বাংলাদেশের শিশু
শিক্ষা থেকে সুরক্ষা -- শিশুদের জীবনে প্রভাব ফেলছে যে কারণগুলো
- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নয়নশীল দেশ। এখানে বাস ১৬ কোটি মানুষের। এ বিশাল জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ, অতএব ৬ কোটিরও বেশি শিশু।
আয়তনের দিক থেকে নিউইয়র্ক শহরের সমান হলেও বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি। বাংলাদেশের স্থল সীমানায় আছে ভারত ও মিয়ানমার।
এর ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে বয়ে যায় প্রায় ৭০০টি নদী, যা প্রবাহিত হয় দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ এবং সবচেয়ে উর্বর অঞ্চলগুলোর একটি।
মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলগুলো সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করে বাংলাদেশ এখন স্থায়ী উন্নয়নের যুগে প্রবেশ করেছে। কমিয়ে আনা হয়েছে ক্ষুধা, দারিদ্র, প্রাইমারি স্কুল অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে লিঙ্গগত বিভাজন এবং মায়েদের ও পাঁচ বছরের ছোট শিশুদের মৃত্যুহার। উন্নত করা হয়েছে পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন এর খাত।
অর্জন করা গেছে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে ব্যাপক ক্ষতি পোষাতে হয়। দুর্যোগের প্রভাবে শিশুদের মৃত্যু হয় প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অনেক বেশী । তারা আহত ও অসুস্থও হয়ে পরে বেশী।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে নষ্ট হয় ফসলের জমি এবং কমে যায় নিরাপদ পানির উৎস। ঘনঘন বন্যা বা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মানুষ ও তাদের সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে দেয়। গ্রামের মানুষ হারাতে বসে পরিবার, পশুপাখি, ঘরবাড়ি ও কাজের সুযোগ।
তারা গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয় এবং পাড়ি জমায় শহরে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের ঠাই হয় বস্তিগুলোতে, যেখানে নেই মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানোর সুযোগ।
গত দুই দশক ধরে দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে নগরায়ন। দুর্যোগের পাশাপাশি কাজের সন্ধানে শহরে আসে গ্রামের মানুষ । বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ও অন্য শহরগুলোতে এখন প্রায় ৫ কোটি মানুষের বসবাস। বিষেশজ্ঞদের ধারনা মতে আরো ৩০ বছর পর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই বাস করবে শহরে।
বাংলাদেশে অনেক দ্রুততার সাথে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যু হার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু নবজাতকদের মৃত্যু এই সাফল্যতে বাধা দিচ্ছে। নবজাতক বা এক মাসের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর উচ্চ সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষ ১০টি দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি।
পুষ্টিহীনতার কারনে বয়সের অনুপাতে বেঁটে থেকে যাওয়াকে খর্বকায়ত্ব বলা হয়। আগের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে খর্বকায়ত্ব কমিয়ে আনার হার।
সবার জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি এখনও। বাংলাদেশে অনেক সংখ্যক মানুষ মলমূত্র বা আর্সেনিক দ্বারা দূষিত পানি পান করে। স্যানিটেশন ব্যাবস্থার অনেক উন্নতি সত্ত্বেও, সুরক্ষিত টয়লেট ও হাত ধোয়ার সুবিধা পাচ্ছে না অনেকেই।
জন্ম থেকে আট বছর পৌঁছানোর মধ্যের সময়টুকু শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেক মা-বাবা প্রারম্ভিক যত্ন ও বিকাশের নিয়মগুলোর সাথে পরিচিত নন। এর সাথে জড়িত আছে পুষ্টি, শিক্ষা, খেলাধুলা এবং শিশুর শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা।
প্রশিক্ষণের অভাবে ছোট শিশুদের মধ্যে প্রতিবন্ধীতা সনাক্ত করতে পারেননা অনেক চিকিৎসক । কিন্তু সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে এর প্রভাব অনেক ক্ষেত্রে কমিয়ে আনা যায়।
যে শিশুদের প্রাইমারি স্কুলে পড়ার বয়স হয়েছে, তাদের অনেকেই উচ্চ মানের শিক্ষা এবং সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশের বেশিরভাগ স্কুলে কিশোরী ও প্রতিবন্ধি শিশুদের জন্য টয়লেট সুবিধা নেই। এ বয়সী শিশুদের মধ্যে যারা স্কুলে যায়না, তাদের বেশীরভাগের বাস শহরের বস্তিগুলোতে অথবা দুর্গম বা দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে।
বাংলাদেশে প্রাথমিক স্কুল পার করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছানোর হার প্রশংসনীয়। কিন্তু মাধ্যমিক পর্যায়ে এসে ঝরে পরে বিপুল সংখ্যক ছাত্র ছাত্রীরা। মেয়ে শিশুরা নিরাপত্তার অভাব এবং যৌন হয়রানির কারনে মাঝে মাঝে পড়ালেখা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। বিকল্প শিক্ষা ব্যাবস্থায় এখনও রয়েছে অনেক ঘাটতি।
শিশু শ্রমের সাথে জড়িত আছে ১৭ লাখ শিশু। প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের বয়স ৬ থেকে ১১ বছরের মধ্যে। এদের বেশিরভাগই ছেলে শিশু। সল্প আয়ের পরিবারের মেয়ে শিশুরা গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে থাকে এবং তাদের সঠিক সংখ্যা জানা কঠিন।
বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার আগের তুলনায় কমেছে, কিন্তু সমাজে এটি প্রথাটি এখনও ব্যাপকভাবে প্রচলিত। বিবাহিত কিশোরীরা প্রায় পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।
কিশোর-কিশোরীদের জন্ম হারের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে একটি। বয়সন্ধিকাল পেরোচ্ছে এমন শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও ওদের বয়সের সাথে সামঞ্জস্য স্বাস্থ্যব্যাবস্থা। দেশের উন্নয়ন নীতিমালায় প্রতিফলিত হতে হবে কিশোর-কিশোরীদের কথা ও অভিজ্ঞতা। সমাজ বদলেও চাই তাদের পদার্পণ।
শিশু অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। শিশু বা শিশু অপরাধীদের নিয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে সংবেদনশীলতার অভাব আছে। এধরনের কাজ শিশু বিষয়ে জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গীতে প্রভাব ফেলে বলেই মিডিয়াকে সচেতন করা প্রয়োজন।
শিশুদের সামাজিক সুরক্ষায় প্রয়োজন জরুরী বিনিয়োগ। এর আওতায় আনতে হবে প্রতিবন্ধী শিশুদের, যাদের ওপর তথ্য সংগ্রহে সীমাবদ্ধতা আছে এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা বিদ্যমান সেবাগুলো সম্বন্ধে জানেন না।