শৈশবের শুরুতেই বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি
শিশুর বিকাশের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ক্ষেত্র সম্প্রসারণ
- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
চ্যালেঞ্জ
মানুষের দ্রুততম বিকাশ হয় শৈশবের শুরুতে। জন্মের পর থেকে আট বছর বয়স পর্যন্ত থাকে বিকাশের এই পর্ব।
ছয় মাসের মধ্যেই মানুষের মস্তিষ্কের অর্ধেক গঠিত হয়ে যায় এবং আট বছরের মধ্যে তৈরি হয় ৯০ শতাংশ। শিশুর বুদ্ধিবৃত্তি, আবেগ, সামাজিক যোগাযোগ ও শারীরিক সম্ভাবনা বিকাশের জন্য এই পর্যায় ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
সে কারণে জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুর অভিজ্ঞতা তার সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রাখে। কারণ সেগুলোকে ঘিরেই তার মস্তিষ্ক বিকশিত হয়।
বাংলাদেশে শিশুর যত্ন ও প্রতিপালন বিষয়ে মা-বাবাদের জ্ঞান ও সচেতনতা খবুই সীমিত। ছোট শিশুর বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো অধিকাংশই জানে না।
জীবনের শুরুর দিকে উৎসাহ যোগানো ও শিক্ষাই তার পরিপূর্ণ বিকাশে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। কথা বলা, পড়া, গান গাওয়া, ধাঁধাঁর সমাধান এবং অন্যদের সঙ্গে খেলাধুলা শিশুর ওপর সুস্পষ্ট প্রভাব ফেলে।
দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশু মনোযোগ দিয়ে শোনে, কথায় সাড়া দেয়, শব্দের অনুকরণ করে, প্রথম অর্থবোধক শব্দ বলে, বড়দের কাজ-কর্ম অনুকরণ করে, বন্ধুত্ব গড়ে তোলে, সমস্যার সমাধান করে ও খেলাধুলা শুরু করে।
তিন থেকে পাঁচ বছরে শিশুরা নতুন নতুন বিষয় শেখা উপভোগ করে, দ্রুত ভাষা রপ্ত করতে থাকে, কোনো বিষয়ে বেশি সময় মনোযোগ ধরে রাখার সক্ষমতা অর্জন করে এবং নিজের মতো করে কিছু করতে চায়।
পাঁচ বছরের কম বয়সী বাংলাদেশি শিশুদের মধ্যে মাত্র ৮.৮ শতাংশ বাড়িতে তিনটি বা তার বেশি বই থাকে
তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে মাত্র ১৩.৪ শতাংশ শৈশবের প্রারম্ভিক শিক্ষা পায়

বাংলাদেশে মাত্র ৪৩.৫ শতাংশ শিশু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রারম্ভিক শিক্ষা গ্রহণ এবং বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়
তবে শৈশবের গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে অনেক শিশুই যথাযথ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়, যার অধিকাংশই হয় বাবা-মা কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে।
বাংলাদেশে মাত্র ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ শিশু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রারম্ভিক শিক্ষা গ্রহণ এবং বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।
এ কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার আগে অধিকাংশ শিশুই ভাষার দক্ষতা অর্জন, একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সহায়তা করার মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার শিক্ষা, প্রাক-লিখন ও প্রাক-পঠনের দক্ষতা অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা থেকেই কেবল তারা বঞ্চিত হয় না, ঘরেও তাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক পরিবেশ থাকে না।
২০১৩ সালের মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে অনুযায়ী, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মাত্র ৮ দশমিক ৮ শতাংশের বাড়িতে তিনটি বা তার বেশি বই থাকে। আর তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে মাত্র ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ শৈশবের প্রারম্ভিক শিক্ষা পায়।
সর্বোপরি বাংলাদেশে ছোট শিশুদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ ও উপকরণের অভাব রয়েছে।
ভৌগলিক অবস্থানের কারণে অনেক এলাকায় সুযোগ-সুবিধা খুবই কম এবং মানসম্মত শিক্ষক ও শিক্ষার পরিবেশ না থাকাটাও একটা চ্যালেঞ্জ।
ইউনিসেফের সহযোগিতায় পার্বত্য চট্টগ্রামে পাড়াভিত্তিক ৪,০০০ কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে বিভিন্ন ইসিডি সেবা দেওয়া হয়
সমাধান
সরকারের আর্লি চাইল্ডহুড কেয়ার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পলিসি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ইউনিসেফের ।
ইউনিসেফ এই নীতি বাস্তবায়নেও সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। ফলপ্রসূ মডেল উপস্থাপন, কারিগরি সহায়তা, যৌথ উদ্যোগে অংশগ্রহণ, নেটওয়ার্কিং ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে অংশীদারিত্ব তৈরিতে সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
আর্লি চাইল্ডহুড সেবা যাতে সব জায়গায় সমানভাবে দেওয়া সম্ভব হয় সেজন্য সরকারের ১৬টি মন্ত্রণালয়কে একত্রিত করে একটি সমন্বয় ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে ইউনিসেফ। এই নীতি বাস্তবায়নের আর্থিক পরিকল্পনা তৈরিতেও সহযোগিতা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে আরও কিন্ডারগার্টেন ও শিশু বিকাশ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় উৎসাহিত করছে ইউনিসেফ। ইউনিসেফের সহযোগিতায় পার্বত্য চট্টগ্রামে পাড়াভিত্তিক চার হাজার কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে, যা চা বাগান, বস্তি ও হাওরাঞ্চলের জন্য একটি মডেল হতে পারে।
শিশুর শিক্ষা ও বিকাশ ত্বরাণ্বিত করতে তাদের বয়সের ভিন্নতায় আলাদা আলাদা ব্যবস্থা ও নির্দেশিকা তৈরিতে সহযোগিতা করবে ইউনিসেফ।
শিশুর সার্বিক বিকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো যাতে সমান দায় অনুভব করে, তা চায় ইউনিসেফ। এর জন্য সরকারের সঙ্গে কমিউনিটি, এনজিও ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতা নিশ্চিত করতে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হচ্ছে।
আর্লি চাইল্ডহুড কেয়ার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচির একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হল লৈঙ্গিক সংবেদনশীলতা তৈরি এবং সমাজে নারী-পুরুষের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বিষয়গুলো দূর করতে কাজ করা।
এই বিষয়ে আরও জানতে
ইউনিসেফ বাংলাদেশ কান্ট্রি প্রোগ্রাম ফর ২০১৭-২০২০: কান্ট্রি প্রোগ্রাম ডকুমেন্ট এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি নোটস