ইউনিসেফ: শিশুদের পক্ষ থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার জন্য বর্ধিত সরকারি বিনিয়োগের আহ্বান
ইউনিসেফের জরিপ জাতীয় বাজেটে শিশুদের চাওয়া এবং এ নিয়ে তাদের উদ্বেগ তুলে ধরে

- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
ঢাকা, ২১ জুন ২০২২ – ইউনিসেফের নতুন এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি দশজন বাংলাদেশি শিশুর মধ্যে নয়জনই বলেছে যে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং শিশুদের সরাসরি প্রভাবিত করে এমন খাতগুলোতে সরকারী ব্যয় বাড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১৪ হাজার শিশু এবং ১৮-২৪ বছর বয়সী ৩৭ হাজার তরুণ-তরুণী জরিপে অংশগ্রহণ করে, যেখানে জাতীয় বাজেট সম্পর্কে তাদের মতামত জানতে চাওয়া হয়। শিশুরা জাতীয় বাজেটের জন্য তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্ব বহনকারী প্রশ্নগুলো ইউনিসেফের ‘জেনারেশন পার্লামেন্ট’ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পোস্টও করছে।
“শিশুদের আমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু জানার ও চাওয়ার এবং তাদের আশা আকাংখা প্রকাশ করার অধিকার আছে । একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে তাদের কথা শোনা এবং তাদের সাথে অর্থবহভাবে সম্পৃক্ত হওয়া উচিৎ আমাদের। আমার জায়গা থেকে, আমি সবসময় তাদের অধিকারের জন্য সোচ্চার থাকবো এবং একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে আমি তাদের কণ্ঠস্বরকে জাতীয় নেত্রীবৃন্দের কাছে পৌঁছে দিবো,“ বলেন শামসুল হক টুকু, শিশু বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সভাপতি।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি মিঃ শেলডন ইয়েট বলেন, “শিশুদের জীবনের প্রতিটি দিক কোভিড-১৯ মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এই জরিপের ফলাফল দেখায় যে, তারা এব্যাপারে সচেতন এবং উদ্বিগ্ন। তবে এটি গুরুত্বপূর্ণ যে জাতীয় নেতারা তাদের কথা শোনেন।”
মহামারির কারণে ১৮ মাস স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনার ক্ষতির বিষয়টিই জরিপে অগ্রাধিকার পায়। এতে অংশগ্রহণকারী শিশুদের ৮৫ শতাংশেরও বেশি বলেছে, শিশুদের পড়াশোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করার জন্য শিক্ষা খাতে আরও বেশি ব্যয় করা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জরিপে অংশগ্রহণকারী শিশুদের বেশিরভাগ আরও বলেছে, যেটা সবচেয়ে বেশি জরুরী তা হচ্ছে শিক্ষকদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের পেছনে বিনিয়োগ করা।
“আমি চাই বাজেটে সব চেয়ে বেশি বিনিয়োগ করা হোক শিক্ষা খাতে, যার মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলকে সব চেয়ে বেশি প্রায়োরিটি দেওয়া হোক। নাহলে শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ ও শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার মত সমস্যা দূর করা যাবে না,” জানায় ১৩-বছর বয়সী গার্গী তনুশ্রী পাল।
সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার বিষয়টিও একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবী হিসেবে দেখা দিয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী শিশুদের ৯০ শতাংশেরও বেশি জানায়, সবাইকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার লক্ষ্য অর্জনে অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশের এক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিয়োগ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১৭ বছর বয়সী ইবনে আল রামিজ জানায়, “এবারের জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হোক। বিশেষ করে গর্ভবতী মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রশিক্ষিত নার্স, প্রশিক্ষিত দায়ী ও উন্নত যন্ত্রপাতির মাধ্যমে গর্ভবতী মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা হোক।”
ব্যাপক অগ্রগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশে লাখ লাখ শিশু সহিংসতা ও নির্যাতনের সম্মুখীন হচ্ছে এবং শিশুবিয়ে বা শিশু শ্রমে বাধ্য হচ্ছে। শিশুদের সুরক্ষার জন্য মাঠ পর্যায়ে কর্মরত সমাজকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্বীকার করে জরিপে অংশগ্রহণকারী শিশুদের ৬৫ শতাংশেরও বেশি বলেছে যে, সমাজকর্মীদের পেছনে আরও বেশি ব্যয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জরিপে এও উঠে এসেছে যে, শিশুরা সচেতন এবং জাতীয় নেতাদের কাছে তারা কী চায় সে বিষয়ে নিজেদের ভাবনা প্রকাশের সুযোগ পেলে তারা তাদের সুচিন্তিত মতামত দিতে উদগ্রীব। তবে জরিপে আরও উঠে এসেছে যে, অনেক শিশুই মনে করেনা যে তাদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র অর্ধেকের কাছাকাছি শিশু বলেছে যে জাতীয় বাজেট সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় শিশুদের মতামত শোনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতায়নের এই নিম্ন বোধটি ইউনিসেফের ২০২১ সালের 'চেঞ্জিং চাইল্ডহুড' প্রজেক্টের ফলাফলেরই প্রতিধ্বনি করে, যেখানে দেখানো হয়েছিল যে, রাজনৈতিক নেতাদের জন্য শিশুদের কথা শোনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ- এমনটা বিশ্বাস করা শিশু তরুণদের সংখ্যার বিচারে বিশ্বব্যাপী জরিপ করা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।
মিঃ ইয়েট বলেন, “শিশু এবং তরুণদের ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করে এমন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণের জন্য আমাদের আরও জায়গা তৈরি করে দিতে হবে। আমাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের দেখাতে হবে যে তাদের মতামতও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জাতীয় বাজেটে শিশু খাতে আরও বেশি বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন।”
২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সরকার একটি শিশু বাজেট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা শিশুদের পেছনে বিনিয়োগ ২০ শতাংশে উন্নীত করার যে লক্ষ্যমাত্রা সরকারের রয়েছে তা অর্জনের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করত। শিশু খাতে বিনিয়োগ ১৫ শতাংশের আশেপাশে আটকে আছে এবং এ অবস্থায় পুনরায় শিশু বাজেট প্রতিবেদন চালু করা পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে।
ইউনিসেফ শিশুদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বাজেটে আরও বেশি বরাদ্দ দেওয়ার দাবিতে বাংলাদেশের শিশুদের পাশে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা ও শিশু সুরক্ষার ক্ষেত্রে এখন বিনিয়োগ করা হলে তা প্রতিটি শিশুর অধিকার ও সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে এবং দেশের ভবিষ্যত সমৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।
শিশুদের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য ইউনিসেফ বাংলাদেশ সরকার, সংসদ এবং শিশু অধিকার বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সদস্যদের ধন্যবাদ জানায়।
###
সম্পাদকের জন্য নোট:
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা ও শিশু সুরক্ষার ক্ষেত্রে এখন বিনিয়োগ করা হলে তা প্রতিটি শিশুর অধিকার ও সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে এবং দেশের ভবিষ্যত সমৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।
হাই-রেস ছবি ডাউনলোড করুন এখানে
গণমাধ্যম বিষয়ক যোগাযোগ
ইউনিসেফ সম্পর্কে
বিশ্বের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাছে পৌঁছাতে বিশ্বের কঠিনতম কিছু স্থানে কাজ করে ইউনিসেফ। ১৯০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে সর্বত্র সব শিশুর জন্য আরও ভালো একটি পৃথিবী গড়ে তুলতে আমরা কাজ করি।
ইউনিসেফ এবং শিশুদের জন্য এর কাজ সম্পর্কিত আরও তথ্যের জন্য ভিজিট করুন: www.unicef.org.
ইউনিসেফকে অনুসরণ করুন Twitter, Facebook, Instagram এবং YouTube-এ।