কিশোর-কিশোরীদের জন্য রান্নার নতুন অনুষ্ঠান বাংলাদেশে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও বিশুদ্ধ রান্নার উৎসাহ যোগায়

14 মার্চ 2022
Cooking competition
UNICEF Bangladesh/2022/Apu

ঢাকা, ১ মার্চ ২০২২ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত নতুন টেলিভিশন শো ‘স্বর্ণ শেফ’-এ সারা বাংলাদেশের উদীয়মান তরুণ শেফরা তাদের রান্নার দক্ষতা প্রদর্শন করছে। অনুষ্ঠানটি কিশোর-কিশোরী ও তাদের পরিবারের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল নিউট্রিশন সার্ভিসেস-এর লাইন ডিরেক্টর ড. এস. এম. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশে পুষ্টির মাত্রা বাড়ানোর বিষয়টি আমাদের দেশের প্রথম সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত আছে। বাংলাদেশ সরকার তখন থেকেই সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এটা প্রশংসনীয় যে পুষ্টি বিষয়ে সরকারের প্রচেষ্টার পাশাপাশি, ইউনিসেফের মতো উন্নয়ন সহযোগীরা কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টির গুরুত্ব সম্পর্কে শেখাচ্ছে এবং অল্প বয়সেই তাদের শুধুমাত্র সুস্বাদু নয়, পুষ্টিকর খাবার রান্না করাও শেখাচ্ছে।”

ভালো পুষ্টির গুরুত্ব গর্ভধারণের মুহূর্ত থেকে শুরু হয় এবং শৈশব ও কৈশোর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত একজন ব্যক্তির সার্বিক সুস্থতার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ থাকে।

শাকসবজি, ফলমূল এবং ডিম, মাছ, মাংস ও ডালের মতো আমিষ সমৃদ্ধ খাবার থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি না পাওয়ার পরিণতি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এর অভাবে একজন শিশু বিভিন্ন ধরনের অপুষ্টির শিকার হতে পারে, যেখানে অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার মাঝেও অপুষ্টি এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি থেকে যায়। অপুষ্টির কারণে একটি শিশুর বিকাশ, স্কুলের প্রস্তুতি, শেখার কর্মক্ষমতা এবং জীবনের সুযোগগুলি বাধাগ্রস্ত হতে পারে

অপুষ্টির কারণে বাংলাদেশের শিশুদের স্বাস্থ্য আজ বুহুমুখী ঝুঁকিতে। ২৮ শতাংশ শিশু দীর্ঘস্থায়ীভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে এবং প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা বাড়ছে। ৫৬ শতাংশ কিশোরী রক্তাল্পতায় ভুগছে।

বাংলাদেশে ২৮ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতির সমস্যায় আক্রান্ত এবং ১০ শতাংশ শিশু কৃষকায়, যা উদ্বেগজনক। যেসব শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং সংক্রমণের শিকার হওয়ার অধিক ঝুঁকিতে থাকে। তারা প্রায়শই মনোযোগ ও একাগ্রতা নিয়ে সমস্যায় ভোগে, যা তাদের জন্য পড়াশোনা করাকে কঠিন করে তোলে। তারা এমনকি স্কুল থেকে ঝরে পড়তে পারে।

তবে কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানে সজ্জিত করে এই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে। এটি প্রারম্ভিক শৈশবে দুর্বল বৃদ্ধিজনিত অবস্থা কাটিয়ে উঠতে, আজীবন স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের ভিত্তি তৈরি করতে এবং এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে অপুষ্টির চক্র ভেঙ্গে দিতে  সাহায্য করতে পারে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি মি. শেলডন ইয়েট বলেন, “স্বর্ণ শেফ-এর লক্ষ্য হচ্ছে কিশোর-কিশোরীদের মাঝে রান্নার মজা ও খাওয়ার আনন্দ ছড়িয়ে দিয়ে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করতে সহায়তা দেওয়া। দুঃখজনকভাবে, অনেক কিশোর-কিশোরীদের পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার সুযোগ নেই এবং অন্যদের খুব বেশি অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করে। শেষ পর্যন্ত, এটি একটি সুষম খাবার, যা কিশোর-কিশোরীরা খেতেও উপভোগ করে, যা তাদের মাঝে থাকা পূর্ণ সম্ভাবনা অনুযায়ী বেড়ে উঠতে সাহায্য করবে।”

স্বর্ণ শেফ অনুষ্ঠানে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোর শেফদের তুলে ধরা হয়, যারা প্রতি সপ্তাহে একটি ভিন্ন রান্নার চ্যালেঞ্জে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। প্রতিটি পর্বের শেষে বিচারকদের একটি প্যানেল তাদের খাবারের পুষ্টির মান এবং স্বাদ উভয় দিক মূল্যায়ন করে, যে প্যানেলে একজন পেশাদার শেফ এবং একজন পুষ্টিবিদ থাকেন।

ইউনিসেফ বাংলাদেশ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ক্লিন কুকিং অ্যালায়েন্স এবং পিসিআই মিডিয়ার মধ্যে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নির্মিত রান্নার এই অনুষ্ঠানটি ৬০ লাখ দর্শকের কাছে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানটি স্বাস্থ্যকর রান্নার জ্বালানি যেমন জ্বালানি কাঠের পরিবর্তে বিদ্যুৎ বা রান্নার গ্যাস ব্যবহারকেও উৎসাহিত করে। বাংলাদেশে, বাড়িতে রান্নার ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসা একটি গুরুতর স্বাস্থ্যজনিত উদ্বেগ, বিশেষ করে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য।

ক্লিন কুকিং অ্যালায়েন্সের পলিসি ম্যানেজার আশনা তৌফিক বলেন, “তরুণদের বিশুদ্ধ রান্নার উপকারিতা সম্পর্কে শিখতে সহায়তা করতে ইউনিসেফ ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়তে পেরে ক্লিন কুকিং অ্যালায়েন্স আনন্দিত। এই উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ তরুণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনে ভূমিকা রাখতে পারে। বিশুদ্ধ রান্নার সুযোগকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তরুণদের পরিবর্তনকারী ও উদ্ভাবক হিসেবে শিক্ষিত ও ক্ষমতায়ন করা অপরিহার্য। আমরা অনুষ্ঠানটির এবং এতে অংশগ্রহণকারীদের সাফল্য কামনা করি।”

###

সম্পাদকদের জন্য নোট:

'স্বর্ণ শেফ' প্রতি শুক্রবার রাত ৮:৩০ মিনিটে এবং শনিবার দুপুর ১:০০টায় দুরন্ত টিভিতে প্রচারিত হয়। ইউনিসেফ বাংলাদেশ প্রতি শনিবার রাতে ৮:০০টায় তার ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে একটি নতুন পর্ব সম্প্রচার করে।

উচ্চ রেজ্যুলেশনের ছবি ডাউনলোড করুন এখান থেকে

গণমাধ্যম বিষয়ক যোগাযোগ

কিপ প্যাট্রিক
ক্লিন কুকিং অ্যালায়েন্স
ই-মেইল: kpatrick@cleancooking.org
ময়ূখ মাহতাব
ইউনিসেফ বাংলাদেশ
টেলিফোন: +8801685023541
ই-মেইল: mmahtab@unicef.org

ইউনিসেফ সম্পর্কে

বিশ্বের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাছে পৌঁছাতে বিশ্বের কঠিনতম কিছু স্থানে কাজ করে ইউনিসেফ। ১৯০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে সর্বত্র সব শিশুর জন্য আরও ভালো একটি পৃথিবী গড়ে তুলতে আমরা কাজ করি।

ইউনিসেফ এবং শিশুদের জন্য এর কাজ সম্পর্কিত আরও তথ্যের জন্য ভিজিট করুন: www.unicef.org.

ইউনিসেফকে অনুসরণ করুন Twitter, Facebook, Instagram এবং YouTube-এ।

 

ক্লিন কুকিং অ্যালায়েন্স (সিসিএ) সম্পর্কে

একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শিল্প গড়ে তুলতে সিসিএ সহযোগীদের একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে কাজ করে, যা বিশুদ্ধ রান্না সবার জন্য সহজলভ্য করতে পারে। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত সিসিএ ভোক্তাদের চাহিদাকে চালনা করছে, বিনিয়োগ জোগাড় করছে এবং এমন নীতিমালাকে সমর্থন করছে, যার মাধ্যমে বিশুদ্ধ রান্নার খাত সমৃদ্ধি লাভ করবে।