উদ্ভাবনী ভিশনারি স্পিকারস ইভেন্টের আলোচ্য বিষয়াবলীর শীর্ষে জলবায়ু পরিবর্তন, শিশু ও সহিংসতা
- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
ঢাকা, ৬ এপ্রিল ২০২২ – শিশু বিয়ে ও শিশু শ্রমসহ শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার চালিকা শক্তি হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন ছিল আজকের ‘ভিশনারি স্পিকারস ইভেন্টের’ মূল আলোচ্য বিষয়, যা ধারণা, সাহসী চিন্তাভাবনা ও সৃজনশীল সমাধানের জন্ম দেয়– এমন অনুপ্রেরণামূলক আলোচনার জন্য নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম।
ইউনিসেফ, ওয়ার্ল্ড ভিশন ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে ৬ এপ্রিল ঢাকার ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলে। আমন্ত্রিত বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তন ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার মধ্যে যোগসূত্রের ওপর আলোকপাত করেন। তারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রে শিশুদের সার্বিক কল্যাণ ও নিরাপত্তাকে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় তরুণ জনগোষ্ঠীর কথা যাতে শোনা হয় তা নিশ্চিত করার উপায়গুলোও খতিয়ে দেখেন।
ইউনিসেফের শিশুদের জন্য জলবায়ু ঝুঁকি সূচক বা চিলড্রেন্স ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেস্কে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৩ দেশের মধ্যে ১৫তম। শিশুরা জলবায়ু ও পরিবেশগত অভিঘাতের ক্ষেত্রে কতটা ঝুঁকিতে তা তুলে ধরে এই সূচক।
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশের শিশুরা দায়ী নয়, অথচ তাদেরকেই এর জন্য সর্বোচ্চ মূল্য দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতি তিন শিশুর মধ্যে একজন বা প্রায় ২ কোটি শিশু বিরূপ আবহাওয়া, বন্যা, নদীভাঙন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে পরিবেশগত অভিঘাতের শিকার। এদের মধ্যে অনেক শিশুরই ঠাঁই হয় শহরের বস্তিতে, তাদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সম্ভাবনা নস্যাৎ হয়ে যায়। শোষণমূলক শিশু শ্রম, শিশু বিয়ে এবং পাচারের ফাঁদে আটকা পড়ে যায় লাখ লাখ শিশু।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি মি. শেলডন ইয়েট বলেন, “জলবায়ু সংকটের সম্মুখভাগে রয়েছে বাংলাদেশের শিশুরা। এদের মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে থাকা যেসব শিশুরা শহরের বস্তিতে বাস করছে, তাদের অনেককেই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে এবং বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে, এমনকি যৌনকর্মীতে পরিণত হচ্ছে।”
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের জাতীয় পরিচালক সুরেশ বার্টলেট বলেন, “শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ে পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ দূত এবং ওয়ার্ল্ড ভিশনে, আমরা বিশ্বাস করি যে, সমস্যা সমাধানে তাদের সম্পৃক্ত করা ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। আমরা এটাও বিশ্বাস করি যে, দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হতে পারে– এমন জলবায়ু বিষয়ক সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য বিভিন্ন অংশীজনের মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতা প্রয়োজন।”
বাংলাদেশে আইইউসিএন কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রাকিবুল আমিন বলেন, “পরিবেশগত অবক্ষয় লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার একটি চালিকা শক্তি। পরিবেশগত অবক্ষয় ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সম্পদের ঘাটতি, সংঘাত ও বাস্তুচ্যুতি কষ্টার্জিত উন্নয়ন অর্জনগুলোকে প্রভাবিত করে। জলবায়ু সংকট নারী ও শিশুদের মতো অরক্ষিত গোষ্ঠীগুলোকে আরও নাজুক করে তোলে। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার অবসান এবং পরিবেশগত টেকসই অবস্থা নিশ্চিত করা গেলে তা আমাদের আন্তঃসংযুক্ত বৈশ্বিক লক্ষ্যগুলো অর্জনে সহায়তা করবে।”
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওয়ার্ল্ড ভিশনের চাইল্ড অ্যান্ড ইয়ুথ ফোরামের যুবকর্মী মো. আলমগীর কবির বলেন, “পর্যাপ্ত তহবিল, সচেতনতা ও প্রশিক্ষণ তরুণ জনগোষ্ঠীকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও এর প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য সঠিক পথ বেছে নিতে সাহায্য করবে।”
ভিশনারিস ইভেন্টের বক্তারা হলেন:
ডোরা প্ল্যাটেভিচ, ইউএসএইড বাংলাদেশের ডেপুটি প্রোগ্রাম অফিস ডিরেক্টর: স্থিতিস্থাপক ভবিষ্যতের পথে: তরুণদের পথ দেখাতে দিন;
জাহিন শামস সাক্কার, উত্তরণ: বাংলাদেশের জোয়ার-ভাটা চলা নদীগুলোকে বাঁচাতে তরুণ-নেতৃত্বাধীন অভিযোজন কৌশল;
জোসে আমায়া, জিলডান অ্যাকটিভওয়্যার ইনক.: জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় শিক্ষার অগ্রণী ভুমিকা;
মো. আলমগীর কবির, ওয়ার্ল্ড ভিশন চাইল্ড অ্যান্ড ইয়ুথ ফোরাম: অরক্ষিত থাকার বহুমুখী বাস্তবতা: জলবায়ু পরিবর্তনের স্থান কোথায়?;
মোহাম্মদ শাহ আলম, নির্বাহী পরিচালক, সিসিম কর্মশালা: আমাদের জলবায়ু, আমাদের ভবিষ্যৎ: ছোট শিশুদের জন্য বড় ভাবনা;
ন্যাটালি ম্যাকাউলি, ইউনিসেফ বাংলাদেশের শিশু সুরক্ষা বিভাগের প্রধানঃ শিশু সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন;
সোফিয়া ক্যানোভাস, ইউএনএফপিএ’র কক্সবাজার কার্যালয়ে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা উপ-শাখার সমন্বয়ক: লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দীর্ঘস্থায়ী বাস্তুচ্যুতি: একটি অধিকার-ভিত্তিক পদ্ধতির দিকে;
সৈয়দ তামজিদ উর রহমান, উইনরক: ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে জলবায়ুজনিত কারণে অরক্ষিত তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য সুযোগ সম্প্রসারণ করা;
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহীঃ সুশাসন ও অধিকারঃ পরিবেশ ও জলবায়ু সংকটের কারণে নারী ও শিশুদের উপর অদৃশ্য প্রভাব;
তৌফিক খান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ: বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অন্তর্ভুক্তিমূলক স্থানীয়করণ;
গণমাধ্যম বিষয়ক যোগাযোগ
ইউনিসেফ সম্পর্কে
বিশ্বের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাছে পৌঁছাতে বিশ্বের কঠিনতম কিছু স্থানে কাজ করে ইউনিসেফ। ১৯০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে সর্বত্র সব শিশুর জন্য আরও ভালো একটি পৃথিবী গড়ে তুলতে আমরা কাজ করি।
ইউনিসেফ এবং শিশুদের জন্য এর কাজ সম্পর্কিত আরও তথ্যের জন্য ভিজিট করুন: www.unicef.org.
ইউনিসেফকে অনুসরণ করুন Twitter, Facebook, Instagram এবং YouTube-এ।
আইইউসিএন সম্পর্কে
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) হলো, সরকার ও সুশীল সমাজের সংস্থা সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সংঘ। এটি তার এক হাজার চারশ’র বেশি সদস্য সংস্থার অভিজ্ঞতা, সম্পদ ও যোগাযোগ এবং ১৮ হাজারের বেশি বিশেষজ্ঞের অবদান কাজে লাগায়। এই বৈচিত্র্য ও বিশাল দক্ষতা আইইউসিএনকে বিশ্ব প্রকৃতির অবস্থা এবং এটিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলোর বিষয়ে বৈশ্বিক কর্তৃপক্ষে পরিণত করেছে।
ওয়ার্ল্ড ভিশন সম্পর্কে
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ হলো, বৈশ্বিক খ্রিস্টানদের ত্রাণ, উন্নয়ন ও অ্যাডভোকেসি সংস্থা, যা দারিদ্র্য ও শোষণের শিকার শিশু, তাদের পরিবার ও কমিউনিটিগুলোর জীবনে স্থায়ী পরিবর্তন আনতে কাজ করছে। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের টেকসই কল্যান নিশ্চিত করতে সারাদেশে ১,০০০ জনের বেশি কর্মী নিয়ে এবং স্থানীয় সংস্থা, ধর্মীয় নেতা, একাডেমিয়া, বেসরকারি খাত এবং সরকারের সাথে অংশীদারিত্বে, মাল্টি-সেক্টরাল, সমন্বিত প্রোগ্রামিং বাস্তবায়ন করে।