পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বন্যার পানি পাড়ি দেয় এমা
বাংলাদেশে বন্যার কারণে স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিশুরা যাতে পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত না হয় তা নিশ্চিত করতে সরকার ও অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে ইউনিসেফ

- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
কয়েক বছরের মধ্যে সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চলে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং এ অঞ্চলের পাঁচটি জেলায় গ্রামাঞ্চলের মধ্যকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ল্যাট্রিনগুলো তলিয়ে যাওয়ায় সেখান থেকে কূয়া ও পানি সরবারহের অন্যান্য আধারগুলি দূষিত হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতি শিশু ও তাদের পরিবারকে বিশুদ্ধ পানি পাপ্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে। সব মিলিয়ে ১৫ লাখের বেশি শিশু পানিবাহিত রোগ, পানিতে ডুবে যাওয়া ও অপুষ্টির বাড়তি ঝুঁকিতে পড়েছে।
দুঃখজনকভাবে, ১৫ বছরের কম বয়সী তিনজন শিশু ঝড়ের সময় বজ্রপাতে মারা গেছে। বন্যার পাশাপাশি ওই অঞ্চলে মুষলধারায় বৃষ্টিও শুরু হয়েছে।
সিলেট ও সুনামগঞ্জে স্কুল বন্ধের কারণে এমার মতো হাজার হাজার শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুনামগঞ্জে ইউনিসেফের সহায়তায় পরিচালিত ৩০টিরও বেশি শিক্ষা কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ১৮ মাস স্কুল বন্ধ থাকার পর, এই বন্যার কারণে আবারও শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।

অস্থায়ী শ্রেণিকক্ষ
শিক্ষকরা ব্যক্তিগতভাবে বাড়িতে পাঠদানের মাধ্যমে দুর্যোগের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। কিন্তু এর মানে শিক্ষার্থীদের বন্যার পানি পেরিয়ে পড়তে আসতে হয়।
পানিতে ডুবে যাওয়ার ভয় উপেক্ষা করে প্রতিদিন সকালে ক্লাসে যেতে হাঁটু পর্যন্ত পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে যায় এমা। শিক্ষকের কাছে পৌঁছুতে তার জামা- পায়জামা ভিজে যায়। তাই সে ভেজা কাপড় বদলে ফেলার জন্য বাড়তি একসেট পোশাক সঙ্গে নেয়।
এমা বলে, “বন্যায় আমাদের স্কুল প্লাবিত। এ জন্য কারো বাড়িতে গিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হয়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার জন্য আমাদের বন্যার পানি পার হতে হয়। পানি দিয়ে হেঁটে যেতে সবসময় ভয় লাগে।”
শিশু ও তাদের পরিবারের জরুরি স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, পুষ্টি, বিশুদ্ধ পানি এবং শিক্ষার চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ সরকার ও অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে ইউনিসেফ।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, “মানুষের জীবন, ঘরবাড়ি ও স্কুলের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। অন্যান্য বেশিরভাগ দুর্যোগের মতো এই দুর্যোগেও শিশুরাই সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে। শিশুদের সুরক্ষা দিতে ও তাদের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে ইউনিসেফ মাঠ পর্যায়ে সরকারকে সহায়তা প্রদান এবং স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।”

পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইউনিসেফের কার্যক্রম
শিশু ও তাদের পরিবার যাতে বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উপকরণগুলো পায় তা নিশ্চিত করতে ইউনিসেফ পানি, সাবান, পানি পরিশোধন ট্যাবলেট, জেরি ক্যান, স্যানিটারি ন্যাপকিন ও বালতিসহ স্যানিটেশন উপকরণ সরবরাহ করে সরকারকে সহায়তা দিচ্ছে। ইউনিসেফ আগে থেকেই ৬-১০ বছর বয়সী শিশুদের জন্য জরুরি শিক্ষা উপকরণও প্রস্তুত রেখেছে, যার মাধ্যমে অবিলম্বে ১০ হাজারেরও বেশি শিশুকে শিক্ষা সহায়তা দেওয়া যাবে।
শিশুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমাজকর্মীরা যাতে প্রস্তুত থাকে তা নিশ্চিত করতে ইউনিসেফ সমাজসেবা অধিদপ্তরের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। শিশুদের পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধে কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানোর বিষয়টিকে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা কার্যক্রমের কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে জরুরি শুকনো খাবারের মজুত নিশ্চিত করা, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি ও শিশুদের শিক্ষা উপকরণ নিরাপদে সংরক্ষণ করার বিষয়ে অংশীদার ও স্থানীয় সরকারি কর্মীদের সঙ্গে কাজ করা।