বিরক্তি, অস্বস্তি বা ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, সেক্ষেত্রে তারা বিষয়টি নিয়ে আপনার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারে এবং আপনি এ জন্য রাগ করবেন না বা তাদের শাস্তি দেবেন না।
- বিপদের লক্ষণগুলো সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। আপনার শিশুটি সবকিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখছে কিনা, সে বিরক্ত হচ্ছে কিনা, কিছু গোপন করছে কিনা বা অনলাইনের কার্যক্রম নিয়ে আচ্ছন্ন কিনা তা খেয়াল রাখুন।
- ইতিবাচক সমর্থন এবং উৎসাহের মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক ও উন্মুক্ত যোগাযোগ তৈরি করুন।
- মনে রাখবেন, প্রতিটি শিশুই অনন্য এবং যোগাযোগের জন্য তারা ভিন্ন ভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে পারে। আপনার সন্তানের প্রয়োজনের সঙ্গে আপনার বার্তাটি সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে সময় নিন। উদাহরণস্বরূপ, শিখতে সমস্যা হয় – এমন শিশুদের সহজ বিন্যাসে সাজানো তথ্যের প্রয়োজন হতে পারে।
৭. বাড়িতে পারিবারিক সম্প্রীতি
যখন আমরা শান্তিপূর্ণ ও ভালোবাসার সম্পর্কের আদর্শ হই, তখন আমাদের শিশুরা আরও সুরক্ষিত এবং নিজেদের আরও বেশি ভালোবাসা-সিক্ত বোধ করে। ইতিবাচক ভাষা, সক্রিয়ভাবে কথা শোনা এবং সহানুভূতি এই চাপের সময়ে শান্তিপূর্ণ ও সুখী পারিবারিক পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করে।
এই টিপসগুলো ডাউনলোড করুন [পিডিএফ ফরম্যাট]।
আমরা আমাদের শিশুদের জন্য আদর্শ
- আমরা অন্যদের সামনে কীভাবে কথা বলি এবং আচরণ করি তা তাদের আচরণের ওপরেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলে!
- পরিবারে প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের – সবার সঙ্গেই সদয়ভাবে কথা বলার চেষ্টা করুন।
- পরিবারের প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে খারাপ সম্পর্ক বা যোগাযোগের ঘাটতি শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
- আমরা আমাদের শিশুদের জন্য শান্তিপূর্ণ, ভালোবাসাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির জন্য যত বেশি চেষ্টা করবো, আমাদের শিশুরা নিজেদের তত বেশি সুরক্ষিত এবং ভালোবাসায় সিক্ত মনে করবে।
ইতিবাচক ভাষা ব্যবহার করুন। এটি কাজ করে!
- আপনার পছন্দ নয় এমন কাজ থেকে তাদের বিরত থাকতে না বলে বরং তারা কোনো কাজ করলে আপনার ভালো লাগবে সেটা তাদের বলুন: “চিৎকার করা বন্ধ করো” এভাবে না বলে বরং “দয়া করে আরও আস্তে কথা বলো” এভাবে বলতে চেষ্টা করুন।
- কারো প্রশংসা করা হলে ওই ব্যক্তির নিজেকে সঠিকভাবে মূল্যায়িত এবং নিজের সম্পর্কে ভালো বোধ করে। “রাতের খাবারের পর সবকিছু পরিষ্কার করার জন্য ধন্যবাদ”, বা “শিশুর দেখাশোনা করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ” এ ধরনের সহজ কিছু শব্দ বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি করতে পারে।
পরিবার হিসেবে একসঙ্গে করার মতো দারুণ কিছু কাজ
- প্রতিদিন একটি পরিবারের কার্যক্রম কী হবে তা নির্ধারণের জন্য একেকদিন একেকজনকে সুযোগ দিন।
- আপনার সঙ্গী এবং বাড়ির অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে দারুণ কিছু সময় কাটানোর উপায়ও খুঁজে বের করুন!
একজন সহানুভূতিশীল সক্রিয় শ্রোতা হোন
- অন্যরা যখন আপনার সঙ্গে কথা বলে তখন তাদের শুনুন।
- মন খোলা রাখুন এবং তাদের বুঝতে দিন যে তারা যা বলছে তা আপনি শুনছেন।
- জবাব দেওয়ার আগে আপনি যা শুনেছেন তার সারাংশ তৈরিতে এটি আপনাকে সহায়তা করতে পারে: “আমি আপনাকে যা বলতে শুনেছি তা হলো...।”
কাজ ভাগ করে নিন
- শিশুদের এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের দেখাশোনা করা কঠিন, তবে দায়িত্বগুলো ভাগ করে নিলে এটা অনেক সহজ।
- ঘরের কাজকর্ম, শিশুর যত্ন এবং অন্যান্য কাজগুলো পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে নেওয়ার চেষ্টা করুন।
- আপনার পরিবারের অন্য প্রাপ্তবয়স্কদের কখন সময় দেবেন আর কখন দেবেন না তার একটি সময়সূচি তৈরি করুন।
- আপনি যখন ক্লান্তি বা চাপ বোধ করবেন তখন আরেকজনের সাহায্য চাওয়ার বিষয়টি ঠিক আছে, কারণ এতে আপনি বিরতি নিতে পারবেন।
আপনি কি চাপ অনুভব করছেন বা রাগ হচ্ছেন?
- নিজেকে ১০ সেকেন্ডের একটি বিরতি দিন। আস্তে আস্তে পাঁচবার শ্বাস নিন এবং ছাড়ুন। তারপরে শান্তভাবে সাড়া দেওয়ার চেষ্টা করুন। লাখ লাখ বাবা-মার মতে এই পদ্ধতিটি অনেক বেশি সহায়ক!
- কথার পিঠে কথা বাড়তে থাকলে আপনি বিরতি দিন এবং সম্ভব হলে আপনি অন্য ঘরে বা ঘরের বাইরে যান।
“যখন আমরা রেগে যাই” এবং “শান্ত থাকুন ও চাপ সামাল দিন” সম্পর্কিত আরও তথ্য দেখুন।
৮. শান্ত থাকুন এবং কোভিড-১৯ এর চাপ সামাল দিন
এটি একটি চাপযুক্ত সময়। নিজের যত্ন নিন, যাতে আপনি আপনার শিশুদের সহায়তা করতে পারেন।
এই টিপসগুলো ডাউনলোড করুন [পিডিএফ ফরম্যাট]।
আপনি একা নন
লাখ লাখ মানুষও আমাদের মতো ভয়ে ও উৎকণ্ঠায় আছে। আপনার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে পারেন এমন কাউকে খুঁজে বের করুন। তাদের কথা শুনুন। এমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এড়িয়ে চলুন যা আপনাকে আতঙ্কিত করে তোলে।
বিরতি নিন
আমাদের সবারই মাঝে মাঝে বিরতি দরকার। আপনার শিশুরা যখন ঘুমাচ্ছে, নিজের জন্য আনন্দদায়ক বা আরামদায়ক কিছু করুন। আপনি করতে পছন্দ করেন এমন কিছু স্বাস্থ্যকর কার্যক্রমের তালিকা তৈরি করুন। আপনি এর যোগ্য!
আপনার শিশুদের কথা শুনুন
মন খোলা রাখুন এবং আপনার শিশুদের কথা শুনুন। পুনঃ পুনঃ সমর্থন ও আস্থার জায়গা হিসেবে আপনার শিশুরা আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। আপনার শিশুদের কেমন লাগছে তা যখন তারা জানায়, তখন তাদের কথা মন দিয়ে শুনুন। তাদের কেমন লাগছে সেটা বোঝার চেষ্টা করুন এবং তাদের স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করুন।
বিরতি নিন
এখানে এক মিনিটের আরামদায়ক কার্যকলাপ রয়েছে, যা আপনি যখনই চাপ বা উদ্বেগ অনুভব করবেন তখনই করতে পারেন।
ধাপ ১: শুরু করা
- আরামদায়কভাবে বসুন, ফ্লোরে সমানভাবে আপনার পা রাখুন, আপনার হাতগুলো কোলে বিশ্রামে থাকবে।
- আপনি যদি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তবে চোখ বন্ধ করে রাখুন।
ধাপ ২: ভাবুন, অনুভব করুন, শরীর
- নিজেকে প্রশ্ন করুন, “আমি এখন কী ভাবছি?”
- আপনার চিন্তাগুলোকে লক্ষ্য করুন। চিন্তাগুলো নেতিবাচক নাকি ইতিবাচক তা লক্ষ্য করুন।
- আপনি কী ধরনের আবেগ অনুভব করছেন তা লক্ষ্য করুন। আপনার অনুভূতি আনন্দের কিনা তা লক্ষ্য করুন।
- আপনার শরীরে কেমন অনুভব হচ্ছে তা লক্ষ্য করুন। কষ্ট বা উদ্বেগ বাড়ানোর মতো কোনো বিষয় আছে কিনা লক্ষ্য করুন।
ধাপ ৩: আপনার শ্বাসপ্রশ্বাসের ওপর লক্ষ্য রাখুন
- আপনি যখন শ্বাস নিচ্ছেন এবং ছাড়ছেন তখন এর শব্দ শুনুন।
- আপনি আপনার পেটের ওপর একটি হাত রাখতে পারেন এবং প্রতিটি শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে এর ওঠানামা অনুভব করতে পারেন।
- আপনি নিজের উদ্দেশ্যে বলতে পারেন “এটা ঠিক আছে। যাই হোক না কেন, আমি ঠিক আছি।”
- তারপর কিছুক্ষণ শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ শুনুন।
ধাপ ৪: ফিরে আসা
- আপনার পুরো শরীরে কেমন অনুভব হচ্ছে তা লক্ষ্য করুন।
- ঘরে যেসব শব্দ হয় সেগুলো শুনুন।
ধাপ ৫: প্রতিফলন
- ভাবুন ‘আমার কি আদৌ অন্যরকম লাগছে?’।
- আপনি যখন তৈরি হবেন তখন চোখ খুলুন। মন খোলা রাখুন এবং আপনার শিশুদের কথা শুনুন। পুনঃ পুনঃ সমর্থন ও আস্থার জায়গা হিসেবে আপনার শিশুরা আপনার দিকেই তাকিয়ে। আপনার শিশুদের কেমন লাগছে তা যখন তারা জানায়, তখন তাদের কথা মন দিয়ে শুনুন। তাদের কেমন লাগছে সেটা বোঝার চেষ্টা করুন এবং তাদের স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করুন।
আপনার শিশু যদি আপনাকে বিরক্ত করে বা কোনো ভুল করে ফেলে সেক্ষেত্রে একটি বিরতি নেওয়া কার্যকর হতে পারে। এটি আপনাকে আরও শান্ত হওয়ার সুযোগ করে দেবে। এমনকি কয়েকটি গভীর নিঃশ্বাস বা নীচের মেঝের অনুভূতির সঙ্গে সংযুক্ত হওয়াও একটি পার্থক্য তৈরি করতে পারে। আপনি আপনার শিশুদের সঙ্গে নিয়েও বিরতি নিতে পারেন!
৯. খারাপ আচরণ
সব শিশুরাই দুর্ব্যবহার করে। শিশুরা যখন ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত, ভীত থাকে বা স্বাধীন হতে শেখে তখন এটাই স্বাভাবিক। আর বাড়িতে আটকে থাকলে তারা আমাদের পাগল কর তুলতে পারে।
এই টিপসগুলো ডাউনলোড করুন [পিডিএফ ফরম্যাট]।
নতুন দিকনির্দেশনা দিন
- শুরুতেই শিশুর খারাপ আচরণসমূহ শনাক্ত করুন এবং আপনার শিশুর মনোযোগ খারাপ থেকে ভালো আচরণের দিকে ফিরি আনুন।
- শুরু করার আগেই এটি বন্ধ করুন! তারা যখন অস্থির হয়ে উঠতে শুরু করে, তখন আপনি মজাদার বা আনন্দদায়ক কিছু একটা দিয়ে তাদের ভুলিয়ে রাখতে পারেন: “চলো, একসঙ্গে একটি খেলা খেলি!”
বিরতি নিন
চিৎকার করতে ইচ্ছা করছে? নিজেকে ১০ সেকেন্ডের একটি বিরতি দিন। আস্তে আস্তে পাঁচবার শ্বাস নিন এবং ছাড়ুন। তারপরে শান্তভাবে সাড়া দেওয়ার চেষ্টা করুন। লাখ লাখ বাবা-মার মতে এই পদ্ধতিটি অনেক বেশি সহায়ক!
ফলাফল ব্যবহার করুন
ফলাফল বা পরিণাম আমাদের শিশুদের তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য দায়বদ্ধ হতে শেখাতে সহায়তা করে। এগুলো তাদের শৃঙ্খলাও শেখায়। এটি মারধর বা চিৎকার-চেঁচামেচির চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর।
- আপনার শিশুকে তার কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে দেওয়ার আগে তাদের আপনার নির্দেশনা অনুসরণের সুযোগ দিন।
- ফল ঘোষণার সময় শান্ত থাকার চেষ্টা করুন।
- আপনার সন্তানকে যে ফল ভোগ করতে হবে তাতে আপনার নজরদারি নিশ্চিত করুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনার কিশোর বয়সী সন্তানের ফোনটি এক সপ্তাহের জন্য কেড়ে নেওয়ার বিষয়টি বাস্তবায়ন করা বেশ কঠিন। তবে এক ঘণ্টার জন্য এটি নিয়ে নেওয়ার অনেক বেশি বাস্তবসম্মত।
- ফল ভোগ করা শেষ হয়ে গেলে আপনার শিশুকে ভালো কিছু করার সুযোগ দিন এবং এর জন্য তাদের প্রশংসা করুন।
সন্তানের সঙ্গে একা সময় কাটানো, ভালো আচরণের জন্য প্রশংসা করা এবং ধারাবাহিক রুটিন খারাপ আচরণগুলি ধীরে ধীরে কমিয়ে কমিয়ে।
আপনার শিশু ও কিশোর বয়সী সন্তানদের দায়িত্বের সঙ্গে কিছু সহজ কাজ দিন। শুধু নিশ্চিত করুন যে এটি এমন কোনো কাজ যা তারা করতে সক্ষম। আর তারা যখন এটি করবে তখন তাদের প্রশংসা করুন!
১০. যখন আমরা রেগে যাই
আমরা আমাদের শিশুদের এবং কিশোর-কিশোরীদের ভালোবাসি, তবে কোভিড-১৯এর ফলে সৃষ্ট অর্থকড়ি এবং লকডাউনের চাপ আমাদের রাগিয়ে তুলতে পারে। অন্যদের আঘাত দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা কীভাবে নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারি এবং আমাদের রাগ সামাল দিতে পারি সে বিষয়ে এখানে কিছু পরামর্শ রয়েছে।
মানসিক বিজ্ঞান দেখায় যে, আপনি যদি নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করেন বা ইতিবাচক কিছু করেন, তবে আপনি আপনার সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করতে পারেন। এটাই প্রকৃত সাফল্য!
এই টিপসগুলো ডাউনলোড করুন [পিডিএফ ফরম্যাট]।
উৎস মুখেই নদীর প্রবাহ বন্ধ করুন
- বারবার একই জিনিস করা হলে তা সাধারণত আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং আমাদের রাগিয়ে তোলে।
- কোন বিষয়টি আপনাকে রাগিয়ে তোলে? কখন এটা হয়? আপনি সাধারণত কীভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন?
- এর শুরু হওয়া ঠেকান। আপনি ক্লান্ত থাকা অবস্থায় যদি এটি ঘটে, তাহলে কিছু সময় ঘুমিয়ে নিন বা বিশ্রাম করুন। যদি এই রাগের উৎস হয় ক্ষুধা, তাহলে আপনার খাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করুন। যদি নিঃসঙ্গ অনুভব করেন, তবে কারও সমর্থন বা সহায়তা চান।
- নিজের যত্ন নিন। ধারণার জন্য “বিরতি নিন” এবং “চাপ সামাল দেওয়া” টিপসগুলো দেখুন।
বিরতি নিন
- আপনি যখন রেগে যেতে শুরু করেন,তখন মাথা ঠান্ডা করার জন্য ২০ সেকেন্ডের একটি বিরতি নিন। আপনি কথা বলার বা নড়াচড়া শুরুর আগে ধীরে ধীরে ৫ বার শ্বাস নিন এবং ছাড়ুন।
- আপনার আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে ১০ মিনিটের জন্য অন্য কোথাও যান। আপনার যদি নিরাপদ বহিরাঙ্গন থাকে, তবে বাইরে যান।
- যদি এমন হয় যে শিশুর কান্না থামছেই না, তবে তাকে নিরাপদে চিৎ করে শুইয়ে দিয়ে তার কাছ থেকে কিছুক্ষণ দূরে থাকুন। আপনাকে শান্ত করতে কাউকে ডাকুন। প্রতি ৫-১০ মিনিট অন্তর শিশুদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করুন।
নিজের যত্ন নিন
- আমাদের সবার সংযুক্ত থাকা দরকার। প্রতিদিন বন্ধু, পরিবার এবং আপনার নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকা অন্য সহায়ক ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলুন।
- মদ্যপান কমিয়ে দিন বা মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন, বিশেষ করে যখন শিশুরা জেগে থাকে সে সময়টাতে।
- আপনার কাছে কি এমন অস্ত্র বা জিনিস রয়েছে যা অন্যকে আঘাত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে? এগুলোকে তালাবদ্ধ করে রাখুন, লুকিয়ে রাখুন বা বাড়ির বাইরে রেখে আসুন।
- শিশুদের জন্য বাড়িতে থাকা যদি নিরাপদ না হয়, তবে সহায়তার পাওয়ার জন্য বা কিছু সময় অন্য কোথাও থাকার জন্য সে বাইরে যেতে পারে।
কোভিড-১৯ সংকট চিরদিনের জন্য নয় – আমাদের কেবল এখন এই সমস্যা থেকে পার পেতে হবে ... একদিন একদিন করে।
১১. অর্থনৈতিক চাপের সময়ে পারিবারিক বাজেট করা
কোভিড-১৯-এর কারণে লাখ লাখ মানুষ আর্থিক দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে । এটি আমাদের মাঝে ক্লান্তি, রাগ ও বিভ্রান্তির অনুভূতি এনে দিতে পারে। শিশু বা কিশোর-কিশোরীদের বিভিন্ন জিনিস চাওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের সঙ্গে তর্ক হতে পারে। তবে আমরা এমন কিছু করতে পারি যা আর্থিক চাপ মোকাবিলায় সহায়তা করে।
এই টিপসগুলো ডাউনলোড করুন [পিডিএফ ফরম্যাট]।
পারিবারিক বাজেট তৈরিতে শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের সম্পৃক্ত করুন
- এমনকি আর্থিক চাপের সময়েও আমরা আমাদের সীমিত অর্থ কোথায় ব্যয় করবো, সেই সিদ্ধান্ত আমরা যে প্রক্রিয়ায় নেই সেটাই হচ্ছে বাজেট।
- একসঙ্গে বাজেট তৈরি করা হলে তা শিশুদের বুঝতে সাহায্য করে যে, কঠিন সময়ে আমাদের সবার কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।
- এটি পরিবারগুলোর মাসের শেষ দিকের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে অর্থ মজুদ রাখতে এবং কম ঋণ নিতে সহায়তা করে।
আমরা এখন কী খরচ করবো?
- এক টুকরো কাগজ (বা পুরাতন সংবাদপত্র অথবা কার্ডবোর্ডের বাক্স) এবং একটি কলম নিন।
- প্রতি মাসে আপনি ও আপনার পরিবার যেসব জিনিসের পেছনে অর্থ ব্যয় করেন সেগুলোর ছবি আঁকুন।
- প্রতিটি সামগ্রীর জন্য কেমন খরচ হয় তা সংশ্লিষ্ট ছবির পাশে লিখুন।
- প্রতি মাসে খরচের জন্য আপনার কী পরিমাণ অর্থ থাকে তা উল্লেখ করুন।
প্রয়োজন ও চাহিদা সম্পর্কে কথা বলুন
- প্রয়োজন: আপনার পরিবারের বেঁচে থাকার জন্য কোন জিনিসগুলো গুরুত্বপূর্ণ বা আবশ্যক? (যেমন খাবার, হাত ধোয়ার সাবান, পরিবারের অসুস্থ বা শারীরিকভাবে অক্ষম সদস্যের প্রয়োজনসমূহ)
- চাহিদা: কোন জিনিসগুলো থাকলে ভালো, কিন্তু অপরিহার্য নয়?
- কোন জিনিসগুলোতে পেছনে কম ব্যয় করার চেষ্টা করা যায় তা নিয়ে আপনার সন্তানদের সঙ্গে আলোচনা করুন।
আপনার নিজের বাজেট তৈরি করুন
- একটি ব্যাগ ভর্তি পাথর বা কোনো কিছুর অনেকগুলো টুকরো নিন। এগুলো এই মাসের জন্য আপনার খরচের অর্থ।
- একটি পরিবার হিসাবে আপনি সিদ্ধান্ত নিন কোন জিনিসের পেছনে ব্যয় করবেন এবং সেই জিনিসের ছবির ওপর পাথরগুলো রাখুন।
- আপনি যদি ভবিষ্যতের জন্য বা অন্য কোনো জরুরি অবস্থার জন্য এমনকি সামান্য পরিমাণেও সঞ্চয় করতে পারেন তবে তা হবে দারুণ ব্যাপার!
আপনি কোনো সহায়তা পাবেন কিনা তা যাচাই দেখুন
- আপনার সরকার হয়তো কোভিড-১৯ চলাকালে পরিবারগুলোকে অর্থ সহায়তা বা খাবারের প্যাকেট দিচ্ছে।
- আপনার কমিউনিটির কোনো স্থান থেকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে কিনা তা জানার চেষ্টা করুন।
১২. কোভিড-১৯ এর সময়ে জনবহুল বাড়ি ও কমিউনিটিগুলোতে সন্তানের যত্ন নেওয়া
আপনি যখন জনবহুল পরিবেশে থাকবেন তখন আপনার পরিবারকে সুস্থ ও কোভিড-১৯ থেকে নিরাপদ রাখা আরও কঠিন মনে হতে পারে। তবে এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা করার মাধ্যমে আপনার পরিবারের জন্য এ বিষয়টি সহজ করে তুলতে পারেন।
এই টিপসগুলো ডাউনলোড করুন [পিডিএফ ফরম্যাট]।
আপনি যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন
- আপনার বাসস্থানে বারবার যাওয়া-আসা করা লোকজনের সংখ্যা যতটা সম্ভব সীমিত করুন।
- শুধুমাত্র খাবার সংগ্রহ বা চিকিৎসার মতো অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া আপনার পরিবার বা এলাকা ছেড়ে যাবেন না।
শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে আপনার সন্তানদের সহায়তা করুন
- আপনার সন্তানদের বুঝিয়ে দিন যে অন্যদের কাছ থেকে সাময়িকভাবে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে নিজেদের এবং কমিউনিটিকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে তারা।
- তারা যখন অন্যদের কাছ থেকে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করে তখন তাদের প্রতি বাড়তি ইতিবাচক মনোযোগ দিন।
হাত ধোয়া ও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়গুলোকে আনন্দদায়ক করে তুলুন!
- সাবান ও পানি যোগাড় করা কঠিন হতে পারে, তবে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন ভালো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
- যত বেশিবার সম্ভব পরিবারের সব সদস্যের হাত ধুতে অনুপ্রাণিত করুন।
- শিশুরা কীভাবে হাত ধোবে তা একজন আরেকজনকে শেখাতে দিন।
- শিশু তাদের মুখমণ্ডল যাতে স্পর্শ না সে ব্যাপারে তাদেরকে উৎসাহিত করুন।
কাজ ভাগ করে নিন
- আবদ্ধ স্থানে শিশুদের এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের দেখাশোনা করা কঠিন, তবে দায়িত্বগুলো ভাগ করে নিলে এটা অনেক সহজ হবে।
- ঘরের কাজকর্ম, শিশুর যত্ন এবং অন্যান্য কাজগুলো পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে নেওয়ার চেষ্টা করুন।
- আপনার পরিবারের অন্য প্রাপ্তবয়স্কদের কখন সময় দেবেন আর কখন দেবেন না তার একটি সময়সূচি তৈরি করুন।
- আপনি যখন ক্লান্তি বা চাপ বোধ করবেন তখন আরেকজনের সাহায্য চাওয়ার বিষয়টি ঠিক আছে, কারণ এতে আপনি বিরতি নিতে পারবেন।
প্রাত্যহিক শরীরচর্চা
- আপনার আশেপাশে আগে থেকে বসবাস করে না এমন লোকজনের সংস্পর্শ এড়ানোর পাশাপাশি শিশুরা শরীরচর্চার জন্য কী ধরনের কর্মকাণ্ড করতে পারে সে বিষয়ে চিন্তা করতে তাদের উৎসাহিত করুন।
- লাফালাফি করা, নাচা বা বৃত্তাকারে দৌড়ানো আনন্দদায়ক হতে পারে!
বিরতি নিন
- আপনি যে চাপ ও আবেগ অনুভব করছেন তা সামাল দিতে আপনার নিজের জন্য হয়তো আলাদা করে তেমন সময় বের করা সম্ভব নাও হতে পারে।
- আপনি কখন খুব চাপ অনুভব করছেন বা বিপর্যস্ত বোধ করছেন তা খেয়াল করুন এবং বিরতি নিন ... এমনকি তিনবার গভীরভাবে নিঃশ্বাস নেওয়াও পার্থক্য তৈরি করতে পারে! লাখ লাখ পরিবার জানিয়েছে এই পদ্ধতি কাজে দেয়।
ইতিবাচক থাকা, একটি রুটিনের মধ্যে থাকা এবং যখনই সম্ভব প্রতিটি সন্তানের সঙ্গে আলাদা করে সময় দেয়ার চেষ্টা করলে তা আপনার সন্তানদের আচরণ ও আপনার অনুভূতি সামাল দিতে সহায়ক হতে পারে।
১৩. প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতিপালন
এই কঠিন ও অনিশ্চিত সময়ে প্রতিবন্ধী কিংবা শারীরিকভাবে অক্ষম শিশুসহ সব শিশুর ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, যত্ন দরকার এবং তাদেরকে সময় দেওয়া প্রয়োজন।
এই টিপসগুলো ডাউনলোড করুন [পিডিএফ ফরম্যাট]।
আপনার শিশুকে নিরাপদ রাখুন
- আপনার সন্তানকে ঘরের ভেতরে এবং বাইরে – উভয় পরিমণ্ডলেই যথাসম্ভব সক্রিয় থাকতে সহায়তা করার সময় কোভিড-১৯ এর স্থানীয় নির্দেশিকা কঠোরভাবে অনুসরণ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো।
- কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহনের ক্ষেত্রে আপনার এলাকার স্থানীয় সহায়তা দল কোন সাহায্য করছে কিনা তা জেনে নিন।
- জরুরি যোগাযোগের নম্বরগুলো এমন জায়গায় রাখুন যেখানে সহজেই আপনি এগুলো দেখতে পারবেন, যেমন ফ্রিজের দরজায় লাগিয়ে রাখুন।
সম্ভব হলে সাহায্য চান
- আপনার কাজের চাপ পরিবারের অন্য বড় সদস্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিন।
- আপনি একা নন! আপনার পরিস্থিতি বোঝে – এমন লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। আপনার চ্যালেঞ্জ ও সাফল্যগুলো তাদের সঙ্গে শেয়ার করুন।
- এই সময়ে মানসিক চাপ অনুভব করা এবং হতাশাগ্রস্ত হওয়া ও ভয় পাওয়া স্বাভাবিক।
- নিজের প্রতি সদয় হোন এবং যখন আপনার প্রয়োজন হবে একটি বিরতি নিন! আরও পরামর্শের জন্য “যখন আমরা রেগে যাই” ও “শান্ত থাকুন এবং চাপ সামাল দিন” অংশগুলো দেখুন।
সমর্থক, সহানুভূতিশীল এবং স্নেহময় হোন
- আপনার সন্তান সাধারণত যে ধরনের সমর্থন পায়, তা তারা নাও পেতে পারে এবং এটি তাদের মধ্যে বাড়তি চাপ, উদ্বেগ ও হতাশা তৈরি করতেপারে।
- আপনার সন্তান যাতে নিজেকে গ্রহণযোগ্য এবং পছন্দনীয় হিসেবে ভাবে সেজন্য তাকে সহায়তায় শারীরিক ও মৌখিক সমর্থন দিন।
- ইতিবাচক শারীরিক ভাষা, অঙ্গভঙ্গি ও শব্দচয়ন বড় পার্থক্য তৈরি করে!
আপনার সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ বা সংযোগ স্থাপন
- আপনার সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ বা আলাপচারিতার সময় তার স্তরে নেমে আসুন।
- আপনার সন্তানের চোখে চোখ রাখুন এবং তার সঙ্গে ইতিবাচক আচরণ বজায় রাখুন।
- আপনার শিশুকে কথোপকথনের সুযোগ দেওয়ার জন্য সময় নিন।
- পর্যবেক্ষণ করুন, শুনুন এবং নিশ্চিত হোন যে আপনি আপনার সন্তানকে বুঝতে পেরেছেন।
ইতিবাচক মনোভাবকে জোরালো করুন!
- প্রশংসার সঙ্গে শক্তির জায়গাগুলোকে জোরালো করুন এবং তারা যা করতে পারে না সেগুলো তুলে ধরার পরিবর্তে তাদের সক্ষমতাকে উৎসাহিত করুন।
- শিশুদের কেবল তখনই সহায়তা করুন যখন এটি তাদের প্রয়োজন হয়। খুব বেশি সহায়তা তাদের স্বাধীন হয়ে ওঠার সুযোগকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং তারা সব সময়ই সহায়তা পেতে থাকবে – এমন ধারণা তাদের মাঝে তৈরি হতে পারে।
রুটিন জোরদার করুন
- রুটিন শিশুদের সুরক্ষিত এবং নিরাপদ বোধ করতে সহায়তা করে। আরও তথ্যের জন্য “গোছালো হওয়া” অংশটি দেখুন।
- আপনার সন্তানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ – এমন কার্যক্রম সম্বলিত একটি রুটিন তৈরি করুন এবং এতে তাদের পছন্দের কিছু কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করুন।
- আপনার শিশুকে ফোন চ্যাট, কার্ড লেখা বা ছবি আঁকার মাধ্যমে বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে সহায়তা করুন।
- আপনার সন্তানকে কাজের ক্ষেত্রে বিকল্প বাছাইয়ের সুযোগ দিন, যাতে বিষয়টি যে তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে – এমন ধারণা তাদের মধ্যে তৈরি হয়। এটি একইসঙ্গে আত্মবিশ্বাসও বাড়ায়।
- যেসব শিশুর সহজ ভাষা ও সুস্পষ্ট নির্দেশাবলী এবং কথা না বলে যোগাযোগ স্থাপন করা প্রয়োজন তাদের ক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহার করুন (উদাহরণস্বরূপ: অঙ্গভঙ্গি, ছবি এবং ভিজ্যুয়াল সহায়তা)।
১৪. কিশোর-কিশোরিদের প্রতিপালন
কিশোর-কিশোরীরা স্কুল, বন্ধু ও তাদের সামাজিক জীবনের অভাব বোধ করতে পারে। তারা যাতে স্বাধীনভাবে নিজেদের মত প্রকাশ করতে পারে সে জন্য তাদের বাড়তি সমর্থন ও সুযোগ প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ।
এই টিপসগুলো ডাউনলোড করুন [পিডিএফ ফরম্যাট]।
আপনার কিশোর বয়সী সন্তানের সঙ্গে সময় কাটান
- বন্ধুবান্ধব এবং পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগের সৃজনশীল উপায়গুলোর মধ্যে রয়েছে বার্তা লেখা বা ছবি আঁকা।
- একসঙ্গে পছন্দের একটি খাবার রান্না করুন।
- তাদের প্রিয় গান একসঙ্গে অনুশীলন করুন।
- এমন কিছু নিয়ে কথা বলুন যা তাদের পছন্দ: খেলাধুলা, সঙ্গীত, বিখ্যাত ব্যক্তি এবং বন্ধু।
কোভিড-১৯ সম্পর্কে কথা বলা
- তথ্য অনুসন্ধানে তাদের সম্পৃক্ত করুন এবং তাদের প্রশ্নগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন।
- রেডিও প্রোগ্রাম, সংবাদপত্রের নিবন্ধ বা ইন্টারনেট থেকে কোনো বিষয় সম্পর্কে জেনে সে বিষয়টি পরিবারকে জানানোর কাজ দিন তাদের।
দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া
- কিশোর-কিশোরীরা বাড়তি দায়িত্ব নিতে পছন্দ করে। তাদের একটি বিশেষ কাজ বেছে নেওয়ার অনুমতি দিন।
- দিনের বেলায় এমন একটি সময় বেছে নিন যে সময়ে প্রত্যেকে নিজের ভালো লাগার কোনো একটি বিষয় অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করবে।
- নারী/পুরুষ এবং মেয়ে/ছেলেদের মধ্যে দায়িত্ব সমানভাবে ভাগ করুন।
রুটিন তৈরি করা
- আপনার টিনএজ বয়সী সন্তানকে প্রতিদিনের কার্যসূচি তৈরিতে সম্পৃক্ত করুন।
- একসঙ্গে লক্ষ্য ও পুরষ্কার নির্ধারণ করুন।
- আপনার সন্তান যাতে তার প্রাত্যহিক গৃহস্থালী কাজ ও স্কুলের কাজ করার পাশাপাশি বিশ্রাম করার জন্য সময় পায় তা নিশ্চিত করুন।
কঠিন আচরণের বিষয়টি মোকাবিলা করা
- চ্যালেঞ্জিং আচরণের প্রভাবসমূহের ব্যাপারে কথা বলুন।
- আপনার সন্তানের সঙ্গে বিকল্পসমূহ খুঁজে দেখুন এবং তাদের পরামর্শ প্রদানের সুযোগ দিন।
- পরিষ্কার ও ন্যায্য নিয়ম এবং সীমানা নিয়ে একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিন।
- আপনার সন্তানেরা ভালো আচরণের পাশাপাশি নির্দেশনা অনুসরণ করলে তাদের প্রশংসা করুন।
মহানুভবতা এবং সহমর্মিতার বিষয়গুলো তুলে ধরুন
- যারা অসুস্থ এবং যারা অসুস্থদের যত্ন নিচ্ছেন, তাদের জন্য আদর্শ মহানুভবতা ও সহমর্মিতার নজির স্থাপন করুন।
- বৈষম্যের শিকার হওয়া কারও পাশে দাঁড়ানো বা তাকে খাবার পাঠিয়ে সহায়তা করার মতো কার্যক্রমের মাধ্যমে আপনার টিনএজ বয়সী সন্তানেরা কীভাবে সহাচরনের নজির তৈরি করতে পারে তা নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলুন।
আপনার কিশোর বয়সী সন্তানকে মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করুন
- আপনার কিশোর বয়সী সন্তানেরাও মানসিক চাপের সম্মুখীন হবে – কখনও কখনও আপনার কাছ থেকে না হলেও ভিন্ন কোন সুত্র থেকে।
- তারা কেমন অনুভব করছে তা তাদের প্রকাশ করতে দিন এবং তাদের অনুভূতিগুলোকে গ্রহণ করুন।
- আপনার সন্তানের কথা শোনার এবং কোনো কিছুকে তাদের দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করুন।
- বিশ্রাম এবং আনন্দদায়ক কার্যক্রম একসাথে করুন।
আপনার কিশোর বয়সী সন্তানকে অনলাইনে নিরাপদ রাখুন
- স্বাস্থ্যকর যন্ত্র (ডিভাইস) ব্যবহার সম্পর্কে পারিবারিক প্রযুক্তি চুক্তি তৈরিতে আপনার কিশোর বয়সী সন্তানকে সম্পৃক্ত করুন।
- ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে গোপন রাখতে হয়, বিশেষ করে অপরিচিতদের কাছ থেকে, সে বিষয়ে শিখতে আপনার সন্তানকে সহায়তা করুন।
- আপনার সন্তানকে মনে করিয়ে দিন যে, তারা যখনই অনলাইনে খারাপ কোনো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবে তখনই তারা সে বিষয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারে।
১৫. নবজাত শিশুর প্রতিপালন
ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে ঘরের ভেতরে আমরা অনেক বেশি সময় কাটাই এবং কোভিড-১৯ এটি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সময়ে নিজের এবং আপনার শিশুর জন্য বিচ্ছিন্ন, হতবিহ্বল, উদ্বিগ্ন ও ভীতি অনুভূত করা খুবই স্বাভাবিক।
এই টিপসগুলো ডাউনলোড করুন [পিডিএফ ফরম্যাট]।
কাজ ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে যত্ন নিন
- অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে এবং সংযুক্ত থাকতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ফোন কল এবং আপনার আয়ত্তের মধ্যে থাকা যেকোনো কিছু ব্যবহার করুন।
- অন্যদের সঙ্গে পালাক্রমে শিশুর যত্ন নিন। আপনার নিজের জন্য সময় নিন।
- আপনার শিশু যখন ঘুমায় তখন আপনিও ঘুমান, এতে আপনি শরীরে শক্তি পাবেন।
আপনার শিশুর সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করা
- আপনার শিশু যা করে তা অনুকরণ করে তাকে অনুসরণ করুন।
- তাদের উচ্চারিত আওয়াজ বা শব্দের পুরাবৃত্তি করুন এবং সাড়া দিন।
- আপনি যখন আপনার শিশুর সঙ্গে কথা বলবেন তখন তার নাম ব্যবহার করুন।
- আপনার শিশু যা করছে তা বর্ণনা করার জন্য শব্দ ব্যবহার করুন।
আপনার শিশুর সঙ্গে শেখা
- তাদের পরিবেশকে আনন্দদায়ক করে তুলুন!
- শিশুরা উদ্দীপনামূলক অনেক কিছুর প্রতি সাড়া দেয়।
- আপনার শিশুকে তার ৫টি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে বিশ্বকে বুঝতে দিন!
শিশুরা খেলার মাধ্যমে শেখে!
- আপনি নিজেও শিশুর স্তরে নেমে যান এবং সে যাতে আপনাকে দেখতে ও আপনার কথা শুনতে পারে সেটা নিশ্চিত করুন।
- পিক-এ-বু খেলুন, গান বা ঘুমপাড়ানি গান গেয়ে শোনান, ব্লক বা কাপ সাজিয়ে খেলুন।
- একসঙ্গে গান করুন: হাঁড়ি দিয়ে, ঝুনঝুনি দিয়ে বা কৌটার ভেতর কিছু একটা ভরে শব্দ করে তালে তালে গান করুন।
- আপনার শিশুর সঙ্গে বইগুলো ভাগাভাগি করুন, এমনকি তার বয়স খুব কম হলেও! ছবিতে কী আছে সেটা বর্ণনা করে তাকে বোঝান। আপনার শিশুকে তার সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে বইগুলোকে বুঝতে দিন।
শিশুরা যখন কাঁদে
- অবিলম্বে আপনার শিশুর প্রতি সাড়া দিন।
- আপনার শিশুকে কী কারণে কাঁদছে তা বোঝার চেষ্টা করুন।
- কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হলে বা হালকা দোলানো হলে তা আপনার শিশু শান্ত হতে পারে।
- ঘুমপাড়ানি গান বা মৃদু শব্দের সঙ্গীত বাজানো হলে তা তার জন্য সুখকর হতে পারে।
- শান্ত থাকুন এবং একটু বিরতি নিন! আপনি আপনার শিশুকে নিরাপদ স্থানে চিৎ করে শুইয়ে দিয়ে অন্য কাজ করতে পারেন। তবে প্রতি ৫ থেকে ১০ মিনিট পরপর শিশুটি কী করছে তা খেয়াল রাখুন।
- আপনি যদি মনে করেন আপনার শিশু আঘাতপ্রাপ্ত বা অসুস্থ, তাহলে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীকে ফোন করুন বা তাকে ক্লিনিকে নিয়ে যান।
আপনার শিশুরা শিখছে, তাই তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করুন, তবে বাবা-মা হিসেবে নিজের সঙ্গেও ভালো আচরণ করুন!
- কেবলমাত্র আজ কিছু একটা ঠিকঠাক হয়নি বা আপনি মেজাজ হারিয়েছেন – এগুলো বাবা-মা হিসেবে আপনি কেমন তা নির্ধারণ করে না। আপনি আজ ভালোভাবে যে কাজগুলো করেছেন সেগুলোর কথা মনে করুন, এমনকি এগুলোকে খুব ছোট মনে হলেও।
সন্তানের যত্ন সংক্রান্ত এই টিপসগুলো “প্যারেন্টিং ফর লাইফলং হেল্থ” উদ্যোগ থেকে নেওয়া হয়েছে।