ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’-এর আতঙ্কের মাঝে সদ্য জন্ম নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশু হোসনে আরা ও তার মা হাসিনা
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলো পার হয়ে যাওয়ার জন্য উদ্বেগ নিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী মা হাসিনা ও তার একদিন বয়সী শিশু হোসনে আরার অপেক্ষা

- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
বাংলাদেশের কক্সবাজারের শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শরণার্থী হাসিনা বলেন, “আমি গত চব্বিশ ঘণ্টা ধরে আনন্দ ও উদ্বেগের মিশ্র অনুভূতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।” ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে তাণ্ডব চালানোর একদিন আগে তিনি তার মেয়ে হোসনে আরাকে জন্ম দেন।
ঘূর্ণিঝড় কাছাকাছি চলে আসায় একজন মায়ের ভয়

গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি ছিল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র। কক্সবাজারের অতি ঘনবসতিপূর্ণ শিবিরে বসবাসকারী ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য ধ্বংস এবং আরও বঞ্চনার শিকার হওয়ার আশঙ্কা ছিল অনেক। ভূমিধসের ঝুঁকি থাকায় হাসিনা ও অন্যান্য রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আশঙ্কা করছিলেন, এই ঝড়ে আশ্রয়কেন্দ্র ও ক্লিনিকের মতো প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এতে তারা আবার গৃহহীন হয়ে পড়তে পারেন এবং গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রাপ্তির সুযোগগুলো চলে যেতে পারে।
একটি ঘূর্ণিঝড় যখন আসন্ন, ঠিক সেই সময়ে সন্তান জন্মদানের প্রক্রিয়া শুরু করার অর্থ হচ্ছে– প্রয়োজন হলে হাসিনার অন্যত্র সরে যাওয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছিল। বৃষ্টি ও প্রবল বাতাসের অর্থ হল – তিনি সহজে কোনো চিকিৎসা সেবা পাবেন না।
ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের জন্য প্রস্তুতি
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ এগিয়ে আসায় শরণার্থী শিশু ও পরিবারগুলো, যারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ছিল, তাদের জরুরি প্রয়োজনে সাড়া দিতে প্রস্তুতি নেয় ইউনিসেফ। জরুরি স্বাস্থ্য কিট, অপরিহার্য ওষুধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, হাজার হাজার পানির কন্টেইনার, হাইজিন কিট, থেরাপিউটিক দুধ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা হয়। জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থাগুলোসহ অংশীদারদের সাথে কাজ করার পাশাপাশি ইউনিসেফ ৩ হাজারের বেশি শরণার্থী স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দিতে সহায়তা করেছে। তাদের এমনভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে যাতে তারা শরণার্থী শিবিরের বিপদের মুহূর্তে সবার আগে সাড়া দিতে পারে।
জরুরি অবস্থায় শিশুরা হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হওয়া, পানিতে ডুবে যাওয়া এবং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে ইউনিসেফ শিশুদের ওই ধরনের ক্ষতি থেকে দূরে রাখতে প্রতিরোধ বার্তা প্রচার করে।
ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে আছড়ে পড়ার কয়েক ঘণ্টা আগে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে শিশুদের অপরিহার্য জিনিসপত্র বহন করতে এবং নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে দেখা যায়। উদ্বিগ্ন মা ও বাবারা সন্তানদের নিয়ে তাদের অস্থায়ী ঘরে ঘূর্ণিঝড়টি কেটে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা থেকে রক্ষা
হাসিনার জন্য স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলো সবচেয়ে খারাপ অবস্থা থেকে রক্ষা পেয়েছে। তবে প্রবল বাতাস ও ভারী বৃষ্টিতে গাছ উপড়ে পড়েছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে শতাধিক ঘর ও সেবামূলক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শরণার্থী শিবিরে শত শত মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী স্বেচ্ছাসেবকের সাহসিকতা ও নিষ্ঠার বহিঃপ্রকাশ। এর মাধ্যমে তারা তাদের নিজের কমিউনিটিকে সাহায্য করে। ঘূর্ণিঝড়ের পরে শিশুদের তাদের কুঁড়েঘরের ক্ষতিগ্রস্ত ছাদ মেরামতের কাজে বাবা-মাকে সাহায্য করতে দেখা যায়।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, “রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে এবং শিশুদের দ্রুত সহায়তা দিতে ইউনিসেফ মাঠে রয়েছে। আমরা এখনও বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে প্রতিবেদন পাচ্ছি। ক্ষয়ক্ষতির সম্পূর্ণ হিসাব এত তাড়াতাড়ি পাওয়া যাবে না। ইউনিসেফ সম্পূর্ণরূপে সক্রিয় রয়েছে, তবে এখন মনে হচ্ছে যেন শরণার্থী শিবিরগুলো সবচেয়ে খারাপ অবস্থা থেকে রেহাই পেয়েছে।”
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাব থেকে রক্ষা পেলেও শিশু হোসনে আরা এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি, ঠিক অন্য রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মতো, যারা সুরক্ষা, খাদ্য, পানি, আশ্রয় ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য সম্পূর্ণরূপে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে।