ইডেন গার্ডেনস স্টেডিয়ামে স্কুলশিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অনুশীলন
‘শিশু অধিকার ও জেন্ডার সমতা’ এগিয়ে নিতে একটি উদ্ভাবনী পদ্ধতি।

- বাংলা
- English
জীবনের মতন ক্রিকেট থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে; মাঠে খেলোয়াড়েরা যে দলগত বা সম্মিলিত কাজের চর্চা করে (টিমওয়ার্ক), আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান ও কৌশল নির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ যেসব জীবনদক্ষতা শেখে সেসব দক্ষতা বাস্তব জীবনেও কাজে লাগে। জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ শান্তমাথায় ও বিনয়ের সাথে মোকাবিলায় এই শিক্ষা সহায়তা করে।
শিশুদের জন্য ক্রিকেট শুধু একটা খেলা নয়, এটা চরিত্র গঠন ও বিকাশেরও একটি মাধ্যম। এটা শৃঙ্খলা, অধ্যবসায় ও স্পোর্টসম্যানশিপ (খেলোয়াড়ি মনোভাব) শেখায়। এই খেলার মধ্য দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, সমতার মনোভাব এবং একটি স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি হয়, যা ভবিষ্যৎ জীবনে সফলতার ভিত্তি গড়ে তোলে।
ক্রিকেট জগতে অনেক দারুণ মুহূর্ত আছে যা আমরা প্রায়ই মনে করে থাকি। এমনই একটা ঘটনার সাক্ষ্যী কলকাতার ইডেন গার্ডেনস স্টেডিয়াম। সেখানে বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাচের আগে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ও ইউনিসেফের জাতীয় অ্যাম্বাসেডর সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দলের অংশগ্রহণে একটি প্রীতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।
ক্রিকেট, জীবনের খেলা
আইসিসি ও ইউনিসেফের উদ্যোগ ‘ক্রিকেটফরগুড’ এর আওতায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য একটি ব্যতিক্রমধর্মী অনুশীলন সেশনের আয়োজন করা হয় যেখানে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি থেকে আসা এবং বিভিন্ন স্কুলের ২০ জন মেয়ে ও ছেলে অংশগ্রহন করে। তাদের মধ্যে দুজন ছিল শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী শিশু।
এই অনুশীলনের সময় সাকিব আল হাসান, লিটন দাশ, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুস্তাফিজুর রহমানসহ বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা স্কুলশিক্ষার্থীদের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলেন। এই শিক্ষার্থীরা ছিলেন ওই সকল তারকা ক্রিকেটারদের দারুণ ভক্ত। বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা শিশুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেন এবং তাদেরকে নেতৃত্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, যোগাযোগের মতো জরুরি দক্ষতা এবং জেন্ডার সমতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেন। তারা বোলিং, ব্যাটিং ও ফিল্ডিং বিষয়ে নানা মূল্যবান টিপস দেওয়াসহ নিজেদের বিশেষায়িত জ্ঞান নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।
দৃঢ়তা, সহনশীলতা ও সুষ্ঠুভাবে খেলার চেতনা
এই অনুশীলন সেশনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের মাধ্যমে মেয়ে ও ছেলেদের মধ্যে সমতা স্থাপন করার ও তাদের সকলের জন্য চ্যাম্পিয়ন (#বি আ চ্যাম্পিয়ন) হওয়ার সমান সুযোগ নিশ্চিত করার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া। পাশাপাশি, তাদেরকে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে, দলে মিলেমিশে কাজ করতে এবং একটি সমতার বিশ্ব গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করা। #বি আ চ্যাম্পিয়ন ক্যাম্পেইন এর উদ্দেশ্য হল -শিশুবেলা থেকেই জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শ্রেণি-স্থান নির্বিশেষে মেয়ে ও ছেলেদের জন্য খেলাধুলাসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে সমান অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির বার্তা সকলের মাঝে পৌঁছে দেয়া।
অনুশীলনে অংশ নেওয়া স্নেহা মন্ডল বলে, ‘ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে আমার ভালো লেগেছে। এসব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলার সময় আমার নিজেকে তাদের মতোই একজন খেলোয়াড় মনে হয়েছিল।’
শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী শিশু শুভম রাজওয়ার জানায়, ক্রিকেটারদের কথা বুঝতে একজন দোভাষীর সাহায্য নেয় সে। ম্যাচ চলাকালে কীভাবে একটি দলের হয়ে খেলতে হবে, সে বিষয়ে বুঝতে এই অনুশীলন খুব উপকারে লেগেছে। শুভম আরও বলে, ‘দলের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ করার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কৌশলটা আমি আজকে শিখেছি।’
এই ছক্কা, এই আউট - ক্রিকেটের প্রতি মুহূর্তের এই উত্তেজনা ও জয়-পরাজয় ঠিক মানুষের জীবনের উত্থান-পতনের মতোই। উদীয়মান ক্রিকেটার তানিশা বলে, “দলের সদস্যদের মধ্যে ভালো যোগাযোগ সকল ক্ষেত্রেই বড় ভূমিকা রাখে। একটি দল হিসেবে আমাদের একসঙ্গে এগোতে হবে এবং খেলায় জিততে হবে।”
আগামীর নেতৃত্ব তৈরিতে ক্রিকেট
আজকের শিশু ও তরুণদের প্রতিভা বিকাশে বিনিয়োগের মাধ্যমে সকলের জন্য সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিত করা সম্ভব। সুযোগ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে তারা যে কোনো চ্যালেঞ্জ সামলে নেওয়ার সাহস সঞ্চার ও সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে। শিশু অধিকার নিশ্চিত করার এই বার্তা ছড়িয়ে দেবার জন্য ক্রিকেট একটি অনন্য প্ল্যাটফর্ম। ক্রিকেট খেলায় বাংলাদেশের নারীদলের অসামান্য সাফল্য প্রমাণ করে যে প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পেলে মেয়েরাও যেকোন খেলায়, যেকোন ক্ষেত্রে সফল হতে পারে।
মেয়েদেরকে ছেলেদের সঙ্গে সমানতালে খেলার সুযোগ করার মধ্য দিয়ে ‘ক্রিকেট ফর গুড’ উদ্যোগটি জেন্ডার বিষয়ে সমাজে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। তরুণ জনগোষ্ঠীকে এই উদ্ভাবনী ক্যাম্পেইন এর সাথে সম্পৃক্ত করার মধ্য দিয়ে শক্তিশালী এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে যে - জেন্ডার নয়, বরং মেধা ও সাধনাই ঠিক করে দেবে প্রতিটি মানুষের ভবিষ্যৎ, খুলে দেবে সুযোগের দ্বার, সাফল্যের দ্বার। আর এভাবেই গড়ে উঠবে সমতাপূর্ণ এক সমাজ ।
বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট এর উত্তেজনাকে ব্যাবহার করে শিশুদের জন্য, বিশেষ করে সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় থাকা শিশুদের জন্য একটি সমতাপূর্ণ ও আলোকিত বিশ্ব গড়ে তোলার বার্তাকে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার প্রয়াসকে আরও ত্বরান্বিত করছে আইসিসিরি সঙ্গে ইউনিসেফের এই অংশীদারিত্ব।