যথাসময়ে জন্ম নিবন্ধন
প্রতিটি জন্মই মূল্যবান, প্রতিটি জন্মই নথিভুক্ত হওয়া উচিত
- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
চ্যালেঞ্জ
জন্ম নিবন্ধন সরকারের জাতীয় নীতিমালা পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে এই সেবা গ্রহণের সুযোগ ও তার গ্রহীতার সংখ্যার মধ্যে যে বিস্তর ব্যবধান তাতে জন্ম নিবন্ধন ব্যবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতি হোঁচট খাচ্ছে।
এখন পর্যন্ত পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মাত্র ৩৭ শতাংশের জন্ম নিবন্ধন হয়েছে। যার মানে দাঁড়ায়, পাঁচ বছরের কম বয়সী এক কোটি শিশু সরকারি হিসাবের বাইরে রয়ে গেছে।
সরকারি নিয়মে জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নবজাতকের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হয়। অথচ বেশিরভাগ মা-বাবাই এর গুরুত্ব বুঝতে পারেন না। তারা ছেলে-মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করার সময়, সাধারণত শিশুর বয়স যখন ছয় বছর সে সময় জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেন।
কীভাবে শিশুর জন্ম নিবন্ধন করতে হয় সে বিষয়েও জ্ঞানের অভাব রয়েছে। এ চিত্র আবার শহর ও গ্রামভেদে ভিন্ন। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সরকারি দপ্তর পর্যন্ত এসে সনদ নেওয়ার যাতায়াত খরচই অনেক বাবা-মায়ের জন্য মাথাব্যথা।
সেবাটির ব্যাপারে নারী ও মূলত কিশোরী মায়েরা তেমন অবগত নন। জন্ম নিবন্ধন হয়নি এমন শিশুদের পাঁচজন মায়ের মধ্যে মাত্র তিনজন নিবন্ধন প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানেন। কিন্তু তারপরেও উদাসীনতা শিশুর আইনি সুরক্ষাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
জন্মনিবন্ধন না থাকলে শিশু শ্রম আর বাল্য বিয়ে থেকে শিশুদের রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। শিশু অপরাধীও জন্ম সনদ ছাড়া শিশু হিসেবে আইনি সুবিধা পাবে না।
এর উপর মিয়ানমার থেকে থেকে শরণার্থী ও বিহারি শিশুদের নিবন্ধন না থাকাও উদ্বেগের বিষয়।
পাঁচ বছরের কম বয়সী এক কোটি শিশু সরকারি হিসাবের বাইরে রয়ে গেছে
জন্ম নিবন্ধন সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাওয়া যায় যা জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে

'যথাসময়ে জন্ম নিবন্ধন' ইউনিসেফ বাংলাদেশের মা ও ছোট শিশু কার্যক্রমের আওতায় একটি অগ্রাধিকার।
সমাধান
জন্ম নিবন্ধন সহজলভ্য করতে ইউনিসেফ কাজ করছে। যত দ্রুত সম্ভব নবজাতকদের নিবন্ধন যাতে হয় সেজন্য সহযোগীদের সঙ্গে কাজ চলছে।
শিশুকে প্রথম দফা টিকা দেওয়ার সময়ই যেন তার জন্ম নিবন্ধন করিয়ে নেয়া হয় সে বিষয়টি বাবা-মাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের।
স্থানীয় রেজিস্ট্রার শিশুর জন্মের তথ্য নথিভুক্ত করেন এবং দ্বিতীয় দফা টিকাদানের সময় সনদটি হস্তান্তর করা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি স্বাস্থ্য ও নিবন্ধনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন দপ্তরের আন্তঃসহযোগিতায় সম্পন্ন হয়।
এ কাজের মান বাড়াতে ইউনিসেফ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় জাতীয় আইনি কাঠামোর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বিনামূল্যের বিশ্বজনীন জন্ম নিবন্ধন সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাবে।
শহরাঞ্চলে ওয়ার্ড পর্যায়ে সরকার জন্মতথ্য নথিভুক্ত করতে ডিজিটাল কেন্দ্র স্থাপন করেছে। তবে এই সুবিধা আরও বিস্তৃত করলে সহজলভ্যতা বাড়বে। যার ফলে ওয়ার্ড কার্যালয়ের কাজের চাপও কমে আসবে।
জন্ম নিবন্ধন শিশু সুরক্ষা কার্যক্রমকেও শক্তিশালী করতে পারে।
জন্ম নথির বদৌলতে বাল্য বিয়ে, পাচার ও শিশু শ্রম থেকে বাচ্চাদের সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব। ইউনিসেফ শিশু অধিকার রক্ষায় এ সনদের ব্যবহার বাড়াতে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়কেও সহযোগিতা করে।
জন্ম সনদের পরিধি ও ব্যবহার আরও বাড়ালে কর্তৃপক্ষ যুদ্ধের মতো সহিংস পরিস্থিতিতে বা অভিবাসনের সময় শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে।