দক্ষিণ এশিয়ায় ধ্বংসাত্মক বন্যায় লাখ লাখ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত এবং কোভিড-১৯ নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসায় আরও অনেকে ঝুঁকিতে

24 জুলাই 2020
বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি
UNICEF Bangladesh/2020/Chakma

কাঠমান্ডু/নিউইয়র্ক/ঢাকা, ২৩ জুলাই ২০২০ – ইউনিসেফ আজ বলেছে, বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালে কয়েক সপ্তাহের প্রবল মৌসুমী বৃষ্টি, ব্যাপক বন্যা ও মারাত্মক ভূমিধ্বসের ফলে লাখ লাখ শিশু ও তাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বর্তমানে আনুমানিক ৪০ লাখেরও বেশি শিশুর জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবং তাদের জীবন রক্ষাকারী জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। এ ছাড়া আরও লাখ লাখ শিশু ঝুঁকির মুখে রয়েছে।

ইউনিসেফের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক জ্যাঁ গফ বলেছেন, “এমন বিরূপ আবহাওয়ার ধ্বংসাত্মক প্রভাবের সঙ্গে অঞ্চলটি অনেক থেকেই পরিচিত, তারপরও এই অঞ্চলে সাম্প্রতিক প্রবল মৌসুমী বৃষ্টি, ব্যাপক বন্যা ও অব্যাহত ভূমিধ্বসের ঘটনা ক্ষতিগ্রস্ত শিশু ও পরিবারগুলোর জীবনে এক অনন্য ঝড় তুলেছে।” তিনি যোগ করেন, “কোভিড-১৯ মহামারি, সংক্রমণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে, কেননা কিছু দুর্গত এলাকায় কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বাড়ছে।”

এই চার দেশজুড়ে ৭০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে এবং আরও অনেকে নিখোঁজ রয়েছে। এর পাশাপাশি পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঘটনা বেড়েই চলেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইউনিসেফ তার কার্যক্রম জোরদার করতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত শিশু ও তাদের পরিবারের জরুরি প্রয়োজনগুলো মেটাতে সহায়তা দিতে সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। তবে কোভিড-১৯ মহামারি এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত সংক্রমণ ও প্রতিরোধ প্রচেষ্টা এই কার্যক্রমকে জটিল করে তুলেছে। ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর, বিশেষ করে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বসবাসরতদের মাঝে সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে শারীরিক দূরত্ব ও হাত ধোয়ার মতো নিয়মগুলো পালন করা প্রয়োজন।

রাস্তাঘাট, সেতু, রেলপথ ও বিমানবন্দরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে অনেক অঞ্চলে পৌঁছানো যাচ্ছে না। শিশুদের জন্য সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজনগুলো হলো বিশুদ্ধ পানি, রোগের বিস্তার ঠেকাতে হাইজিন সামগ্রী, খাদ্য এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শিশুদের খেলার জন্য নিরাপদ স্থান।

জ্যাঁ গফ বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিরূপ আবহাওয়াজনিত ঘটনাগুলোর কারণে কোভিড-১৯ মহামারি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়া জটিল আকার ধারণ করেছে এবং এটাই এখন দক্ষিণ এশিয়ায় শিশুদের জন্য সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়। এই হুমকিগুলো এই অঞ্চলের শিশুদের জন্য যেসব চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিচ্ছে সেগুলো মোকাবেলা করতে জরুরি সহায়তা, আরও সম্পদ বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনী কর্মসূচির প্রয়োজন।”

শুধু বাংলাদেশেই প্রায় ১৩ লাখ শিশুসহ ২৪ লাখেরও বেশি মানুষ বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাঁচ লাখেরও বেশি (৫,৪৮,৮১৬) পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়েছে। এমন এক সময়ে এই বন্যার আবির্ভাব হয়েছে, যখন বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’-এর ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে এবং কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশটিতে ইতোমধ্যেই সম্প্রসারিত জরুরি ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। দেশটিতে এখন কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যা ২ লাখ ১০ হাজারেরও বেশি। যেসব শিশু ও কমিউনিটির জরুরিভিত্তিতে পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন সামগ্রী প্রয়োজন তাদের তা প্রদানের জন্য ইউনিসেফ বন্যা মোকাবিলায় নেতৃত্ব দানকারী সরকারি অংশীদার এবং এনজিওগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় দেশজুড়ে সমন্বিত সহায়তা কার্যক্রমেও ইউনিসেফ সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে।

ভারতে বিহার, আসাম, উড়িষ্যা, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, মধ্য প্রদেশ, কেরালা, উত্তরাখন্ড, উত্তর প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে আনুমানিক ২৪ লাখ শিশু রয়েছে। বছরের এই সময়ে বন্যা নিয়মিত ঘটনা হলেও জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে বন্যার এমন ব্যাপক বিস্তৃতি অস্বাভাবিক। একই সময়ে, ভারত কোভিড-১৯ এ দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ৩০ হাজারের কোঠা পেরিয়ে যাওয়া প্রত্যক্ষ করছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত ও কার্যকরভাবে সাড়া দিতে ইউনিসেফ সরকার এবং অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে। অনেক রাজ্যে প্রসূতি ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা অব্যাহত রাখতে এবং কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি ইউনিসেফ আসামের নির্বাচিত জেলাগুলোতে কোভিড-১৯ অভিযোজিত ত্রাণ শিবির ব্যবস্থাপনা গাইডলাইন এবং শিশুবান্ধব স্থান গড়ে তুলতে আসাম সরকারকেও সহায়তা দিচ্ছে।

নেপালে, গত ৯ জুলাই থেকে প্রবল মৌসুমী বৃষ্টিপাতের ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানজুড়ে বন্যা ও ভূমিধ্বসের ঘটনা ঘটেছে, যার প্রভাব পড়েছে ২০টিরও বেশি জেলায়। ১০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, ৪৮ জন নিখোঁজ রয়েছে, যাদের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে এবং ৮৭ জন আহত হয়েছে। ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাদের অর্ধেকই শিশু এবং আনুমানিক সাড়ে ৭ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই একই সময়ে নেপালেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঘটনা দেখা গেছে। ইউনিসেফ এখনও পর্যন্ত ভূমিধ্বসের ঘটনা ঘটা নেপালের মধ্য ও দূরবর্তী পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে কম্বল, ত্রিপল, হাইজিন সামগ্রী, বালতি, মগ ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করে মানুষের জরুরি প্রয়োজনের প্রতি সাড়া দিচ্ছে। অপরিহার্য সামগ্রী সরবরাহে সহায়তার পাশাপাশি কোভিড-১৯ সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে অগ্রভাগেই রয়েছে ইউনিসেফ। এর পাশাপাশি ইউনিসেফ ভূমিধ্বস এবং বন্যার ক্ষতিগ্রস্তদের আরও সহায়তা দেওয়ারও পরিকল্পনা করছে।

ভুটানে, মৌসুমী বৃষ্টিপাতের ফলে সারাদেশে ভূমিধ্বসের সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রধান সড়ক ও আন্তঃজেলা সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। মাও নদীর সাতটি ধারা এবং উপনদীগুলো উপচে পড়ার কারণে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছিল। মাও নদীর পানির স্তর অনেক উঁচুতেই রয়ে গেছে, যা আরও বন্যার উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি তৈরি করেছে। বন্যার কারণে ফসল ও একটি পানি শোধনাগার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার কারণে এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

 ###

সম্পাদকদের জন্য নোট:

ইউনিসেফ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে: আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা।

শিশুদের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করতে, তাদের অধিকার সমুন্নত রাখতে এবং তাদের মধ্যে থাকা সম্ভাবনার বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করতে ইউনিসেফের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক কার্যালয় (আরওএসএ) দক্ষিণ এশিয়ায় ইউনিসেফের আটটি দেশের সবগুলোর স্থানীয় কার্যালয়ের সঙ্গে কাজ করে। ইউনিসেফ আরওএসএ-কে অনুসরণ করুন TwitterFacebook-এ।

গণমাধ্যম বিষয়ক যোগাযোগ

অ্যানি সোফি বোনফিল্ড
ইউনিসেফ দক্ষিণ এশিয়া
ই-মেইল: abonefeld@unicef.org
ফারিয়া সেলিম
ইউনিসেফ বাংলাদেশ
টেলিফোন: +8801817586096
ই-মেইল: fselim@unicef.org

ইউনিসেফ সম্পর্কে

প্রতিটি শিশুর অধিকার ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে বিশ্বের ১৯০ টি দেশে কাজ করছে ইউনিসেফ। সকল বঞ্চিত শিশুদের পাশে থাকার অঙ্গীকার নিয়ে আমরা কাজ করি বিশ্বের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে।

আমাদের কাজ সম্পর্কে আরো জানতে ভিজিট করুন: www.unicef.org.bd

ইউনিসেফের সাথে থাকুন: ফেসবুক এবং টুইটার