সহিংসতা ও শোষণ থেকে রক্ষা
জ্ঞান ও কমিউনিটি-ভিত্তিক কার্যক্রম শিশুদের সুরক্ষা দিতে পারে
- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
চ্যালেঞ্জ
বিশ্বজুড়েই শিশুরা নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হয়। যৌন হয়রানি, সহিংস আক্রমণ, শারীরিক শাস্তি, মানসিক নির্যাতন ও অবহেলা-এর যে কোনোটা ঘটতে পারে তার সঙ্গে।
বাংলাদেশেও শিশুরা এমন অনাচারের শিকার হয়- ব্যক্তিগত বা সরকারি অফিসে, বাড়িতে, স্কুলে, রাস্তায়, কর্মস্থলে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়ে থাকে।
শিশুর সুরক্ষা আইন এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। শিশুদের জন্য যেসব সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে সেগুলোতে মান ও সমতার ঘাটতি রয়ে গেছে। শিশুর সুরক্ষায় যেসব প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা সেগুলোতেও পর্যাপ্ত লোকবল ও অর্থ বরাদ্দ হয় না।
বাংলাদেশে শিশুদের এখনও দেখা হয় রক্ষণশীল সামাজিক রীতি ও দৃষ্টিভঙ্গিতে, যাতে গুরুতর অধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটতে পারে।
সহিংসতা, যৌন নিপীড়ন, শিশু শ্রম, বাল্যবিয়ে এবং মানসিকভাবে হয়রানি এখনও অহরহই ঘটছে। শিশুর প্রতি সহিংসতার ক্ষেত্রে দারিদ্র্য একটি বড় ভূমিকা রাখে।
যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলো ধরাটা বেশ কঠিন। সামাজিক সংস্কার আর প্রভাবশালীদের চক্ষুশূল হওয়ার ভয়ে এমন অপরাধও চাপা পড়ে যায়। অধিকাংশ বাবা-মা আইন ও শিশুর সুরক্ষা সেবাগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই।
বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইন আছে। তবে তা যৌন হয়রানির ঘটনাকে আমলে নেয় না। অথচ যৌন হয়রানির প্রবণতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। অনেক ক্ষেত্রে কিশোরীরা আত্মহত্যা করে অথবা আরও সহিংসতার শিকার হয়।
প্রতিবন্ধী শিশুদের নিপীড়নের বিষয়ে তেমন পরিসংখ্যান না থাকলেও যতটুকু তথ্য পাওয়া যায় তাতে এটা স্পষ্ট যে, প্রতিবন্ধী মেয়েদের ওপর যৌন সহিংসতা ক্রমশ বাড়ছে।
খুব ছোট শিশুদের বিপজ্জনক কাজে লাগানো হচ্ছে। ১৭ লাখ শিশু, যাদের বেশিরভাগই ছেলে, তারা শিশু শ্রম দিচ্ছে। অনেক মেয়েই ঘরকন্নার কাজে জড়িত থাকে।
কিশোরী মেয়েরা অনেক সময়ই ঘরে সহিংসতার পাশাপাশি যৌন হয়রানির শিকার হয়। তারা এক ধরনের গৃহ দাসত্বের কবলে পড়ে। বলাই বাহুল্য, এরা শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত।
এদিকে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম স্থানে রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও এই বয়সের মেয়েদের বাল্যবিয়ে ও মানবপাচারকারীদের কবলে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
অনেক বিবাহিত কিশোরী শারীরিক ও যৌন সহিংসতার শিকার হয়। এই বয়সী মেয়েদের ৩৩ শতাংশ মনে করে, স্বামীর তাদেরকে মারধরের অধিকার আছে।
কর্মসংস্থানের অভাবে অনেক কিশোর-কিশোরী অনিরাপদ মাইগ্রেশনের দিকে ঝুঁকছে। এই শিশুরা পদে পদে নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হতে থাকে।
প্রতিবন্ধী মেয়েদের ওপর যৌন সহিংসতা অনেক বেশী
ইউনিসেফ সেসব নেতিবাচক সামাজিক প্রথা দূর করতে কাজ করছে যেসবের কারণে শিশুরা সহিংসতার শিকার হয়
সমাধান
শিশুর সুরক্ষা দেয় এমন আইনগুলো প্রয়োগের মাধ্যমে সমাজে শক্তশালী বার্তা পৌঁছে দিতে হবে যে, সহিংসতা, শোষণ-বঞ্চনা এবং কোনোভাবে শিশুর প্রতি অবহেলা মেনে নেওয়া হবে না।
বিশ্বজনীন শিশু অধিকার সনদের বেঁধে দেওয়া আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করতে বাংলাদেশের শিশু আইনের সংস্কার করা দরকার।
শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সুরক্ষায় শিশু আইন ২০১৩ বাস্তবায়নে কৌশলগত প্রচারণার পাশাপাশি কারিগরি সহযোগিতা দেয় ইউনিসেফ।
শিশু শ্রম কমাতে বিদ্যালয় থেকে তাদের ঝরে পড়া রুখতে সহায়তামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে ইউনিসেফ।
সহিংসতাসহ শিশুর অধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে আরও কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়নে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ এবং গবেষণায় আরও জোর দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিবন্ধী, চা বাগান, পার্বত্য চট্টগ্রাম, শরণার্থী অধ্যুষিত এবং দুর্যোগপ্রবণ এলাকাসহ দুর্গম অঞ্চলের শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।
শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদারে তৎপরতার পাশাপাশি যেসব ক্ষতিকর সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে শিশুরা সহিংসতার শিকার হয় সেগুলোরও পরিবর্তনেও কাজ করছে ইউনিসেফ।
যে সব উপজেলায় শিশুর প্রতি সহিংসতার মাত্রা খুব বেশি সেগুলো শনাক্ত করে ওয়ার্ড ও কমিউনিটি পর্যায়ে বিশেষ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
শহর এলাকা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ অঞ্চল ও দুর্গম এলাকা যেখানে নাজুক পরিস্থিতিতে থাকা শিশুর সংখ্যা অনেক বেশি সে সব এলাকা খুঁজে খুঁজে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
শিশুরা যাতে নিজেরাই মানসম্মত সেবা খুঁজে নিতে পারে এবং সহিংসতার ঘটনা ঘটলে সে বিষয়ে অভিযোগ জানাতে পারে সে বিষয়ে উৎসাহিত করছে ইউনিসেফ। হেল্পলাইন ১০৯৮-এ ফোন করে তারা এসব সেবা নিতে পারে।
ইউনিসেফের সামাজিক সম্পৃক্তির অংশ হিসেবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলোই শারীরিক শাস্তি ও যৌন সহিংসতার বিষয়ে অভিযোগ করে থাকে।