রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয়শিবিরে জলন্ত আগুন থেকে পালাতে গিয়ে জুনায়েদ পরিবার থেকে বিছিন্ন হয়ে যায়
বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী বসতিগুলোর মধ্যে অন্যতম এই আশ্রয়শিবিরে বিপর্যয়কর অগ্নিকাণ্ডে সহায়তা দিতে ইউনিসেফ এবং এর সহযোগীরা প্রচুর পরিমাণে ত্রাণ সহায়তা কায©ক্রম চালাচ্ছে

- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
২২ শে মার্চ বিকেলে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয়শিবিরের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ফলে তৈরি হওয়া আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে জুনায়েদ ও তার ভাইবোন দ্রুতই বিছিন্ন হয়ে পড়ে। আগুণের লেলিহান শিখা চারটি আশ্রয়শিবিরের চারিদিকে অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং এতে কয়েক হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়।
আশ্রয়শিবিরে বসবাসকারীদের কেউ কেউ তাদের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল সরিয়ে নিতে পেরেছে। আবার অনেকে শুধু তাদের প্রাণ নিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছে।

জুনায়েদ তার পরিবারের সাথে পুনরায় মিলিত হয়
দুঃখজনক এই ঘটনার পরের দিনও মাটি ছিল বেশ উত্তপ্ত । বাতাস ছিল অত্যন্ত দূষিত এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। এসব ধ্বংসাবশেষ ও ছাঁইয়ের মধ্যে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মাঝে আশার সঞ্চার করেছিল এমন সব গল্প প্রকাশ পেতে শুরু করে।
বারো বছর বয়সী জুনায়েদ যখন শরণার্থী আশ্রয়শিবিরের আশেপাশে ইউনিসেফ-কর্মকর্তাদের দেখে, তখন সে তাদের সাথে দেখা করতে, পরিচিত মুখগুলো দেখতে এবং আশ্রয়শিবিরের বাইরে থেকে আসা সহায়তার জন্য ছুটে আসে।
জুনায়েদ বলে,“ আগুনে আমরা সব হারিয়েছি। সেই রাতে আমার বাবা ও আমি আমার চাচার সাথে ছিলাম। কিন্তু আমার দুই ভাইবোনের কী হয়েছিল তা আমরা জানতাম না। আমরা খুব চিন্তিত ছিলাম। পরের দিন আমরা আবার একত্রিত হয়েছিলাম। এতে আমরা খুবই আনন্দিত হয়েছিলাম ”।
এই দুর্যোগ পরিস্থিতি একটু স্থিতিশীল হওয়ায়, ইউনিসেফ এবং এর সহযোগীরা পুনর্নির্মাণের প্রচেষ্টায় একটি বড় পরিকল্পনা করছে। এর জন্য বাইরের সহযোগিতা প্রয়োজন।
জুনায়েদের মতো অনেক শিশু তাদের শিক্ষণ কেন্দ্রগুলোকে পুড়ে ছাই হয়ে যেতে দেখেছে। পরবর্তীতে কী হতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে তারা শঙ্কিত। তাদের বাড়িঘর, তাদের জীবন এবং কমি্উনিটি পুনর্নির্মাণে কত সময় লাগবে- এ বিষয়েও তারা চিন্তিত?
জুনায়েদ জানায়,“আমি যে শিক্ষণ কেন্দ্রে আমার বন্ধুদের সাথে খেলতাম, সেখানে যেতে আমি খুব পছন্দ করতাম। তবে, সবকিছু শেষ হয়ে গেল। "

হারিয়ে যাওয়া শিশুদের আশ্রয় দেওয়া
প্রথম ২৪ ঘন্টায় ইউনিসেফের তাৎক্ষণিক উদ্বেগ ছিল তাদের পরিবার থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়া বা নিখোঁজ হওয়া শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। সেই রাত্রিতে ইউনিসেফ এবং এর সহযোগীরা ৭০ জনেরও বেশি হারিয়ে যাওয়া শিশুকে আশ্রয় দেয়। ঘটনার পরদিন দুপুরের মধ্যে প্রায় অর্ধেক শিশুকে সফলভাবে তাদের পরিবারের মিলিত হতে পারে।
নিখোঁজ শিশুদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা সহযোগী এবং কমিউনিটির স্বেচ্ছাসেবীরা এখনও অনুসন্ধান প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে ৪৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী গৃহহীন হয়েছে যাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই শিশু। এই অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১০ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে। শিশুসহ কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। শতাধিক আহত হয়েছে এবং অগ্নিকাণ্ডের দু'দিন পরেও ৩০০ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।
মিয়ানমারে নিপীড়ন থেকে পালানোর পরে, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশু এবং তাদের পরিবার খুব কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেদের জীবন গড়ার জন্য লড়াই করেছে। এখন তারা দ্বিতীয়বারের মতো সবকিছু হারিয়েছে।
কক্সবাজার ফিল্ড অফিসের ইউনিসেফ প্রধান এজাতুল্লাহ মাজিদ বলেন, “এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত সকল রোহিঙ্গা শিশু এবং পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা প্রকাশ করছি। আমরা পূর্ণ প্রতিশ্রুতি দিতে চাই যে, ইউনিসেফ সাহায্যের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আমাদের সামনের পথ বেশ কঠিন। তবে আমরা আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুনর্নির্মাণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি।”
