ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’-এর আঘাতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশে লাখ লাখ শিশু ঝুঁকিতে

- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
নিউইয়র্ক/ব্যাংকক/নেপাল/ঢাকা, ১৬ মে ২০২৩ – বাংলাদেশের কিছু অংশ ও মিয়ানমারের ওপর দিয়ে গত রোববার বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তা অরক্ষিত লাখ লাখ শিশু ও পরিবারসহ আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে বসবাস করা অনেক মানুষের জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। এমনকি ঝড়ের সবচেয়ে খারাপ সময় পেরিয়ে গেলেও এখন ভূমিধসের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে এবং সামনের দিনগুলোতে পানিবাহিত রোগসহ আরও বিপদ বাড়তে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ ১৪ মে স্থানীয় সময় বেলা ৩টার দিকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উপকূলে আঘাত হানে, যার প্রভাবে ভারী বৃষ্টি ও ঝড় হয় এবং প্রতি ঘণ্টায় ১৭৫ মাইল পর্যন্ত বেগে প্রবল বাতাস বয়ে যায়।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, "বিশ্বের সবচেয়ে অরক্ষিত কিছু শিশু ও পরিবার আবারও এমন একটি সংকটের মুখে পড়েছে যার জন্য তারা দায়ী নয়। ঝড়টি সবেচেয়ে বেশি যেসব এলাকায় আঘাত হেনেছে সেসব এলাকায় মানুষ আগে থেকেই সংঘাত, দারিদ্র্য, অস্থিতিশীলতা এবং জলবায়ু ও পরিবেশগত অভিঘাতের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। আমরা এই ঘূর্ণিঝড়ের পরে জরুরিভিত্তিতে শিশুদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজন নিরূপণ করে সে অনুযায়ী সাড়া দিচ্ছি। তবে আমরা নিশ্চিতভাবেই জানি যে, শিশু ও তাদের পরিবারের জীবন বাঁচানো এবং জীবনমান উন্নত করার সর্বোত্তম উপায় হল দীর্ঘমেয়াদী সমাধান খুঁজে বের করা।"
বাড়িঘর, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংসের পর রোববার রাতের দিকে ঝড়টি দুর্বল হয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষের অনেকেই এখন শরণার্থী বা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষ (আইডিপি), যারা আশ্রয়কেন্দ্র অথবা দুর্গম এলাকায় দুর্বল কাঠামোয় বানানো ঘরে থাকে। তারা খাবার, পানি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সুরক্ষার জন্য অনেক বেশি মাত্রায় মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভর করে।
বিশেষ করে মিয়ানমারে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। রাখাইন রাজ্য, চিন রাজ্য এবং সাগাইং ও ম্যাগওয়ে অঞ্চলসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন স্থান ছিল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ বয়ে যাওয়ার পথ, যেখানে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা, জাতিগত রাখাইন ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের ১২ লাখ মানুষসহ ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষের বাস, যাদের মধ্যে ৫৬ লাখই শিশু। এলাকাগুলো নিচু এবং বন্যাজনিত ভূমিধসের ঝুঁকিতে রয়েছে।
মূলত পরিবহন ও টেলিযোগাযোগ সেবা বিঘ্নিত হওয়ায় এবং গাছপালা উপড়ে ও ধ্বংসাবশেষ পড়ে কিছু সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাওয়ায় মিয়ানমারে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। তবে, প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে।
বাংলাদেশের কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরের অবস্থান, যেখানে ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর বসবাস। তাদের অর্ধেকই শিশু। শরণার্থী শিবিরগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে আঁটসাঁট জায়গার মধ্যে, যেখানে শিশুদের রোগ, অপুষ্টি, অবহেলা, শোষণ ও সহিংসতার শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। শরণার্থী শিবিরগুলো কাদামাটি ধসেরও ঝুঁকিতে আছে। শিশুরা ওইসব শিবিরে এক ধরনের ভঙ্গুর ও অস্থায়ী ঘরে বসবাস করে।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর ভারত মহাসাগরে রেকর্ড করা সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় হিসেবে ২০১৯ সালের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় 'ফণী'র সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি দেখেছেন যে, যদিও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রচেষ্টা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘূর্ণিঝড়ের সময় মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়েছে, তবে জলবায়ু পরিবর্তন এই অগ্রগতির জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। তারা উল্লেখ করেন যে, ঝড়ের ক্রমবর্ধমান মাত্রা ও তীব্রতা আগামী দশকগুলোতে বাংলাদেশের জন্য আরও বেশি ঝুঁকি তৈরি করবে।
কক্সবাজার ঝড়ের আঘাত থেকে রক্ষা পেলেও, হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং শরণার্থীদের বেশ কিছু অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র, সুযোগ-সুবিধা ও অবকাঠামো বন্যায় প্লাবিত হয়েছে, এগুলো প্রবল বাতাস ও বৃষ্টির কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে সময়মত ও জরুরি মানবিক সহায়তা পৌঁছানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউনিসেফ মাঠে থেকে চাহিদা নিরূপণ ও জরুরি ত্রাণ সরবরাহ করছে। পানি ও স্যানিটেশন, শিশু সুরক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও শিক্ষাসহ ইউনিসেফের জরুরি সেবাগুলো বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে একত্রে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে আগে থেকেই জরুরি সামগ্রী মজুদ ও বিতরণের জন্য প্রস্তুত রাখছি।
#####
সম্পাদকদের জন্য নোট:
উচ্চ রেজ্যুলেশনের ছবি ডাউনলোড করুন এখান থেকে।
বাংলাদেশ সম্পর্কিত মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট ডাউনলোড করুন এখান থেকে।
মিয়ানমার সম্পর্কিত মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট ডাউনলোড করুন এখান থেকে।
গণমাধ্যম বিষয়ক যোগাযোগ
ইউনিসেফ সম্পর্কে
বিশ্বের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাছে পৌঁছাতে বিশ্বের কঠিনতম কিছু স্থানে কাজ করে ইউনিসেফ। ১৯০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে সর্বত্র সব শিশুর জন্য আরও ভালো একটি পৃথিবী গড়ে তুলতে আমরা কাজ করি।
ইউনিসেফ এবং শিশুদের জন্য এর কাজ সম্পর্কিত আরও তথ্যের জন্য ভিজিট করুন: www.unicef.org/bangladesh/
ইউনিসেফকে অনুসরণ করুন Twitter, Facebook, Instagram এবং YouTube-এ।