প্রতিবন্ধী শরণার্থী শিশুদের মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে একটি ব্যবহারযোগ্য টয়লেট ইরফানের জীবনে পরিবর্তন এনেছে

- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে প্রায় পাঁচ বছর ধরে বাস করছে নয় বছর বয়সী ইরফান। ২০১৭ সালে নিজেদের দেশ মিয়ানমারে নির্যাতন ও সহিংসতার মুখে পালিয়ে আসে ইরফান ও তার পরিবার। আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে চলে আসে তারা। প্রতিবন্ধিতা নিয়ে জন্ম নেওয়া ইরফানের জন্য এই যাত্রা ছিল বড় কষ্টের, এত পথ হেঁটে আসাটা তার জন্য ছিল খুবই কঠিন। পুরো পথ ইরফানকে তার বড় ভাই পিঠে করে নিয়ে আসে।
তবে ইরফান ও তার পরিবার শরণার্থী শিবিরে বসবারের সুযোগ পাওয়ার পরও শিশুটির প্রতিবন্ধিতা নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামের শেষ হয়নি। পাহাড়ি ঢালে গড়ে তোলা শরণার্থী শিবিরে চলাচল সুঠামদেহী মানুষের জন্যও খুব একটা সহজ নয়। বিশেষ করে বর্ষা মওসুমে এটা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। ভূমি ধস ও বন্যা হয়ে ওঠে নিত্যদিনের দুর্যোগ।
বাবা-মা হারানো ইরফান থাকে তার বড় ভাই, ভাবী ও শিশু ভাতিজির সঙ্গে। জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার পরিবারের সদস্যদের সহায়তা দরকার হয়। ইরফানের টয়লেট ব্যবহারের প্রয়োজন হলে, তার ভাই প্রতিবারই তাকে কোলে করে পাহাড়ি পথ বেয়ে কাছের কোনো টয়লেটে নিয়ে যেতে হয়। ইরফান যদি নিজে যাওয়ার চেষ্টা করতো প্রায়ই পড়ে গিয়ে আঘাত পেত ।
ইরফানের ভাই বলেন, ‘ইরফানের মতো শিশুদের বেঁচে থাকাটা খুব কঠিন। যতটুকু সম্ভব আমি সাহায্য করি। কিন্তু এটা তার ও আমার দুজনের জন্যই হতাশাজনক।’
ইরফানের মতো শিশুসহ শরণার্থী শিবিরে যেসব প্রতিবন্ধি ব্যক্তি আছে, তাদের প্রয়োজনগুলো মেটানোর জন্য কাজ করছে ইউনিসেফ ও অংশীদাররা। ইতিমধ্যে হাজারখানেক প্রতিবন্ধিবান্ধব টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। ইরফানের ঘটনাটি জানার পরই তাদের ঘর সংলগ্ন এ ধরনের একটি টয়লেট নির্মাণ করা হয়। এখন ইরফান এধরেণের সেবা সহজেই পাচ্ছে।
এটা ইরফানের জীবনে একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। আরেকজনের সহায়তা ছাড়াই টয়লেট ব্যবহার করতে পারায় এখন সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে।

ইরফান বলে, ‘আমি খুশি যে, নতুন ল্যাট্রিন আমি নিজে নিজেই ব্যবহার করতে পারছি।’
এমনকি ইরফান এখন নিয়মিত শিক্ষা কেন্দ্রে (লার্নিং সেন্টার) যাওয়ার বিষয়েও আত্মবিশ্বাসী। ক্লাস চলাকালে টয়লেট ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে- এই ভয়ে সে মাঝে মাঝেই শিক্ষা কেন্দ্রে যেতে চাইত না। কিন্তু ঘরের কাছে শিক্ষা কেন্দ্রের পাশাপাশি ঘর পাশে নতুন টয়লেট হওয়ায় ইরফানের এখন আর কোনো দুশ্চিন্তা নেই।
শিক্ষা কেন্দ্রে ইরফানের প্রিয় বিষয়গুলো হলো, ইংরেজি, গণিত ও বার্মিজ। এক দিন বড় হয়ে শিক্ষক হতে চায় সে।
ইরফান বলে, ‘সবাই শিক্ষককে শ্রদ্ধা করে। তাই আমি একজন শিক্ষক হতে চাই। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি আমার মতো অনান্য শিশু এবং যারা এখনও শিক্ষা কেন্দ্রে আসতে পারেনি তাদের সহায়তা করতে পারবো।’
প্রতিবন্ধি শিশুদের খুঁজে বের করা এবং তাদের সেবা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সেবাদান কেন্দ্রগুলোতে পাঠানোর বিষয়ে শিক্ষক ও কমিউনিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ইরফানের মতো শিশুদের জন্য সমতাভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি এবং মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।