সব শিশুর জন্য স্বাস্থ্যকর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার পরিবেশ প্রদানে স্কুলগুলো যথাযথভাবে সজ্জিত নয় – ইউনিসেফ, ডব্লিউএইচও

23 জুন 2022
A girl washes her hands in her school's handwashing facility
UNICEF/UN0527578/Sujan

নিউইয়র্ক/জেনেভা/ঢাকা, ২৩ জুন ২০২২ – ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আজ বলেছে, পানি, স্যানিটেশন ও  মৌলিক স্বাস্থ্যবিধি এবং হাইজিন  (ওয়াশ) নেই - এমন স্কুলের আনুপাতিক সংখ্যা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে এলেও এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে এখনও গভীর বৈষম্য বিদ্যমান। এর ফলে স্বল্পোন্নত দেশে এবং নাজুক পরিস্থিতিতে থাকা স্কুলগামী শিশুরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রকাশিত উপাত্তে দেখা যায়, অল্প কিছু সংখ্যক স্কুলে প্রতিবন্ধী-বান্ধব ওয়াশ পরিষেবা রয়েছে।

বাংলাদেশে প্রতি পাঁচটি স্কুলের মধ্যে একটিতে (১৯ শতাংশ) নিরাপদ খাবার পানির অভাব রয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে ৮৫ লাখ স্কুল ছাত্রছাত্রীর ওপর। প্রতি ১০টি স্কুলের মধ্যে চারটিরও বেশি স্কুলে (৪৩ শতাংশ) ব্যক্তিগত গোপনীয়তাসহ ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা টয়লেট সুবিধা সম্বলিত মৌলিক স্যানিটেশনের অভাব রয়েছে। তাছাড়া, ৪৪ শতাংশ স্কুলে পানি ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার সুবিধাসহ স্বাস্থ্যসেবার অভাব রয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে ১ কোটি ৯০ লাখের বেশি স্কুল ছাত্রছাত্রীর ওপর। ইউনিসেফ ও ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের ৭ শতাংশ স্কুলে কোনও 'ওয়াশ' সুবিধা নেই, যার অর্থ হল ৩০ লাখেরও বেশি শিশু এমন স্কুলে যায় যেখানে নিরাপদ খাবার পানি, স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন এবং হাত ধোয়ার কোনো জায়গা নেই।

ইউনিসেফের পানি, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যবিধি ও জলবায়ু, পরিবেশ, জ্বালানি এবং দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন বিষয়ক পরিচালক কেলি অ্যান নেইলর বলেছেন, “বিপুল সংখ্যক শিশু এমন স্কুলে যায় যেখানে নিরাপদ খাবার পানি, পরিষ্কার টয়লেট এবং হাত ধোয়ার জন্য সাবানের ব্যবস্থা নেই — যা তাদের পড়াশোনাকে কঠিন করে তুলছে। কোভিড-১৯ মহামারী স্বাস্থ্যকর এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতকরণের গুরুত্ব আরোপ করে। শিশুদের পড়াশোনার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় বর্তমান ও ভবিষ্যতে সংক্রামক রোগগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য স্কুলগুলোকে অবশ্যই এসব মৌলিক পরিষেবা দিয়ে সাজাতে করতে হবে।"

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ড. মারিয়া নেইরা বলেছেন, "পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির সুবিধা শুধুমাত্র কার্যকর সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্যই অপরিহার্য নয়, এটি শিশুদের স্বাস্থ্য, বিকাশ ও সার্বিক কল্যাণের একটি পূর্বশর্তও বটে। স্কুলগুলো এমন হওয়া উচিত যেখানে শিশুরা সমৃদ্ধ হবে এবং মৌলিক পরিকাঠামোর অভাব বা দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণের কারণে কষ্ট বা সংক্রমণের শিকার হবেনা।"

স্কুল শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও আচরণ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যদিও ২০২১ সালে অনেক স্কুলেই প্রাথমিক পর্যায়ের 'ওয়াশ' পরিষেবার অভাব ছিল। ডব্লিউএইচও/ইউনিসেফের যৌথ পর্যবেক্ষণ প্রকল্পের (জেএমপি) সর্বশেষ তথ্য অনুসারে:

  • বিশ্বব্যাপী ২৯ শতাংশ স্কুলে এখনও নিরাপদ খাবার পানির অভাব রয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে ৫৪ কোটি ৬০ লাখ স্কুল ছাত্রছাত্রীর ওপর। ২৮ শতাংশ স্কুলে এখনও প্রাথমিক পর্যায়ের স্যানিটেশন সেবার অভাব রয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে ৫৩ কোটি ৯০ লাখ ছাত্রছাত্রীর ওপর। আর ৪২ শতাংশ স্কুলে এখনও মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা নেই, যার প্রভাব পড়ছে ৮০ কোটি ২০ লাখ স্কুলশিশুর ওপর।
  • স্কুলে মৌলিক পর্যায়ের হাইজিন সেবা না পাওয়া শিশুদের এক-তৃতীয়াংশের বসবাস স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে এবং অর্ধেকের বেশির বসবাস ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে।
  • সাব-সাহারান আফ্রিকা ও ওশেনিয়া হলো দুটি অঞ্চল যেখানে স্কুলগুলোতে প্রাথমিক পর্যায়ের স্যানিটেশন ও হাইজিন সেবা প্রাপ্তির সুযোগ ৫০ শতাংশেরও নিচে। সাব-সাহারান আফ্রিকা একমাত্র অঞ্চল যেখানে স্কুলগুলোতে বিশুদ্ধ খাবার পানি প্রাপ্তির সুযোগ ৫০ শতাংশের নিচে।
  • ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী স্কুলগুলোকে সার্বজনীন সেবার আওতায় আনার জন্য নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থা করতে বর্তমান অগ্রগতির হার ১৪ গুণ, স্যানিটেশন সেবায় অগ্রগতি তিনগুণ এবং স্বাস্থ্যবিধি ও হাইজিন সেবায় অগ্রগতি পাঁচগুণ বাড়াতে হবে।
  • স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে এবং ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে বসবাসকারী শিশুদের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে স্কুলগুলোতে মৌলিক স্যানিটেশন সেবার ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে অগ্রগতির বর্তমান হার যথাক্রমে ১০০ গুণ ও ৫০ গুণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
  • মহামারীর প্রস্তুতি ও মোকাবিলা প্রক্রিয়া উন্নত করার জন্য স্কুলগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, জীবাণুমুক্তকরণ এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ ‘ওয়াশ’ এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের (আইপিসি) অন্যান্য উপাদানগুলোর আরও ঘন ঘন পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।
  • স্কুলগুলোতে প্রতিবন্ধী-বান্ধব ‘ওয়াশ’ সেবার সুযোগ তৈরি করা সকল শিশুর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ার মূল চাবিকাঠি। এখনও খুব সীমিত সংখ্যক দেশ এবিষয়ে প্রতিবেদন দেয় ও জাতীয় পর্যায়েও এর সংজ্ঞায় পার্থক্য দেখা যায়। খুবই অল্প সংখ্যাক দেশ প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের ‘ওয়াশ’ পরিষেবার সুযোগ প্রদান করে।
  • ক্রমবিকাশমান জাতীয় উপাত্তে দেখা যায়, প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের ‘ওয়াশ’ পরিষেবার আওতায় আনার হার কম এবং বিভিন্ন স্কুল পর্যায়ে এবং শহর ও গ্রামের মধ্যে ব্যাপক তারতম্য রয়েছে, যেখানে স্কুলগুলোতে প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্যানিটেশন বা হাইজিনের চেয়ে খাবার পানি প্রাপ্তির সম্ভাবনা বেশি।
  • প্রাপ্ত উপাত্ত থেকে দেখা গেছে – এমন দেশগুলোর এক চতুর্থাংশেরও কম সংখ্যক স্কুলে প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহার-উপযোগী টয়লেট আছে। উদাহরণস্বরূপ, ইয়েমেনে প্রতি ১০টি স্কুলের মধ্যে ৮টিতে টয়লেট ছিল। কিন্তু প্রতি ৫০টি স্কুলের মধ্যে মাত্র একটিতে প্রতিবন্ধীদের ব্যবহার-উপযোগী টয়লেট ছিল।
  • উপাত্ত থেকে আরও প্রমান মেলে যে, বেশিরভাগ দেশের স্কুলগুলোতে প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহার-উপযোগী টয়লেটের তুলনায় র‌্যাম্প (সিঁড়ির বিকল্প ঢালু পথ), সহায়ক প্রযুক্তি, শিক্ষা উপকরণ ও অবকাঠামো বেশি ছিল। উদাহরণস্বরূপ, এল সালভাদরে প্রতি ৫টি স্কুলের মধ্যে ২টিতে অভিযোজিত অবকাঠামো ও উপকরণ আছে, কিন্তু প্রতি ২০টি স্কুলের মধ্যে মাত্র একটিতে প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহার-উপযোগী টয়লেট রয়েছে।

###

সম্পাদকদের জন্য নোট:

স্কুলগুলোতে ‘ওয়াশ’ পরিষেবা সম্পর্কে ডব্লিউএইচও/ইউনিসেফ জেএমপি ২০২২ ডাটা পড়ুন এবং ডাউনলোড করুন এখান থেকে

ডব্লিউএইচও/ইউনিসেফ জেএমপি সম্পর্কে আরও জানুন এখান থেকে

গণমাধ্যম বিষয়ক যোগাযোগ

ময়ূখ মাহতাব
ইউনিসেফ বাংলাদেশ
টেলিফোন: +8801685023541
ই-মেইল: mmahtab@unicef.org
ফারিয়া সেলিম
ইউনিসেফ বাংলাদেশ
টেলিফোন: +8801817586096
ই-মেইল: fselim@unicef.org

Additional resources

ইউনিসেফ সম্পর্কে

বিশ্বের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাছে পৌঁছাতে বিশ্বের কঠিনতম কিছু স্থানে কাজ করে ইউনিসেফ। ১৯০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে সর্বত্র সব শিশুর জন্য আরও ভালো একটি পৃথিবী গড়ে তুলতে আমরা কাজ করি।
ইউনিসেফ এবং এর কাজ সম্পর্কিত আরও তথ্যের জন্য ভিজিট করুন: www.unicef.org
ইউনিসেফকে অনুসরণ করুন TwitterFacebookInstagram ও YouTube-এ।

ডব্লিউএইচও সম্পর্কে

সব মানুষের মঙ্গলের জন্য নিবেদিত এবং বিজ্ঞান দ্বারা পরিচালিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সর্বত্র সবাইকে একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের সমান সুযোগ প্রদানে বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দানকারী সংস্থা। এটি জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা, যা ১৫০টিরও বেশি দেশের অংশীজন ও জনগণকে সংযুক্ত করার মাধ্যমে স্বাস্থ্যগত জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্বের রোগ মোকাবেলা, প্রতিরোধ, স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর মূল কারণ চিহ্নিত করা এবং ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির সুযোগ প্রসারিত করার কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সুস্বাস্থ্যের প্রসারের মাধ্যমে বিশ্বকে নিরাপদ রাখা এবং অরক্ষিতদের সেবা প্রদান করা।

 

ডব্লিউএইচও এবং এর কাজ সম্পর্কিত আরও তথ্যের জন্য ভিজিট করুন: www.who.int

ডব্লিউএইচওকে অনুসরণ করুন Twitter, Facebook, Instagram, LinkedIn, TikTok, Pinterest, Snapchat, YouTubeTwitch-এ।