বাংলাদেশ যখন বন্যা-বিধ্বস্ত তখন খাবার ও পানি ছাড়াই কয়েকদিন ধরে ট্রাকে আশ্রয় নিয়ে আছে আকিল
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ১৬ লাখ শিশু ও তাদের পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ায় জরুরি ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে এসেছে ইউনিসেফ

- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
আকিল ও তার দুই বোন ফারিহা ও সামিয়া তাদের বাবার ট্রাকে গাদাগাদি করে আছে। এখন এটাই তাদের একমাত্র আশ্রয়। কারণ বন্যায় বিধ্বস্ত বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল।
আকিল বলে, “গত তিন দিন ধরে আমরা ট্রাকেই থাকছি।’
ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট উন্মত্ত বন্যার পানিতে সিলেটের কোম্পানিগঞ্জে তাদের বাড়ি তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে তাদের বাড়ির সব জিনিসিপত্র। প্রথমে তারা স্কুলে আশ্রয় নেবে বলে আশা করেছিল। স্থানীয় স্কুল ভবনটি বন্যার্তদের অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু সেখানে তাদের আশ্রয় নেওয়ার মতো জায়গা নেই। আতঙ্কিত এই তিন শিশু ভাইবোন ও তাদের বাবা-মা একটি নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটছে। কিন্তু তারা সঙ্গে করে পানি, খাবার বা জামা-কাপড় কিছুই আনতে পারেনি।
বন্যায় সব দোকানপাট থাকায় খাবার ও পানি ছাড়াই তাদের দুই দিন কেটেছে। ক্ষুধা ও পানির পিপাসা সহ্যের সীমা পার হয়ে যেতে থাকায় তাদের আতঙ্ক আরও বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত যখন তারা একটি দোকান খোলা পেল সেখানে ছোট এক বোতল পানির দাম চাওয়া হলো ১০০ টাকা (১.১০ মার্কিন ডলার)। পাঁচ জনের একটি পরিবারের পিপাসা মেটানোর জন্য ছোট ওই পানির বোতলের এই দাম ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে।
শিশুদের জন্য ত্রাণের জরুরি প্রয়োজন
এই দুর্দশা ও আতঙ্কের মধ্যেও আকিল ও তার বোনেরা কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে এটা জেনে যে, ট্রাকে অন্তত তাদের মাথার ওপর একটি ছাদ আছে। তাদের বেশি চিন্তা হচ্ছে সেইসব আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের জন্য, যাদের কিছুই নেই। গ্রামের অন্যান্য বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে তারা। এটা তাদের ভয়ও আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ধরনের অনশ্চিয়তার সময়ে জরুরি ত্রান সহায়তা বড় ধরনের স্বস্তি এনে দেয়। তারা এখন অল্প কিছু খাবার ও পানি পেয়েছে। কিন্তু পুরো পরিবারের কয়েক দিন কাটানোর জন্য তা মোটেই যথেষ্ট না।

ইউনিসেফ ইতোমধ্যেই চার লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করেছে। এর মাধ্যমে ৮০ হাজার পরিবার এক সপ্তাহের জন্য বিশুদ্ধ পানির যোগান পাবে। ইউনিসেফ বাংলাদেশ সরকারের জরুরি ত্রাণ তৎপরতায় সহায়তা দিতে কাজ করে যাচ্ছে। কয়েক লক্ষ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ১০,০০০-এর বেশি পানির জার এবং নারী ও কিশোরীদের জন্য কয়েক হাজার হাইজিন কিট (প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি সরঞ্জাম) সরবরাহ করার লক্ষ্যে কাজ করছে ইউনিসেফ। এছাড়াও বন্যা কবলিত জেলাগুলোর স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে সরবরাহ করার জন্য জরুরি ওষুধপত্রও ক্রয় করছে ইউনিসেফ।
সিলেট বিভাগের ৯০ শতাংশ স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র বর্তমানে বন্যায় প্লাবিত। এদিকে বন্যার্তদের মধ্যে পানিবাহিত রোগ বাড়তে শুরু করেছে। শিশুরা পানিতে ডুবে যাওয়ার বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে, যা বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর একটি অন্যতম বড় কারণ।

আশায় বুক বেঁধে আছে আকিল
আকিল ও তার পরিবার যখন ট্রাকে আশ্রয় নিয়েছে, তখন ৩৬,০০০-এর বেশি শিশু তাদের পরিবারের সঙ্গে জনাকীর্ণ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ঠাঁই নিয়েছে।
যদিও আকিল, ফারিহা ও সামিয়া বন্যায় সবকিছু হারিয়েছে, তারা কিন্তু আশা ছাড়েনি। তারা নতুন করে তাদের ঘর বানাতে চায়, আবার গ্রামের সবার সঙ্গে মিলিত হতে এবং স্কুলে ফিরে যেতে চায়।
দুর্গত শিশু ও তাদের পরিবারগুলোকে জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম ও সেবা দিতে এবং জরুরী ত্রাণ তৎপরতা চালাতে ২৫ লাখ ডলারের তহবিলের জন্য আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।