রাস্তার পাশে একা রাত কাটাল আট বছরের সোহিদা
বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৬,০০০ রোহিঙ্গা শিশু আশ্রয়হীন

- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
বাংলাদেশের কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে আগুন লেগে যখন সোহিদার ঘর পুড়ছিল, সে সময় আট বছরের এই শিশু ছিল খেলার মাঠে। মেয়েটি যখন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে এবং চারপাশে সবাইকে ছোটাছুটি ও চিৎকার করতে দেখল তখন সে বিপদ বুঝতে পারল। ভয়ে তার বুক কাঁপতে লাগল। আগুনের ভয়ে পালাতে থাকা লোকজনের সঙ্গে সোহিদাও ছুটতে থাকল। রাত নেমে আসায় তারা রাস্তার পাশে গিয়ে থামল। অচেনা এক ব্যক্তি তাকে কিছু খাবার দিল। ছোট মেয়েটি খোলা আকাশের নিচে সেখানেই একা রাত পার করল।
এই অল্প বয়সেই সোহিদা তার জীবনে অনেক মর্মান্তিক ঘটনা দেখেছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী যখন রোহিঙ্গাদের ওপর অবর্ণনীয় সহিংসতা ও নিষ্ঠুরতা চালায়, সে সময় তাঁর বাবা-মাকে হত্যা করা হয়। মিয়ানমারের সেনাদের ওই দমনপীড়নের মুখে সে সময় সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা ঘর-বাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। সেই থেকে সোহিদার মতো প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী এলাকাজুড়ে শরণার্থী শিবিরগুলোতে বসবাস করছে। আর সেখানেই সোহিদার মতো স্বজন হারানো শিশুরা এই গোষ্ঠীর ধর্মীয় নেতাদের তত্ত্বাবধানে বড় হচ্ছে।

অগ্নিকাণ্ডের পরদিন, ইউনিসেফের তৈরি করা একটি অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে সোহিদার ঠাঁই হয়।
‘আমার ভয় হচ্ছিল যে আমি আগুনে পুড়ে মারা যাব,’ ভীত কন্ঠে বলল সোহিদা।
ইউনিসেফের আশ্রয় শিবিরের একজন সমাজকর্মী সোহিদাসহ আগুনের ঘটনায় মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত শিশুদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছেন। যে কোনো ধরণের সংকটে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া শিশুদের বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে থাকেন এই সমাজকর্মীরা।
সোহিদা আবার তার পালক বাবাকে ফিরে পেয়েছে। কিন্তু মাথা গোজার ঠাঁই ঘরটা আগুনে পুড়ে যাওয়ায় তাদের সামনের দিনগুলো কঠিন হয়ে উঠেছে।
আরো একবার গৃহহীন
এই অগ্নিকাণ্ডে সোহিদার মতো ১২ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় হারিয়েছে। তাদের অর্ধেকই আবার শিশু। রোহিঙ্গা শিশু ও তাদের পরিবারকে গুরুত্বপূর্ণ সেবা দেয় এমন বেশ কয়েকটি স্থাপনাও ধ্বংস হয়ে গেছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০টি শিক্ষা কেন্দ্র, অন্তত একটি নিউট্রিশন সেন্টার এবং বেশ কয়েকটি স্যানিটেশন (পয়:নিষ্কাশন) ফ্যাসিলিটিজ।
আগুনে দগ্ধ এবং এ ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের জরুরি স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার জন্য দুটি মোবাইল মেডিকেল টিম পাঠিয়েছে ইউনিসেফ। তাছাড়া আগুনে সব হারানোক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে পারে সেজন্য ইউনিসেফের তরফ থেকে তাদের জন্য ‘ডিগনিটি কিটস’ পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সাবান, টুথব্রাশ ও টুথপেস্ট এবং স্যানিটারি প্যাডের মতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য আবশ্যক অন্যান্য পণ্য।

আগুনে নিঃস্ব হয়ে পড়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আবার একটু মাথা গোজার ঠাঁই করে দেওয়াসহ পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে। এই শরণার্থীরা তাদের সুরক্ষা, খাবার, পানি, আশ্রয় ও স্বাস্থ্য সেবা- সব কিছুর জন্যই পুরোপুরিভাবে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভর করে।
এখন ইউনিসেফের কাছে অগ্রাধিকার হচ্ছে, রোহিঙ্গা শিশুদের সেবা প্রদানের স্থাপনাগুলো মেরামত ও পুনর্গঠন করা। যাতে সোহিদার মতো শিশুরা আবার স্কুলে যেতে পারে এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা, পুষ্টি ও পয়ঃনিষ্কাশন সেবা (স্যানিটেশন) দেওয়া যায়।
