বাল্যবিয়ের অবসান
সামাজের ক্ষতিকর আচারগুলো বদলে দিতে হবে
- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
চ্যালেঞ্জ
শিশু বিবাহ একটি প্রথা যা নারীদের ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সামাজিক মূল্যবোধ ও অসম অবস্থানকে প্রতিফলিত করে।
বাংলাদেশে নারীদের প্রায়ই আর্থিক বোঝা হিসাবে দেখা হয়। শিশু বিবাহ ৩০ বছরে ধীরে ধীরে হলেও কমেছে।
দারিদ্র ও অশীক্ষা এক্ষেত্রে নির্ধারণী বিষয়, কিন্তু প্রমাণ বলে যে, সকল পটভূমি ও সামাজিক বিভাজনের মধ্যে বাল্যবিবাহ চর্চা করা হয়।
৫০ শতাংশের অধিক বাংলাদেশের নারী যাদের বয়স এখন ২০ এর মাঝামাঝি তাদের ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হবার আগেই বিয়ে হয়েছে। প্রায় ১৮ শতাংশের বিয়ে হয়েছে ১৫ বছরের নিচে।
দক্ষিণ এশীয় সংস্কৃতিতে সন্তানদের বিয়ের ক্ষেত্রে পিতা-মাতা মূল প্রভাব বিস্তার করে।
পরিবারের সম্মান রক্ষার ক্ষেত্রে নারীরা সাধারণত বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। একজন মেয়ে শিশু যখন যৌবনপ্রাপ্ত হয়, তাদের পিতা-মাতা তখন তাদের সতীত্ব রক্ষার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে।
বাল্যবিবাহ রোধ করার ক্ষেত্রে এটি হলো মূল বাধাঁ। কারন, সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, যেসব পিতা-মাতা মেয়ে শিশুদের বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়, তারা মেয়ে শিশুর বয়ঃসন্ধির শুরুতে যৌন নির্যাতনের ভয় অনুভব করে।
কিন্তু অনেক বিবাহিত কিশোরী দৈহিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয় বা এসবের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে। এসব কিশোরী মেয়েদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ বিশ্বাস করে যে, একজন স্বামীর তার স্ত্রীকে আঘাত করা যৌক্তিক।
বিবাহের বাইরে যৌন কার্যকলাপ শুরু করার ব্যাপারে মেয়েদের উপলব্ধিকে সামাজিক মূল্যবোধের/নিয়মকানুনের জন্য হুমকি হিসাবে দেখা হয়। ’পবিত্রতা’ ও ’সম্মান’- এ দুয়ের মধ্যে আপসের উপলদ্ধি থেকে তাদেরকে ’কলঙ্কিনী’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
যদিও, শিশুদের বিয়ে দেয়া এক ধরনের যৌন নির্যাতনের মধ্যে পড়ে বলে বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণ বিশ্বাস করে না। এ কারনে, যেসব কিশোরী মেয়েদের বিয়ে হয়, তারা আগাম গর্ভবতী হওয়া ও নেতিবাচক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে।
জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়েদের বাল্যবিবাহ ও পাচারের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।
এরূপ নিয়মকানুন/মূল্যবোধ, অবশেষে শিশুদের, বিশেষ করে মেয়েদের, বেঁচে থাকার বিকাশ, সুরক্ষা এবং অংশগ্রহণের বিষয়ে আপোষ করার ব্যাপারটিই প্রমান করে।

শিশুদের বিবাহ এক ধরনের যৌন নির্যাতন, এ বিষয়টি এখনও বিশ্বাস করেনা বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণ
সমাধান
সামাজিক আচরণ পরিবর্তনের বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ হিসাবে মেয়েদের জন্য বিয়ের বয়সকে বিলম্বিত করার সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে আমাদের কার্যক্রম তৈরি করা হয়েছে ।
ইউনিসেফ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করছে, এবং প্রতিটি পর্যায়ে মূল নীতি-নির্ধারক এবং অংশীজনদের সাথে জড়িত।
ইউনিসেফ এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের কারিগরী সহযোগিতায় নীতি-নির্ধারনী পর্যায়ে সরকার একটি জাতীয় কর্ম পরিকল্পনার (ন্যাশন্যাল প্ল্যান অফ এ্যাকশান) খসড়া প্রস্তুত করতে যাচ্ছে। মেয়ে শিশুদের বেড়ে উঠা ও উন্নতিলাভের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ নিশ্চিত করাই এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য।
অ্যাডভোকেসি পর্যায়ে, বাল্যবিবাহের বিষয়টিকে ধীরে ধীরে মূলধারার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, সুরক্ষা এবং দারিদ্র দূরীকরণ কর্মসূচির সাথে একীভূত করা হচ্ছে।
সম্প্রদায় পর্যায়ে ইউনিসেফ কিশোরী, পিতা-মাতা এবং বিশেষ করে বাবা, যারা বাল্যবিবাহ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, তাদের সাথে সার্বক্ষণিক আলোচনা করছে।
আমাদের কার্যক্রম শিশুদের বর্ধিত পরিবার এবং সম্প্রদায়ে তাদের কেয়ারগিভার, স্থানীয় ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং সরকারি প্রতিনিধি ও সামনের সারির কর্মীদের নিকট পৌঁছেছে।
মানুষের সাথে জড়িত হবার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহনমূলক থিয়েটার, সম্প্রদায়ভিত্তিক আলোচনা, উঠান বৈঠক, রেডিও ও টিভি নাটকের সিরিয়াল এবং কোনো অনুষ্ঠানের মধ্যে ফোনে আলাপ করা, সম্প্রদায়ভিত্তিক ঘোষণা এবং অন্যান্য বিষয়কে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
এছাড়াও সচেতনতা সৃষ্টি ও দক্ষতা বৃদ্ধি, বৃত্তির মাধ্যমে মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা, এবং মেয়েদের দরকষাকষি করা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা এবং এ বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করার ব্যাপারে আরো প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ইউনিসেফ শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে কাজ করছে যাতে করে বাল্যবিবাহ ও যৌতুক থেকে মেয়েদের রক্ষা করার আইনগুলো প্রয়োগ করা যায়।
মৌলিক সুযোগ-সুবিধা প্রতিষ্ঠায় ইউনিসেফ সহযোগিতা করে। যেমন, মাসিক স্বাস্থ্যবিধির সুবিধা ছাড়াও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা করা। এরূপ কার্যক্রম মেয়ে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে উপন্থিতি ও বিদ্যালয়ে তাদের ভর্তির বিষয়টির উন্নতি ঘটাতে পেরেছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে বিষয়টি বিবাহের বয়সকে বিলম্বিত করেছে।
সৃজনশীলতা ও শ্রেষ্ঠত্বের জন্য বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে ইউনিসেফের প্রচারণা পুরস্কৃত হয়েছে। আমরা পরিবারকে আরো কিছু প্রনোদনা প্রদানের মাধ্যমে বাল্যবিবাহের বিকল্প কিছু সৃষ্টির জন্য এখন কাজ করছি।