মহামারীকালে অসহায় মানুষদের সেবা দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা

বাংলাদেশে যতটা সম্ভব বেশি মানুষের কাছে কোভিড-১৯ এর টিকা পৌঁছানো নিশ্চিত করতে ইউনিসেফের স্বেচ্ছাসেবীরা সহায়তা করছে।

আদেল সারকোজি
A girl and a boy talking
UNICEF/UN0537587/Kiron
02 ডিসেম্বর 2021

ঢাকা, বাংলাদেশ - সাদমান ও মুক্তা আলাদা আলাদা জায়গা থেকে এসেছে। বাইশ বছর বয়সী সাদমান বাংলাদেশের একটি ছোট গ্রামে বেড়ে উঠেছেন। অন্যদিকে, ২৪ বছর বয়সী মুক্তা সারাটা জীবন কাটিয়েছেন দেশের ব্যস্ততম রাজধানী ঢাকায়। তবে, তাদের মধ্যে অনেক মিলও রয়েছে। তারা দুজনেই শিক্ষার্থী এবং উভয়েই পুষ্টি ও খাদ্য বিষয়ে পড়াশোনা করছে। তবে সবচেয়ে বড় মিল হলো যে কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন সময়ে দেশের নাগরিকদের সহায়তা করতে তারা দুজনেই বদ্ধপরিকর।

সাদমান এবং মুক্তা উভয়েই ইউনিসেফের স্বেচ্ছাসেবক। প্রথমে তারা শিশু টিকাদান প্রচারাভিযানকে সহযোগিতা করেছে এবং অতি সম্প্রতি কোভিড-১৯ এর টিকা নিতে অসহায় নাগরিকদের তারা সহায়তা করছে।

প্রায় এক বছর ধরে স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে কর্মরত সাদমান বলেন, “শিশু এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের আমি সাহায্য করতে চেয়েছিলাম।”

মানুষের জীবনে কোভিড-১৯ এর প্রভাব সম্পর্কে তরুণ এই দুইজন স্বেচ্ছাসেবীর সরাসরি অভিজ্ঞতা রয়েছে। সাদমান জানান যে, গত বছর তিনি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছিলেন। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হবার পর প্রায় একমাস ধরে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট কীভাবে তাকে ভুগিয়েছিল দিয়েছিল সেটা ভাবতে গেলে তার গা এখনও কাঁটা দেয়।

অন্যদিকে মুক্তা জানান, মহামারীটি তার পরিবারে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছিল। মুক্তা আরও জানান, “আমার পরিবার আর্থিক সংগ্রাম করেছিল। কারন, আমার বাবার আয় এসময় অর্ধেকে নেমে গিয়েছিল।”

দ্বারে দ্বারে যাওয়া

স্বেচ্ছাসেবীরা সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছে। এছাড়াও, অসহায় বয়স্ক ব্যক্তি, বস্তিতে বসবাসকারী পরিবার এবং অনলাইনে কোভিড-১৯ টিকাদান নিবন্ধন করতে আগ্রহী, অথচ যাদের মোবাইল ফোন কিংবা ইন্টারনেট সুবিধা নাই তরুন সেচ্ছাসেবীরা তাদের সাথে কথা বলেছেন।

টিকা নিতে ভয় পায় বা কোভিড-১৯ সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না এমন মানুষজনের কাছে স্বেচ্ছাসেবীরা তথ্য সেবা পৌঁছে  দিচ্ছেন।

A boy talking to a man
UNICEF/UN0537600/Kiron
সাদমান (বামে) জমির নামক লোকটিকে নিয়ে কোভিড-১৯ টিকা কেন্দ্রে যাচ্ছেন।

সাদমান জানান, “আমার গ্রামের কাছে একটি নদী আছে এবং নদীর ধারে বেশ কিছু মানুষ বাস করে।” সামদান আরও যোগ করেন, “এদের অনেকেই করোনাভাইরাস সম্পর্কে জানত না। সে কারনে আমি তাদের কোভিড-১৯ টিকার জন্য নিবন্ধন করতে সহায়তা করি। তাদেরকে সহায়তা করতে পেরে আমার ভালো লেগেছে।”

টিকা নেওয়ার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা এবং মানুষজনকে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে সহায়তা করার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরা অসহায় এমনকি উদ্বিগ্ন মানুষজনকে কোভিড-১৯ টিকাদান কেন্দ্রে নিয়ে যান। সাদমান এবং মুক্তা প্রায় ৮০ জনকে টিকা দেওয়ার জন্য নিবন্ধিত করেছেন এবং প্রায় ১২ জন মানুষকে সশরীরে টিকা কেন্দ্রে নিয়ে গেছেন।

A girl and a woman
UNICEF/UN0537599/Kiron
নাজমাকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করতে মুক্তা (বামে) তার ফোন ব্যবহার করছে।

মুক্তা যাদেরকে অনলাইনে নিবন্ধন করতে সাহায্য করেছিল ৫০ বছর বয়সী নাজমা তাদের একজন। নাজমা জানান, “স্মার্টফোনের আমার কোন অ্যাক্সেস ছিল না। টিকা দেওয়ার জন্য কীভাবে নিবন্ধন করতে হয় আমি সেটা জানতাম না। কোথায় গেলে সাহায্য পাবো আমি সেটাও জানতাম না।” নাজমা আরও বলেন, “আমি টিকা নাও পেতে পারি- এমনটি ভেবে আমি ভয় পেয়েছিলাম।”

ভাললাগার একটা অনুভূতি

সাদমানের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়ার আগ পর্যন্ত ৬৫ বছর বয়সী জমিরও একই অবস্থার মধ্যে ছিলেন। জমির জানান, “আমি সবসময়ই টিকা নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোথায় এবং কীভাবে এই টিকা পাবো তা জানতাম না।” জমির আরও বলেন, “এখন, টিকা নেওয়ার পর আমি ভালো বোধ করছি।”

A woman getting vaccine
UNICEF/UN0537622/Kiron
একজন নারী কোভিড-১৯ টিকা নিচ্ছেন।

২০২১ সালের নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১২ শতাংশকে সম্পূর্ণরূপে টিকা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে মুক্তা এবং সাদমানের মতো প্রায় ৩২০০ ইউনিসেফ-সমর্থিত স্বেচ্ছাসেবীদের কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোভিড-১৯ এর টিকা দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করতে তারা ৮৮,০০০ জনেরও বেশি মানুষকে সহায়তা করেছে।

A girl calling a women
UNICEF/UN0537612/Kiron
মুক্তা (বামে) জানান তিনি ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষের সাথে দেখা করতে এবং টিকা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে পছন্দ করেন।

মুক্তা জানান, “আমি প্রচুর অসহায় মানুষকে দেখেছি।” মুক্তা আরও বলেন, “মানুষের বাড়িতে গিয়ে টিকা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে আমি পছন্দ করি। আমি তাদের সহায়তা করতে ভালোবাসি।”


২০১৯ সালে চালু হওয়া ইউনিসেফ বাংলাদেশ ভলান্টিয়ার ইনিশিয়েটিভ, ইউনিসেফের গ্লোবাল ভলান্টিয়ার ইনিশিয়েটিভ (জিভিআই)-এর অংশ। বাংলাদেশে ইউনিসেফের কাজ এবং কোভিড-১৯ মহামারী নিয়ে ইউনিসেফের কাজ সম্পর্কে আরও জানুন।