কিশোর-কিশোরীদের শিক্ষা
মাঝপথে হারিয়ে যাওয়া নয়, সফলতার জন্য তৈরি হওয়া
- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
চ্যালেঞ্জ
প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে উত্তোরণের হার যদিও বাংলাদেশে অনেক ভাল তুলনামূলকভাবে স্বল্প সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীই শিক্ষা ব্যবস্থায় তাদের উপস্থিতি বজায় রাখতে পারে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে নাজুক পরিস্থিতিতে থাকা কিশোর-কিশোরীদের তিন ভাগে ভাগ করা যায়:
১. বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া ও যারা কখনও বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি
২. বিদ্যালয়ে গেছে কিন্তু ঝরে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে
৩. লেখাপড়া শেষ করলেও চাকরির জন্য দক্ষতা তৈরি না হওয়া
বাংলাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীর আনুপাতিক হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হওয়া ৯৫ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে মাত্র ৪৬ ভাগ মাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়া করে
মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হওয়ার প্রকৃত হার ৫০ শতাংশ, যেখানে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। এই বয়সী ছেলে-মেয়েদের ৭৫ শতাংশই মাধ্যমিক শেষ করার আগে ঝরে পড়ে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে মেয়েদের ঝরে পড়ার হার ছেলেদের দ্বিগুণ।
অষ্টম শ্রেণীতে ঝরে পড়ার হার সর্বোচ্চ। এই পর্যায়ে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ ছেলে-মেয়ে স্কুল ত্যাগ করে
মাধ্যমিক শিক্ষায় অনেক পশ্চাৎপদতা রয়েছে। লিঙ্গ বৈষম্য, আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও দূর্গম এলাকায় বসবাসের কারণে এ সমস্যা আরও প্রকট হয়। মাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়া বন্ধ করতে হলে মান সম্মত পাঠ্যক্রম, শ্রেণীকক্ষের শিক্ষা উন্নয়ন ও কর্মমূখী শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
কিশোর-কিশোরীদের লেখাপড়া ছাড়ার আরও একটি কারণ স্কুলের দূরত্ব। এর কারণে দূর্গম এলাকায় বসবাসকারী অনেক ছাত্র-ছাত্রী বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেয়
শিক্ষা ব্যয়, শিশুবান্ধব পরিবেশের ঘাটতি এবং যৌন হয়রানি থেকে সুরক্ষার বিষয়টিও গুরুত্বপর্ণ। বাল্যবিয়ের কারণেও মেয়েরা ঝরে পড়ে।
আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার বিকল্প তেমন কোনো ব্যবস্থা এদেশে নেই। জীবিকা ও দক্ষতা তৈরির শিক্ষার সুযোগও সীমিত এখানে।
সমাধান
স্কুলের বাইরে থাকা ছেলে-মেয়েদের জন্য ইউনিসেফ জাতীয় টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় শিক্ষার বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়, যাতে তারা চাকরির উপযোগী হয়ে উঠতে পারে।
আইএলও ও ব্র্যাকের সঙ্গে যৌথভাবে স্কুলের বাইরে থাকা কিশোর-কিশোরীদের জন্য একটি অনানুষ্ঠানিক এপ্রেন্টিসশিপ প্রোগ্রাম তৈরি করেছে ইউনিসেফ।
বিদ্যালয়ের বাইরে থাকা কিশোর-কিশোরীদের কর্মমূখী দক্ষতা বৃদ্ধিতে ইউনিসেফ দ্বিতীয় শিক্ষা সুযোগের আওতায় একটি যুগোপযোগী শিক্ষা ও দক্ষতা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে
ইউনিসেফ টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেইনিং-টিভিইটির ব্যবস্থা করছে, যাতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে ছেলে-মেয়েদের উৎসাহিত করা হয়।
এডুকেশন ওয়াচ সার্ভেতে অংশগ্রহণকারী কিশোর-কিশোরীদের দুই-তৃতীয়াংশ এপ্রেন্টিসশিপের পাশাপাশি টিভিইটিতে অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি এবং ঝরে পড়াদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষা কর্মসূচিতে একটি বিকল্প শিক্ষা পদ্ধতি আসবে।
স্কুলগামী কিশোর-কিশোরীদের জন্য: বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলে-মেয়েদের ধরে রাখতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নয়নে স্কুল ধরে ধরে পরিকল্পনা করে ইউনিসেফ। এতে ঝরে পড়া কমার পাশাপাশি মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করার হার বাড়ে।
মাধ্যমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি এবং তা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে সব প্রতিবন্ধকতা আছে সেগুলো দূর করতে কাজ করে ইউনিসেফ।
কিশোর-কিশোরীদের ওপর সমাজের একটি বড় প্রভাব রয়েছে। তাই ধর্মীয় নেতাদের মতো সামাজিক ব্যক্তিত্বদের শিশুদের শিক্ষার বিষয়টি দেখভাল করা উচিত
মাদক সেবন থেকে যৌন হয়রানি এবং বাল্যবিয়ের মতো সংকটের মুখে পড়া বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলে-মেয়েদের নিজের ওপর আস্থা তৈরি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম করে তুলতে স্কুল মন্ত্রিসভার মতো প্ল্যাটফর্মকে জোরদার করে ইউনিসেফ।
মূলধারার জীবনাভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষার ওপর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও বিশেষায়িত জ্ঞানের আলোকে ইউনিসেফ মাধ্যমিক শিক্ষাকে প্রাসঙ্গিক করতে সহায়তা করে। একুশ শতকের জন্য ছেলে-মেয়েদের উপযুক্ত করে তুলতে পাঠ্যসূচিতে দক্ষতার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা, শিক্ষার পদ্ধতি শেখানো ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় এতে।
এই বিষয়ে আরও জানতে
ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর এডলেসেন্ট হেল্থ ২০১৭-২০৩০; পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়