লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছোট পর্দায় ফিরেছে তানজিলা
বাংলাদেশে সমতা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করছে টেলিভিশন সিরিজ ‘ইচ্ছেডানা’

- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
লিঙ্গ বৈষম্যে জর্জরিত একটি সমাজে মেয়েরা অনেক ক্ষেত্রেই সফল হচ্ছে, যা বাংলাদেশি মেয়ে ও নারীদের জন্য স্রোতের ধারা বদলের আশা যোগাচ্ছে। কাল্পনিক চরিত্র তানজিলাকে ঘিরে নির্মিত টেলিভিশন শো 'ইচ্ছেডানা'র সাফল্য এই ইতিবাচক ধারার অংশ।
শুধু মেয়েদের নিয়ে গড়ে তোলা একটি ফুটবল দলের সদস্য তানজিলা ও তার বন্ধুরা এমন সব প্রচলিত ধারা ও ক্ষতিকর বিশ্বাস যা মেয়েদের শিশুবিয়ের দিকে ঠেলে দেয় এবং তাদের অধিকার নানাভাবে লঙ্ঘন করে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে ও সেগুলো মোকাবিলা করে ।
তানজিলার সাহস ও সংকল্প বাংলাদেশের কিশোরী মেয়েদের বাস্তব জীবনের সংগ্রাম ও বিজয় তুলে ধরে। সে ও তার বন্ধুরা মানসিক স্বাস্থ্য, মাসিক স্বাস্থ্যবিধি, কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব, স্কুল থেকে ঝরে পড়া ও প্রতিনিয়ত শিশুবিয়ের শিকার হওয়ার হুমকি মোকাবিলা করে। তানজিলা দেখায় যে কীভাবে সাধারণ মেয়েরা সম্মিলিতভাবে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার সক্ষমতা রাখে।
একটি পর্বে, তানজিলা পুলিশকে জানানোর মাধ্যমে তার এক বন্ধুকে জোরপূর্বক বিয়ের হাত থেকে বাঁচায়। আরেক পর্বে, তানজিলা ও তার বন্ধুরা শেখে যে, তাদের মাসিক স্বাভাবিক এবং এতে কোনো লজ্জা নেই। 'ইচ্ছেডানা' নাটকের কথোপকথনের একটি বড় অংশজুড়ে আছে কাল্পনিক কমিউনিটির ছেলে ও বাবা-মায়েরা, যারা মেয়েদের পড়াশোনা করানোর ও দেরি করে তাদের বিয়ে দেওয়ার সুবিধা নিয়ে আলোচনা করে।
'ইচ্ছেডানা'র গল্পের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তানজিলা একটি লাজুক, অন্তর্মুখী মেয়ে থেকে একজন সাহসী ফুটবল তারকায় পরিণত হয়, যে স্কুলে দারুণ সাফল্য অর্জন করে।

তানজিলার চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী প্রিয়াম অর্চি বলেন, চরিত্রটি তাকে আরও দৃঢ়প্রত্যয়ী করেছে:
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে অর্চি বলেন, “ইচ্ছেডানায় তানজিলার চরিত্রে অভিনয়ের চার বছর হয়ে গেল। একজন অভিনেত্রী হিসেবে আমি যে চরিত্রে অভিনয় করি সেই চরিত্রের প্রতি আমার বিশ্বাস থাকা দরকার। তানজিলার আত্মবিশ্বাস আমাকে আত্মবিশ্বাসী করেছে, তার ফুটবল দলের নেতৃত্ব আমার নিজের নেতৃত্বের দক্ষতাকে উন্নত করেছে। এখন বাংলাদেশে একজন তরুণী হিসেবে আমি যদি কোনো বাধার সম্মুখীন হই তাহলে ভয় পাওয়ার বা এটি সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়ার পরিবর্তে আমি সমস্যাটি নিয়ে চিন্তা করি এবং এটি সমাধান করি।”
সমাজের ক্ষতিকর বিশ্বাস ও প্রচলিত ধারা
বাংলাদেশে মেয়েদের জন্য অনেক বাধা রয়েছে, যেখানে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণীদের অর্ধেকের ১৮ বছর বয়সের আগেই বিয়ে হয়ে যায়। এটি দেশের গ্রামাঞ্চলে আরও বেশি সুস্পষ্ট, যেখানে দারিদ্র্য, গভীরে প্রোথিত সামাজিক রীতি এবং অসম সম্পর্ক অনেক মেয়েকে সহিংসতা, শোষণ ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলে।
ইউনিসেফ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত শিক্ষা ও বিনোদনমূলক সিরিজ ‘ইচ্ছেডানা’ বাংলাদেশে শিশুবিয়ের উচ্চ প্রাদুর্ভাবের মূলে থাকা লিঙ্গ বৈষম্য, বিশ্বাস ও প্রত্যাশাগুলোকে মোকাবিলার চেষ্টা করে। ‘ইচ্ছেডানা’য় মেয়েরা বয়ঃসন্ধিকালীন চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য কাজ করে এবং তাদের ক্ষমতায়নের জন্য এবং ইতিবাচক আচরণকে সমর্থন করতে তাদের পরিবার ও কমিউনিটির জন্য ফুটবল একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়।

পরিবর্তনের সূচনা জ্ঞান থেকে
‘ইচ্ছেডানা’র প্রথম সিরিজের পর পরিচালিত একটি সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী উত্তরদাতাদের মধ্যে যারা সিরিজটি দেখেছিল তাদের মাঝে শিশুবিয়ের ক্ষতিকর পরিণতির সম্পর্কে বেশি ধারণা থাকার পাশাপাশি লিঙ্গ বৈষম্য সম্পর্কিত বিষয়ে মনোভাবে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।
শিশুবিয়ের প্রাদুর্ভাব বেশি– এমন তিন জেলা টাঙ্গাইল, নীলফামারী ও কুষ্টিয়ায় পরিচালিত সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, টিভি শোটি দেখার পর আরও বেশি সংখ্যক ছেলে ও বাবা শিশুবিয়ে নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ফুটবল খেলতে ইচ্ছুক মেয়েদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন আনন্দিত। আর তানজিলা ‘ইচ্ছেডানা’র তৃতীয় সিজনে আবারও যখন মাঠে ফিরছে, মেয়েদের এবং সমাজের উপর আরও ইতিবাচক প্রভাব দেখার প্রত্যাশা করছেন অভিনেত্রী অর্চি।
"আমি আশা করি মেয়েরা যা করতে পছন্দ করে সেটা নিয়েই কাজ করবে– সেটা ফুটবল হোক, অভিনয় হোক বা ইঞ্জিনিয়ারিং", অর্চি বলেন।